বিজ্ঞান পত্রিকা

হাইড্রোজেন জ্বালানী তৈরি হবে আলো দিয়ে

জীবাষ্ম জ্বালানী পোড়ালে কার্বন ডাইঅক্সাইড ও পানি উৎপন্ন হয়। কার্বন ডাইঅক্সাইড পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ইতিমধ্যে আমারা জানি। তাছাড়া এই জ্বালানীর মধ্যে থাকা সালফার ও নাইট্রোজেনঘটিত নানাবিদ অপদ্রব্য যেগুলো পরিবেশে উন্মুক্ত হলে নানা ধরনের সমস্যা তৈরি করে। তাই জীবাষ্ম জ্বালানীর বিকল্প হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে নানা ধরনের নির্মল জ্বালানী (clean energy)। যত ধরনের বিকল্প ‘নির্মল’ জ্বালানীর কথা ভাবা হয় হাইড্রোজেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে নির্মল। হাইড্রোজেনকে পোড়ানো হলে কেবল পানি উৎপন্ন হয় যা পরিবেশের জন্য হুমকী তো নয়ই বরং প্রাণ ধারনের অত্যাবশ্যকীয় উপদান। একই কারণে হাইড্রোজেন জ্বালানী সম্পূর্ণ নবায়নযোগ্য।

এতদস্বত্ত্বেও, হাইড্রেজেন জ্বালানীর ব্যবহার্য ফুয়েল সেল বা জ্বালানী কোষ ব্যাপক আকারে উৎপাদন সহজ্যসাধ্য ছিলো না। কেননা একে তো এটি খুবই জটিল এবং এর মধ্যে এমন কিছু উপাদান ব্যবহার করা হয় যেগুলো খুবই ব্যয়বহুল।

তবে সম্প্রতি ইলিনয়ে অবস্থিত আর্গোন ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি এবং মস্কো ইনস্টিটিউট অব ফিজিক্স এন্ড টেকনোলজীর বিজ্ঞানীরা যৌথভাবে হাইড্রোজেন জ্বালানী তৈরির একটি বিকল্প পন্থা উদ্ভাবন করেছেন।

এই ব্যবস্থায় পানি হতে হাইড্রোজেন তৈরির মূলে রয়েছে সূর্যালোক এবং কিছু আলোক সংবেদী লিপিড। এই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে ACS Nano জার্নালে।

এই নতুন গবেষণায় স্বল্প খরচে এবং অধিক দক্ষতায় আলোর মাধ্যমে হাইড্রোজেন জ্বালানী তৈরির পদ্ধতি দেখানো হয়েছে। পানি হতে সূর্যালোক ব্যবহার করে হাইড্রোজেন উৎপন্ন করা যায়, তবে এতে ব্যবহৃত হয় টাইটেনিয়াম ডাইঅক্সাইড জাতীয় প্রভাবক।

যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার এই দুই গবেষকদল কিছু ন্যানো আকারের চাকতিতে আলোক সংবেদী প্রোটিন অনু নেন। এই ন্যানো ডিস্কগুলো তৈরি হয় বৃক্তাকার কোষ আবরনী দিয়ে। এই কোষ আবরনী তৈরি হয় দ্বিস্তর বিশিষ্ট লিপিড অনুর মাধ্যমে। প্রকৃতিতে এধরনের লিপিড স্তর পাওয়া যায় ব্যাক্টেরিওহযোপ্সিন নামক আবরণে।

আলোকপ্রভাবন প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য এই ন্যানোচাকতিগুলোকে পানিতে দ্রবীভুত করা হয়। সেই সাথে নেওয়া হয় টাইটেনিয়াম ডাইঅক্সাইড। বিক্রিয়া আরো কার্যক্ষম করার জন্য এতে নেওয়া হয় প্লাটিনাম।

এই প্রক্রিয়ায় সুর্যালোক প্রভাবকসমূহের সাহায্যে পানির অনুকে ভেঙ্গে হাইড্রোজেন তৈরি করে। সবুজ এবং সাদা আলোর মাধ্যমে পরীক্ষাটি করা হয় এবং দেখা যায় দ্বিতীয়টি প্রথমটির চেয়ে ৭৪ গুণ বেশী হাইড্রোজেন উৎপন্ন করে। উভয় ক্ষেত্রেই নিরবচ্ছিন্ন ভাবে দুই/তিন ঘন্টা ব্যাপী হাইড্রোজেন উৎপন্ন হয়। [Science Alert অবলম্বনে]

-বিজ্ঞান পত্রিকা ডেস্ক

Exit mobile version