কেমন হবে যদি অমাবশ্যার রাতে সারা রাত নৌকা বেয়ে ভোরের আলোয় দেখেন যে নোঙ্গর তোলা হয় নি? কিংবা গাড়িতে করে শ’দুয়েক কিমি রাস্তা পার হয়ে এসে জানলেন গন্তব্যের সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে চলে এসেছেন? এগুলোর কোনোটাই বস্তবে ঘটার কোনো সম্ভবনা যদিও নেই তবে এর চেয়ে ভয়াবহ একটি বিপর্যয় হয়তো গণিত প্রত্যক্ষ করতে যাচ্ছে। সম্প্রতি পাইয়ের অস্তিত্ব হুমকীর মুখে পড়েছে!
গণিতের ইতিহাসে যে কয়টি রাশি সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত, সবচেয়ে আলোচিত, সবচেয়ে গুরুত্ববহ পাই সেগুলোর মধ্যে একেবারেই উপরের দিকে আছে। গণিতের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে পাই সম্ভবত কাজে লাগে না। অথচ পাইয়ের উৎপত্তি হয়েছিলো খুবই সাদামাটা ভাবে।
একটি বৃত্তের পরিধি এবং ব্যাসের অনুপাতকে পাই (π) বলা হয়। π একটি ধ্রূব সংখ্যা। অর্থাৎ যেকোন একটি বৃত্তের পরিধি এবং একই বৃত্তের ব্যাসের অনুপাতের মান সর্বদাই একই হবে। এর মান ৩.১৪১৫৯২৬….. (পাইয়ের মান ডাউনলোডের জন্য এই লিংকটি দ্রষ্টব্য)। হাজার বছর ধরেই π এর মান সঠিকভাবে নির্ণয়ের প্রচেষ্টা চলে আসছে। এই অনুপাতটি যে একটি ধ্রুব সংখ্যা সেটা খ্রীষ্টের জন্মের প্রায় দুইহাজার বছর আগে থেকেই মানুষের ধারনায় ছিল। সেই সময় π এর মান দশমিকের পর দু্ই ঘর পর্যন্ত সঠিক ভাবে মানুষের জানা ছিলো যদিও সেই সময় দশমিক পদ্ধতি আবিষ্কার হয়নি, সেই সময়ের π এর মানকে আধুনিক দশমিকে প্রকাশ করলে দশমিকের পর দুই ঘর পর্যন্ত যথার্থতা পাওয়া যায়। π এর লিপিবদ্ধ মানের ব্যবহার প্রথম পাওয়া যায় প্রাচীন মিশর ও ব্যবিলনীয় সভ্যতায়। ব্যবিলন হতে প্রাপ্ত খ্রীষ্টপূর্ব ১৮০০ -১৯০০ সালের একটি মৃৎখন্ডে π এর মান দেখানো হয়েছে ২৫/৮ বা ৩.১২৫০ যেটা π এর প্রকৃত মানের চেয়ে মাত্র ১% ছোট। কাগজে-কলমে π এর মান সঠিকভাবে বের করার একটি পদ্ধতি সবার প্রথম উদ্ভাবণ করেন আর্কিমিডিস। তিনি π এর মান নির্ণয় করেন 3.1410 যা π এর যথার্থ মান ৩.১৪১৫…. এর বেশ কাছাকাছি। এরপর ইতিহাসের পরিক্রমায় π এর মান নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সূত্র, সমীকরণ, ধারা প্রভৃতি প্রচলিত হয় এবং π এর মান সূক্ষাতিসুক্ষ ভাবে নির্ণয় হতে থাকে। অষ্টাদশ শতাব্দীতে জন হেইনরিখ ল্যম্বার্ড কর্তৃক আবিষ্কৃত হয় যে π একটি অমূলদ সংখ্যা। অর্থাৎ π কে কোনোভাবেই দুটি পুর্ণসংখ্যার অনুপাত রূপে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এর আগে পর্যন্ত এটিকে শুধু দুটি পূর্ণ সংখ্যার অনুপাতরূপেই দেখা গেছে। যেমন 22/7, 333/106, 355/113, 52163/16604, এবং 103993/33102 ইত্যাদি। এর মধ্যে সবচেয়ে বহূল ব্যবহৃত রূপটি হচ্ছে 22/7 যেটি π এর খুবই স্থুল একটি আসন্ন মান। যা-হোক, π যেহেতু অমূলদ সংখ্যা সেহেতু বোঝা গেলো π কে এভাবে অনুপাতের মাধ্যমে প্রকাশ করা হলে কিছু না কিছু ভুল থেকে যাবে এবং দশমিক পদ্ধতিতেও π এর মান সঠিকভাবে প্রকাশ করা যাবে না কেননা তাতে দশমিকের পর π এর মান অসীম ঘর পর্যন্ত বিস্তৃত করতে হবে এবং এই অসীম সংখ্যক সংখ্যার অঙ্কগুলো কখনো বিশেষ কোনো প্যাটার্ন অনুযায়ী হবে না বরং সম্পূর্ণ বিক্ষিপ্ত হবে। এটা জানার পর থেকে শুরু হলো π এর মান সবচেয়ে বেশী সংখ্যক ঘর পর্যন্ত বের করার প্রতিযোগীতা।এসব কাজে ব্যবহৃত হতে লাগল বিভিন্ন ধরনের সমীকরণ, গণণার যন্ত্র। বর্তমানে সুপার কম্পিউটার ব্যবহার করে πএর মান দশমিকের পর কয়েক ট্রিলিয়ন ঘর পর্যন্ত বের করে ফেলা হয়েছে এবং এই প্রক্রিয়া এখনো চলছে যদিও πএর মান সঠিক ভাবে দশমিকের পর চল্লিশঘর পর্যন্ত বের করলেই এই মহাবিশ্বের যেকোনো সূক্ষাতিসূক্ষ বিষয়ে গণনা করে ফেলা যায়।
π এর মান যদিও বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসের অনুপাত থেকে পাওয়া যায়, তথাপি গণিতের বিভিন্ন শাখায় π বিভিন্ন সময়ে হানা দিয়েছে। বর্তমানে গণিতের প্রায় কোনো শাখাই নেই যেখানে π এর কোনো অবদান নেই। π গণিতের অনেক হিসেব-নিকেষ সহজ করে দিয়েছে। π না থাকলে আমাদের অনেক কিছুই হয়তো ঘুরিয়ে পেচিয়ে করতে হত কিংবা গণিতই হয়তো অনেক অনেক পিছিয়ে থাকত। গণিতের সাথে সাথে পদার্থ বিজ্ঞানের অনেক গণনার অনুষঙ্গ হলো π। এবার দেখা যাক π কিভাবে গণিতের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এসেছে।
বৃত্ত সংক্রান্ত গণনায় π ব্যাবহৃত হয় এটা বলাই বাহুল্য, কারণ π এর উৎপত্তিই হয়েছে বৃত্ত সংক্রান্ত গণণা থেকে।
বৃত্তের পরিধি = 2π r, ক্ষেত্রফল = π r^2 (r = ব্যাসার্ধ)
সকল প্রকার গোলীয় পৃষ্ঠযুক্ত বস্তুর মাত্রা সংক্রান্ত পরিমাপে π ব্যাবহৃত হয়। যেমন সিলিন্ডারের আয়তন: π(r^2)h (h = সিলিন্ডারের উচ্চতা)
বেশ কিছু অসীম ধারার সমষ্টি হচ্ছে π, যদিও ধারাটির রাশিগুলোর সাথে বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসের আপত কোনো সম্পর্ক নাই। যেমন:
বৃত্তীয় ফাংশনে এবং পর্যাবৃত্ত গতিসম্পন্ন বস্তুর গতি সংক্রান্ত আলোচনায় π ব্যাবহৃত হয়।
ক্যালকুলাসে ইন্টিগ্রেশন এবং ডিফারেন্সিয়েশন সম্পর্কিত সমস্যা সমাধানে π ব্যাবহৃত হয়।
কম্পিউটারের অ্যালগরিদমে মন্টি কার্লো পদ্ধতিতে π ব্যাবহার করা হয়।
