গবেষকগণ বলছেন তাঁরা গ্রাফিনের একটি অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য আবিষ্কার করেছেন যা কাজে লাগিয়ে এই বস্তুটি হতে ভবিষ্যতে ‘পরিচ্ছন্ন ও সীমাহীন’ শক্তি উৎপাদন করা যেতে পারে।
ইউনিভার্সিটি অব আরকানসাসের বিজ্ঞানীরা ‘অলৌকিক বস্তু’ নামে খ্যাত গ্রাফিনের নড়ন পর্যবেক্ষণ করেছেন। ২০০৪ সালে আবিষ্কৃত এই বস্তুটি কার্বন পরমাণুর একটি মাত্র স্তর দিয়ে গঠিত।
গ্রাফিনের মতো কাঠামো বিশিষ্ট একটি বস্তুর অস্তিত্ব থাকাই অস্বাভাবিক মনে হয়। কিন্তু এর কাঠামোর একটি ত্রুটি তথা কার্বনের দোদুল্যমান অবস্থা বস্তুটিকে স্থিতিশীল করেছে। এই দোদুল্যমান অবস্থাকে বলা হয় ব্রাউনীয় গতি।
Physical Review Letters এ প্রকাশিত এই গবেষণায় গবেষক পল থিবাডো এবং তাঁর ছাত্ররা একটি স্ক্যানিং টানেলিং মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে গ্রাফিনের নড়ন পর্যবেক্ষণ করেন। অতিমাত্র বিবর্ধিত অবস্থায় তাঁরা শুধু পরমাণুর একক ব্রাউনীয় গতিই পর্যবেক্ষণ করেন নি বরং সেই সাথে দেখতে পেয়েছেন গ্রাফিনের সমগ্র পর্দাটিই পরমাণু সমেত আন্দোলিত হয়। থিবাডো বলেন, “এই অন্দোলনই দ্বিমাত্রিক বস্তু হতে শক্তি নিংড়ে নেওয়ার চাবিকাঠি।”
গবেষকবৃন্দের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ১০ মাইক্রোমিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট্য এক পরত গ্রাফিনের মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্নভাবে এবং কোনো প্রকার অপচয় ছাড়াই ১০ মাইক্রোওয়াট শক্তি উৎপাদন সম্ভব। কাজেই এটিকে একপ্রকার নিরবচ্ছিন্ন এবং সীমাহীন শক্তির উৎস ধরে নেওয়া যায়।
নীচের ভিডিওতে থিবাডো ব্যাখ্যা করছেন কীভাবে গ্রাফিনের নড়নের বৈশিষ্ট্য বর্তমানে প্রচলিত ব্যাটারিকে প্রতিস্থাপিত করতে পারে। ভাইব্রেশন এনার্জি হার্ভেস্টর নামের একটি যন্ত্রের মাধ্যমে থিবাডো দেখিয়েছেন কীভাবে ঋনাত্মকভাবে চার্জিত একটি গ্রাফিন পর্দা AC বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে।
ভিডিওতে তিনি বলেন, “উদাহরণস্বরূপ, আপনার যদি হাতের ঘড়িটিতে শক্তি দিতে হয় তাহলে আপনাকে আর বার বার ব্যাটারি বদলে দিতে হবে না। আপনার যদি ব্যাটারির বিকল্প থাকে যা বারবার বদলে দিতে হয় না তাহলে এটি দিয়ে কী কী করা যেতে পারে তা বলাই বাহুল্য।”
এর বাইরেও, এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে কোন বস্তু সহজে তথ্য প্রেরণ ও গ্রহণ করতে পারে। এবং তার জন্য ঘরের অভ্যন্তরীন কক্ষতাপই যথেষ্ট।
গ্রাফিনের বিপুল সংখ্যক ব্যবহার রয়েছে। যারমধ্যে উল্লেখযোগ্য, উন্নততর সৌর কোষ নির্মান, অপেক্ষাকৃত পাতলা টেলিভিশন পর্দা নির্মান এবং আরো অনেক কিছু। সেই সাথে এটিকে ব্যাটারির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে পারাটা এই যাদুকরী বস্তুটিকে নিঃসন্দেহে আরো প্রলুব্ধকর করে তুলবে। [iflscience.com অবলম্বনে]
-বিজ্ঞান পত্রিকা ডেস্ক