প্রজাপতির বর্ণিল পাখা আমাদের আনন্দ দেয়, পৃথিবীকে মনোহর করে তোলে। তবে বাস্তবিক ক্ষেত্রে, এই পাখা যেন টিকে থাকে সেই লক্ষ্যে অর্থাৎ প্রাণবৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যে বিজ্ঞানীরা সৌরবিদ্যুৎ কোষগুলো উন্নততর করে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এর এই প্রচেষ্টার পালে নতুন অগ্রগতি তৈরি হয়েছে খোদ প্রজাপতির পাখা থেকেই। বিজ্ঞানীরা Pachliopta aristolochiae প্রজাতির প্রজাপতির নিকষ কালো পাখা নিয়ে গবেষণা করছেন যা আলোর বিকিরণ খুব ভালোভাবে শোষন করতে পারে।
তাত্ত্বিকভাবে একটি কৃষ্ণ বস্তু এর পৃষ্ঠে পতিত সবধরনের আলো শোষন করে ফেলে এবং কিছুই প্রতিফলিত করে না। তবে এটি কখনোই পুরোপুরি অর্জন করা যায় না। বিশ্বের সবচেয়ে কালো বস্তু ভ্যান্টাব্ল্যাকও আলো পুরোপুরি শোষন করতে পারে না। এর উপর আপতিত আলোর ০.০৩৫ শতাংশ প্রতিফলিত হয়। সাধারণ অন্যান্য বস্তু যেগুলোকে আমরা কালো বলি সেগুলোও পুরোপুরি কালো নয়।
তবে P. aristolochiae প্রজাতির প্রজাপতির দীর্ঘ বিবর্তনীয় ইতিহাস আছে। এবং এর বিবর্তনীয় ধারায় এর পাখার আলো শোষন ক্ষমতা যত বেড়েছে ততোই এর টিকে থাকার সক্ষমতা বেড়েছে। ফলশ্রুতিতে ক্যালটেকের গবেষক ড. রেদওয়ানুল হাসান সিদ্দিকের গবেষণায় দেখা গেছে এর পাখা আঁইশাকৃতির আলোর ফাঁদে ঢাকা যার মাধ্যমে এটি সৌরবর্ণালীর সম্পূর্ন পাল্লার বিকিরণই শোষন করে।
ড. সিদ্দিক এবং তাঁর সহ-গবেষকবৃন্দ এই পাখার কাঠামোর খুঁটিনাটি পর্যবেক্ষণ করে এদের আদলে সৌ বিদ্যুৎকোষ তৈরি করেন। সবচেয়ে ভালো দিক হলো এই কাঠামোর জন্য তাঁদের পরিশ্রম করতে হয় নি। দুটি পলিমারের মিশ্রন হতে স্বয়ংক্রিয় ভাবে এই কাঠামো তৈরি হয়, ফলে বিদ্যুৎকোষ নির্মান সহজসাধ্য হয়ে যায়।
সৌরবিদ্যুতের বাজার সিলিকন ক্রিষ্টাল বিদ্যুৎকোষ একচেটিয়াভাবে দখল করে আছে। তাত্ত্বিকভাবে, পাতলা পর্দা বিদ্যুৎকোষ সিলিকন ক্রিষ্টাল কোষের তুলনায় অনেক বেশী সুবিধা সম্পন্ন। কিন্তু তবুও বাজার দখল করতে পারছে না কিছু সমস্যার জন্য। প্রথমত, এরা সমগ্র সৌরবর্ণালীর আলো শোষন করতে পারে না। এই সমস্যার সমাধানে অনেক প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছে, যেখানে দেখা গেছে নিয়ন্ত্রিত অনিয়মিত কাঠামো নিয়মিত এবং অনিয়মিত উভয় কাঠামোর তুলনায় আলো ভালোভাবে শোষন করে। প্রজাপতির পাখায় এই নিয়ন্ত্রিত অনিমিত কাঠামোই পাওয়া গেছে। তাই গবেষকগণ এই পাখাকে নিশানা করেই গবেষণা এগিয়ে নিয়ে গেছেন।
প্রজাপতির পাখা হতে প্রণোদনা নিয়ে সিদ্দিক এবং তাঁর সহগবেষকবৃন্দ পাতলা-পর্দা শোষক তৈরি করেছেন যা আলো শোষনে আগের প্রযুক্তির তুলনায় অনেক ভালো কাজ করে। ৫০ ডিগ্রি কোণেও এটি প্রচলিত শোষকের চেয়ে তিনগুণ বেশী আলো শোষন করে। গবেষকগণ তাঁদের গবেষণাপত্রে উল্লেখ করেছেন এই প্রযুক্তিতে আরো অগ্রগতি অর্জনের সুযোগ রয়েছে। [iflscience অবলম্বনে]
-বিজ্ঞান পত্রিকা ডেস্ক