বিজ্ঞান পত্রিকা

কলম্বিয়ান শিশুর দেহে নিজের জমজ বোনের ভ্রূন পাওয়ার বিরল ঘটনা

ইতজামারা ভেগা নামের এক কলম্বিয়ান শিশু ফেব্রুয়ারিতে জন্মগ্রহণ করে ইতোমধ্যেই পুরো পৃথিবীর জন্যে এক বিস্ময়কর ঘটনার সৃষ্টি করেছে। মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় মাত্র ৩৫ সপ্তাহ বয়সে ইতজামারার মধ্যে এক বিরল ঘটনা দেখা যায় যা এখন পর্যন্ত দুইশত বারেরও কম দেখা গিয়েছে।

মায়ের উদরে থাকা অবস্থায় ডাক্তারেরা আল্ট্রাসাউন্ড পদ্ধতিতে ইতজামারার ভ্রূণের মধ্যে তার নিজের জমজ বোন আবিষ্কার করলেন। The New York Times এর রিপোর্ট অনুযায়ী একটি পৃথক নাভিরজ্জুর মাধ্যমে ছোট ভ্রূণটি পরভোজীর মত তার জ্যেষ্ঠ সহোদর ইতজামারার অন্ত্র থেকে রক্ত নিচ্ছিল।   

শুনতে অসম্ভব মনে হলেও ঘটনাটি সত্য। ১৮০৮ সালে সর্বপ্রথম জন্মগত বৈপরীত্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় যেটি ভ্রূণের ভেতরে আরেকটি ভ্রূণ নামে পরিচিত এবং এই ঘটনাটি সচরাচর ঘটে না। প্রায় প্রতি ৫০০,০০০ জন্মদানের মধ্যে একটি ঘটনা এমন ঘটে। তাই যখনই এমন কোনো ঘটনা ঘটে তা পুরো পৃথিবীর মনোযোগ কেড়ে নেয়।   

পূর্বে এমন ঘটনার পাওয়া গিয়েছে যেখানে বিভিন্ন অঙ্গ, কিডনী, শিরদাঁড়া, চুল, নখ এমনকি বিকশিত যৌনাঙ্গের আংশিকভাবে বিকশিত ভ্রূণের সন্ধান মিলেছে।  

সাধারণত সদ্যজাত শিশুর পেটের স্ফীত অংশ দেখে বেশিরভাগ সময়ই এই অবস্থাটি জীবনের শুরুতেই শণাক্ত করা যায়, কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি বছরের পর বছর ধরা নাও পড়তে পারে। এমন একটি ঘটনা দেখা গিয়েছে যে একজন মধ্যবয়স্ক মহিলা নিজের অজান্তেই ৪৫ বছর বয়স পর্যন্ত তার গর্ভের ভিতরে চোখ, দাঁত এবং কালো চুল ধারণ করেছিলেন।  

কিন্তু যতটা ভয়ানক শুনতে মনে হয় আসলে এইসব পরভোজী ভ্রূণ ততটা বিপজ্জনক নয় এবং এগুলো জীবিতও নয়। যদিও এমন বিরল ঘটনাগুলোর আসল কারণ এখনো সঠিকভাবে বুঝা যায়নি, কিন্তু এরূপ হওয়ার পেছনের ধাপগুলো অনেকটা এরকম-

অভিন্ন জমজ গর্ভধারণের ক্ষেত্রে একটি নিষিক্ত ডিম্বক যখন দুইটি ভাগে বিভক্ত হয়, তখন এই বিভক্তিটা সুষমভাবে নাও হতে পারে।প্রথমে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা যায় না এবং এই দুইটি চ্যাপ্টা বিভক্ত কোষই স্বাভাবিকভাবে বড় হতে থাকে। কিন্তু সমস্যাটা শুরু হয় মোটামুটি চার সপ্তাহ পর থেকে যখন শরীরের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরির জন্যে কোষগুলোতে ভাঁজের সৃষ্টি হতে থাকে।  

এমতাবস্থায় যদি এই জমজ ভ্রূণদ্বয় আংশিকভাবে বিভাজিত হয় একটি কোষ পার্শ্ববর্তী আংশিকভাবে বিভাজিত ছোট কোষটিকে নিজের ভেতরে নিয়ে নিতে পারে।  

যেহেতু অপেক্ষাকৃত বড় ভ্রূণটির মধ্যে ছোট ভ্রূণটি বিলীন হয়ে যায়, ছোট ভ্রূণটি মায়ের নাড়ির সংযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং অপেক্ষাকৃত বড় ভ্রূণটির ভেতরে গিয়ে বেড়ে উঠার জন্যে সেটির রক্ত শোষণ করতে শুরু করে।

এমনকি একটির বেশি ভ্রূণও এভাবে একটি বড় ভ্রূনের ভিতরে জমা হয়ে থাকতে পারে। একটি অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছিল যেখানে একটি ভ্রূণের ভেতরে ১১টি জমজ পরভোজী ভ্রূণের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছিল।  

অবশ্য ইতজামারার ঘটনাটিতে একটি ভ্রূণই পাওয়া গিয়েছিল যেটির দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় পাঁচ সেন্টিমিটার (২ ইঞ্চি) লম্বা। এই পরভোজী ভ্রূণের মধ্যে মস্তিষ্ক ও হ্রদপিণ্ড ছাড়া মাথা এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ছিল। গর্ভধারণের একদম প্রাথমিক অবস্থায় বিরল ঘটনাটি শণাক্ত করা আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের এবং গর্ভধারণের ক্ষেত্রে ঝুকিপূর্ণ অবস্থা শণাক্তকরণের সফলতাই প্রকাশ করে। ইতজামারাকে ডেলিভারির নির্ধারিত সময়ের আগেই শল্য চিকিৎসার মাধ্যমে মায়ের গর্ভ থেকে বের করা হয়েছিল কারণ ডাক্তারদের অনুমান ছিল যে পরভোজী ভ্রূণটির বৃদ্ধি ইতজামারার উদরীয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতি করে ফেলতে পারে। অবশেষে ইতজামারার ভিতরের ভ্রূণটি তার ভূমিষ্ঠ হওয়ার একদিনের মধ্যে সামান্য কর্তনের মাধ্যমে সফলভাবে অপসারণ করা সম্ভব হয়েছিল এবং এতে তার কোনো ক্ষতি হয়নি।

-আবরার আলী

Exit mobile version