জটিল সংখ্যা সংক্রান্ত গণনা এবং বিশ্লেষণে π ব্যবহৃত হয়। এই বিষয়ে অয়লারের সমীকরণটি গনিতের জনপ্রিয়তম সূত্রগুলোর অন্যতম। সমীকরণটি হচ্ছে,
সম্ভাব্যতা এবং পরিসংখ্যানে π এর বহুল ব্যবহার আছে।
পদার্থ বিজ্ঞানে অভিকর্ষজ ত্বরণ নির্নয়ে, তড়িৎ ও চৌম্বক বিষয়ক আলোচনায়, শব্দ সংক্রান্ত বিষয়ে এবং আরো নানা ক্ষেত্রে π অবিচ্ছেদ্য ভাবে জড়িয়ে আছে।
কিন্তু এতসব ব্যাবহার সত্ত্বেও সম্প্রতি π এর ব্যাবহার কিছু গণিতবিদের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এই প্রশ্নের উৎপত্তি হচ্ছে বৃত্তের কেন্দ্রে উৎপন্ন কোণ থেকে। π এর মান অনুযায়ী একটি বৃত্তের কেন্দ্রে ২π রেডিয়ান কোণ উৎপন্ন হয়। তাঁরা বলছেন π এর সহগ হিসেবে ২ একটা বাহুল্য এবং এই বাহুল্য থাকা যুক্তি সংগত নয় এবং বিভিন্ন সমীকরণে এই সহগটির জন্য জটিল অবস্থা তৈরি হয় এবং আমরা যদি ধ্রুবক হিসেবে বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসের অনুপাত না নিয়ে পরিধি ও ব্যাসার্ধের অনুপাত নিই তাহলে খুব সহজেই এই সমস্যার সমাধান হয়। এই নতুন ধ্রুবকটির নাম দেওয়া হয়েছে টাউ (τ )। ধ্রুবকটির মান = ২π = ৬.২৮৩১৮৫৩……
π নিয়ে সন্দেহ এবং τ ম্যানিফেস্টো:
২০০১ সালে বব প্যালাইস নামক একজন গণিতবিদ একটি মতামতধর্মী জার্নাল আর্টিকেল লিখেন, যার শিরোনাম pi is wrong! (The Mathematical Intelligencer, Springer-Verlag New York, 23, 7-8, এখানে আর্টিকেলটি পাবেন )। π এর মান ভুল এটা তিনি বোঝাতে চাননি। বরং তিনি বলতে চেয়েছেন π ব্যাবহার করাটা ভুল। তিনি বলেন, বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসের অনুপাত না নিয়ে যদি পরিধি ও ব্যাসার্ধের অনুপাত নেওয়া হয় তাহলে গানিতিক সমীকরণ এবং গণনাসমূহ আরো সহজ হয়ে যাবে। প্রথম যুক্তি হিসেবে তিনি বলেন যে বৃত্তীয় একক অনুযায়ী একটি বৃত্তের কেন্দ্রে উৎপন্ন কোণের পরিমান ২π রেডিয়ান কিন্তু যদি আমরা যদি τ দিয়ে 2π কে প্রতিস্থাপিত করি তাহলে এর মান হবে τ রেডিয়ান। অতিরিক্ত ২ উপেক্ষা করতে পারায় গণিতের অনেক সমীকরণ আরো সরলাকৃতির হয়ে যাবে বলে তিনি মনে করেন। এই নতুন অনুপাতটির জন্য একটি প্রতীক প্রস্তাব করেন যেটি দেখতে π এর মতোই তবে π এর মাঝখানে আরেকটি পা দিয়ে লেখা হয় এভাবে:
তিনি একে নাম দেন one turn বা turn, যেহেতু একটি বৃত্তে একবার ঘুরে আসলে কেন্দ্রে এই পরিমান কোণ উৎপন্ন হয়।
