বিজ্ঞান পত্রিকা

১৫০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো সুপার ব্লু ব্লাড মুন দেখা যাবে আজ

সুপার ব্লু ব্লাড মুন- বাংলায় রূপান্তর করে বলা যায় অতি নীলাভ রক্তিম চাঁদ। একই সাথে চাঁদ নীলাভ এবং রক্তিম হবে কী করে? আসলে এটি নীলও নয় আর রক্তের মতো লালও নয়। তাহলে কেন এহেন নামকরণ? একে একে আসা যাক।

কেন ব্লাড মুন : সাধারণত চন্দ্রগ্রহণের সময় যে চাঁদ দেখা যায় তাতে পৃথিবীর ছায়া থাকায় কিছুটা অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং গাঢ় লালচে দেখা যায়। এই অবস্থার চাঁদকে রক্তিম চাঁদ বা ব্লাড মুন বলে ডাকা হয়। মোদ্দা কথা চন্দ্রগ্রহণের সময়কালীন চাঁদই হলো ব্লাড মুন।

তবে চাঁদের উপর পৃথিবীর ছায়া পড়লেও চাঁদ পুরোপুরি অন্ধকারচ্ছন্ন হয়ে যায় না কেননা সুর্যের আলো বিক্ষিপ্ত হয়ে চাঁদের পৃষ্ঠে ঠিকই পড়ে। সূর্যের আলো যখন পৃথিবীর উপর দিয়ে চাঁদের দিকে এগিয়ে যায় তখন পৃথিবীর কঠিন অংশের কারণে বাধাপ্রাপ্ত হলেও পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের অণুগুলোর সাথে ক্রিয়া করে কিছুটা দিক পরিবর্তন করে। ফলে সেই রশ্মিগুলো চাঁদের পৃষ্ঠে ঠিকই পৌঁছায়। এই কারণে সূর্যগ্রহণের সময় সূর্য দেখা না গেলেও চন্দ্রগ্রহণের সময় চাঁদ দেখা যায়। তবে যেহেতু সূর্য কেবল পরোক্ষভাবেই চাঁদের পৃষ্ঠ আলোকিত করে তাই স্বাভাবিকের চেয়ে চাঁদের উজ্জ্বলতা অনেক কমে যায় এবং গাঢ় দেখা যায়। চিত্র দেখুন :

কেন নীলাভ চাঁদ : নাম নীলাভ হলেও নীল বর্ণের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। একটি মাসে যদি দু’টি পূর্ণিমা হয় তাহলে দ্বিতীয় পূর্ণিমাটিকে ব্লু মুন বা নীলাভ চাঁদ বলা হয়। এই ঘটনাটি বিরল। কেননা পূর্ণিমা আসে সাড়ে ঊনত্রিশ দিন পরপর। কাজেই একমাসে দুটি পূর্ণিমা হতে হলে মাসের একেবারে শুরুতে একটি পূর্ণিমা হতে হবে। সেই ক্ষেত্রে সাড়ে ঊনত্রিশ দিন পেরিয়ে গেলে মাসের শেষ দিনে আরেকটি পূর্ণিমা দেখা যেতে পারে। সেই ক্ষেত্রে মাসটিকে হতে হবে ৩১ দিনের। জানুয়ারী মাসের ১ তারিখে পূর্ণিমা হয়েছিল তাই ৩১ তারিখে আবার পূর্ণিমা হচ্ছে। যেহেতু একই সাথে পূর্ণিমা এবং গ্রহণ তাই আজকের চাঁদটিকে বলা হচ্ছে ব্লু ব্লাড মুন।

কেন সুপার : চাঁদ পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে। তবে এই ঘূর্ণন পুরোপুরি বৃত্তাকার নয় বরং কিছুটা উপবৃত্তাকার এবং এই কারণে পৃথিবীর সাথে চাঁদের দূরত্ব সর্বদা একই থাকে না। বরং ঘূর্ণনের কোনো এক সময় পৃথিবীর সাথে চাঁদের দূরত্ব হয় সবচেয়ে কম আবার কখনো হয় সবচেয়ে বেশী। যদি চাঁদের অবস্থান পৃথিবীর সাপেক্ষে সবচেয়ে কাছে হয় এবং সেই সময় পূর্ণিমা হয় তাহলে তাকে বলা হয় সুপার মুন। এই সময় চাঁদ গড়পরতার চেয়ে ১৪ শতাংশ বড় এবং ৩০ শতাংশ উজ্জ্বল দেখায়। নিচের চিত্র দেখলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে।

উপরে যেই তিনটি প্রপঞ্চের কথা বলা হলো সেগুলো আলাদাভাবে অতি বিরল না হলেও একই সাথে ঘটার ক্ষেত্রে বেশ বিরল। অর্থাৎ একই সাথে সুপারমুন, চন্দ্রগ্রহণ এবং ব্লু মুন হওয়ার সম্ভাবণা অতি ক্ষীণ। এই ধরনের একট ঘটনাই আজ ঘটতে যাচ্ছে। এর পুর্বের ঘটনাটি ঘটেছিলো ১৫০ বছর আগে। আগ্রহীরা দেখতে চাইলে আজ সন্ধ্যায় সূর্য ডোবার কিছু পরে চোখ রাখুন আকাশে।

 

 

Exit mobile version