বব প্যালাইসের দেওয়া প্রতীকটি অপ্রচলিত এবং কিছুটা অদ্ভুত হওয়ায় পরবর্তীতে ২০১০ মাইকেল হার্টল এর নাম τ প্রস্তাব করেন এবং একদল গণিতবিদ τ কর্তৃক অকৃষ্ট হয়ে এর ব্যাপক প্রচারণা শুরু করেন যা τ ম্যানিফেস্টো নামে প্রচার লাভ করে এবং τ এর মাহাত্ম প্রচারের লক্ষ্যে এটা নিয়ে একটা ওয়েবসাইট চালু করা হয়।
এই ওয়েব সাইটে τ এর বিভিন্ন প্রয়োগ ব্যাখ্যা করা হয় এবং π এর বদলে τ এর প্রয়োগের যুক্তি-যুক্ততা তুলে ধরা হয়। সেখানে দেখানো হয় যে প্রচুর গাণিতিক সমীকরণ আছে যেগুলোতে ২π ব্যাবহার করা হয়। সেসব ক্ষেত্রে ২π এর বদলে τ ব্যাবহার করা অনেক যুক্তিযুক্ত এবং এতে সমীকরণের সরলীকৃত রূপ পাওয়া যায়। উদাহরণ হিসেবে পোলার স্থানাঙ্ক ব্যাবস্থার কথা বলা যায়। আমরা যদি পোলার স্থানাঙ্ক ব্যবস্থায় সম্পূর্ণ স্থানাঙ্কটির মধ্যে ইন্টিগ্রাল করি তাহলে সেটা দেখানো যায় এভাবে।
যে সমীকরণের উর্দ্ধসীমায় দুটি πয়ের বদলে একটি τ ব্যাবহার করা যায়।
গাউসিয়ান ডিস্ট্রিবিউশনেও দুটি π আসে। যেমন:
ফুরিয়ার ট্রান্সফর্মে যেমন আসে,
এর বাইরেও আছে, কশির ইনটিগ্রাল সূত্র:
এককের n-তম রুটের সূত্র:
রাইম্যান জিটা ফাংশন:
এগুলোর বাইরেও আছে আরো বিপুল পরিমান সূত্র।
বৃত্তীয় কোণের পরিমাপ:
বৃত্তের কেন্দ্রে মোট উৎপন্ন কোণ ৩৬০ ০ বা ২π রেডিয়ান। এই 2πকে যদি τ দিয়ে প্রতিস্থাপন করে দেওয়া যায় তাহলে নিশ্চয়ই সেটা আরো অসাধারণ হয়! ত্রিকোনমিতিতে ২π টার্মটি একটি বহুল ব্যাবহৃত টার্ম্। ত্রিকোনমিতিক অনুপাত sin এবং cos এর একেকটি পর্যায় 2π পরিমাণ। অর্থাৎ ২π পরপর এই মানগুলো পুনরাবৃত্ত হয়। পদার্থ বিজ্ঞানেও এই পর্যায়বৃত্ততার হিসেব-নিকেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু্ তাই নয় বৃত্তীয় কোণের পরিমাপে বর্তমানে π এ র ভগ্নাংশ ব্যাবহার করা হয় তা মোটেও সুবিধাজনক নয়। যেমন π/4, π/3, 3π/2 ইত্যাদি। এগুলোতে যদি πকে τ দিয়ে প্রতিস্থাপিত করে দেওয়া হয় তাহলে আমরা বৃত্তের অংশ হিসেবে কোণটি পেয়ে যাই। যেমন: τ/4 দেখলেই আমরা বুঝতে পারব এখানে একটি বৃত্তের চারভাগের একভাগ বোঝাচ্ছে এবং এই ক্ষেত্রে কোনো কিছু মুখস্ত রাখারও দরকার হচ্ছে না।
অয়লারের সূত্র:
আয়লারের সূত্র গণিতের সবচেয়ে সুন্দর সমীকরণগুলোর একটি। এটাকে লেখা হয়,
এই সমীকরণে থিটাকে π দিয়ে প্রতিস্থাপন করে আমরা পাই,
এই মাইনাস রূপটি দেখতে বিচ্ছিরি হওয়ায় -১ কে বামপাশে এনে লেখা হয়
কিন্তু এখানে π না ব্যাবহার করে যদি τ ব্যাবহার করা হয় তাহলে পাওয়া যায়
যেটা আসলে এই সমীকরণের বর্তমান রূপ অপেক্ষা আরো সুন্দর এবং এটাকে আমরা খুব সুন্দরভাবে বর্ণনা করতে পারি: “বৃত্তীয় ধ্রুবকের জটিল exponential এর মান একক পরিমান।“ যা অয়লারের সূত্রকে নতুনভাবে ব্যাখ্যা করতেও শেখায়।
বৃত্তীয় ফাংশন
বৃত্তীয় ফাংশনের একেকটা পর্যায়ের দৈর্ঘ্য ২π। এই ক্ষেত্রে π এর বদলে τ ব্যাবহার করাটাই অধিক সুবিধাজনক। এবং কোণের মানের দিকে তাকিয়েই একটা পর্যাবৃত্তগতি সম্পন্ন কণার দশা বলে দেওয়া যায়। আমরা পর্যায়কাল T কে গ্রাফে উপস্থাপনের সময় চমৎকার ভাবে τ দিয়ে প্রতিস্থাপিত করে লিখতে পারি, T ≡ τ।
বৃত্তের ক্ষেত্রফল:
বৃত্তের ক্ষেত্রফলের সমীকরণ,
নিঃসন্দেহে πয়ের জন্য একটা স্বস্তিদায়ক প্রয়োগ। কিন্তু τ বাদীরা একেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন।
তাঁরা বলছেন, ইন্টিগ্রাল ইকুয়েশনের মাধ্যমে আমরা যখন গাণিতিকভাবে পদার্থবিদ্যার বিভিন্ন রাশি পরিমাপ করি সেগুলো একটি প্যাটার্ণ ধরে আসে। সেই প্যাটার্ণটি হল, 1/2 ax^2, যেখানে a একটি ধ্রুবক এবং x হচ্ছে সূত্র সম্পর্কিত চলক।
এই কারনে, পড়ন্ত বস্তুর সূত্র
স্প্রিংএ শঞ্চিত শক্তির সূত্র:
গতিশীল বস্তুর গতিশক্তি,
এই ধারায় বৃত্তের ক্ষেত্রফল আসার কথা,
এই ক্যালকুলেশন পাওয়া যায় নিচের চিত্রটি থেকে।
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে π এর বদলে τ ধরে নিলে বৃত্তের ক্ষেত্রফল একটা প্যাটার্ণ অনুযায়ী পাওয়া যায়।
এসবের বাইরেও আরো অনেক কিছু আছে যেসব নিয়ে τ পন্থীরা বেশ উত্তেজিত। τ এর প্রচলন চালু করার জন্য τ বাদীরা সারা পৃথিবীতে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
অপর দিকে π পন্থীরাও বসে নেই। τ নিয়ে উৎসাহ উদ্দীপনায় বিরক্ত হয়ে তাঁরা খুলে বসেছেন ‘tau manifesto’ ওয়েবসাইটের আদলে (http://www.thepimanifesto.com/)। সেই ওয়েব সাইটে π এর মাহাত্ম এবং τ এর অসারতা নিয়ে প্রচুর যুক্তি তুলে ধরা হচ্ছে। যেমন: প্রথমত তাঁরা বললেন, τ ম্যানিফেস্টো পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছে এবং শুধুমাত্র যেসব সূত্রে π দুইবার আসে সেগুলোকেই τ দিয়ে প্রতিস্থাপন করে প্রচার করেছে কিন্তু বিপুল সংখ্যক সমীকরণ আছে যেগুলোতে π একবার করে ব্যাবহার করা হয়। এগুলোতে যদি πকে τ দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে হয় তাহলে τকে 2 দিয়ে ভাগ করে দেখাতে হবে, ফলশ্রুতিতে τ এর যেই প্রধান সুবিধার কথা বলা হয়েছে সেটার মূলত কোনো ভিত্তিই থাকে না।
দ্বিতীয়ত, অয়লারের সূত্রে τ ব্যাবহারের যেসব সুবিধা τ বাদীরা দাবী করছেন, তা কেবলমাত্র দ্বিমাত্রিক জ্যামিতির দৃষ্টিকোণ থেকে সত্য। কিন্তু বৃহৎ পরিসরে এই ধরনের কোনো সুবিধা পাওয়া যায় না।
তৃতীয়ত, τ এমন অনেক সুবিধার ব্যাপারে দাবী করেছে, যেগুলো আসলে খুবই তুচ্ছ। যেমন:
এই ছবিটির মাধ্যমে τ বাদীরা দাবী করেছেন, ভগ্নাংশ দেখেই বোঝা যায়, একটা কোন বৃত্তের কেন্দ্রের কতঅংশ। কিন্তু πবাদীরা বলছেন πয়ের মাধ্যমে প্রকাশকৃত কোন থেকে সরাসরি ক্ষেত্রফলের মান পাওয়া যায়। যেমন: একক ব্যাসার্ধের একটা বৃত্তের এক অষ্টমাংশের ক্ষেত্রফল হচ্ছে π/৮, যা সরাসরি কোণের মান থেকে পাওয়া যাচ্ছে। তাঁরা বলছেন, τ ব্যাবহার করে যেমন চটকদার অথচ তুচ্ছ চিত্র তৈরি করা হয়েছে π ব্যাবহার করেও এইরকম সম্ভব। যেমন নিচের ছবিটি।
অর্থাৎ একক ব্যাসার্ধের একটা বৃত্তের ক্ষেত্রফল হল π! এবং একটি বৃত্তের ক্ষেত্রফলের সমান করে একটি বগক্ষেত্র আঁকা যাবে π ব্যাবহার করে খুব সহজেই। √π ধার বিশিষ্ট একটি বর্গের ক্ষেত্রফল হল π।
τ বাদীরা যেমন বিভিন্ন সমীকরণ τ এর মাধ্যমে সরলীকরণ করে দেখিয়েছেন, π বাদীরাও তেমনি τ ব্যাবহার করে অনেক সমীকরণের জটিলাকৃতি দেখিয়েছেন। ফলে অতি সহসাই পাই এবং টাউয়ের দ্বন্দ্ব অবসানের সম্ভবনা দেখা যাচ্ছে না! তবে টাউ যদি জিতেও যায় তারপরেও এর প্রচলন কবে নাগাদ হতে পারে সেটা নিয়েও প্রশ্ন তোলা যায় কারণ সারা পৃথিবীর সকল পাইকে টাউ দিয়ে প্রতিস্থাপিত করা যেনতেন কাজ নয়।
পাই না টাউ এটা নিয়ে অনলাইন মাধ্যম এবং ব্লগোস্ফিয়ার অনেকটা সরগরম। এই প্রশ্নে গণিতবিদগণ এখন দ্বিধা বিভক্ত। এই দ্বন্দ্ব প্রবল হয় ২০১০ এর ২৮ জুন থেকে যেদিন প্রথবারের মত টাউ পন্থীরা π দিবসের মতো করে τ দিবস ঘোষনা করে ব্যাপক অযোজনের মধ্য দিয়ে এটাকে উদযাপন করেছেন। π মান ৩.১৪১৬…. অনুযায়ী প্রতিবছর মার্চের ১৪ তারিখে π দিবস পালন করা হয়। এই ধারায় τ এর মান ৬.২৮৩২…. অনুযায়ী জুন মাসের ২৮ তারিখকে τ দিবস ঘোষনা করা হয়েছে এবং বড়বড় সংবাদ মাধ্যমগুলো এটা নিয়ে খবর পরিবেশন করেছে। আর পাই দিবসকে টাউবাদীরা পালন করে থাকে হাফ টাউ দিবস হিসেবে!
τ য়ের মাহাত্ম এবং এর ব্যাবহারের সুবিধা নিয়ে ইউটিউবে পাওয়া যাচ্ছে বেশ কিছু ভিডিও (pi vs tau লিখে সার্চ দিলেই পাবেন)। অনলাইনে চালানো হচ্ছে পাই এবং টাউ নিয়ে বিভিন্ন ডিবেট গ্রুপ। শেষ পর্যন্ত পাই এর বদলে টাউ প্রতিষ্ঠিত হয় কিনা সেটা কেবল সময়ই বলতে পারবে।
-ইমতিয়াজ আহমেদ
সম্পাদক, বিজ্ঞান পত্রিকা
[লেখকের ফেসবুক প্রোফাইল]
বিজ্ঞান পত্রিকা প্রকাশিত ভিডিওগুলো দেখতে পাবেন ইউটিউবে। লিংক:
১. টেলিভিশনঃ তখন ও এখন
২. স্পেস এক্সের মঙ্গলে মানব বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা
3. মাইক্রোস্কোপের নিচের দুনিয়া