বিজ্ঞান পত্রিকা

পরশ পাথর তৈরির রেসিপি দিয়েছিলেন নিউটন!

নিউটনের হাতে লেখা স্ক্রিপ্ট।

১৭ শতকে লেখা আইজ্যাক নিউটনের রসায়ন সংক্রান্ত একটি পাণ্ডুলিপি থেকে তথ্য উদ্ধার করে জানা যায় তিনি ‘পরশপাথর’ বানানোর চেষ্টা করেছিলেন। পরশপাথর বানাতে রাসায়নিক প্রক্রিয়া তথা রেসিপিও তৈরি করেছিলেন। এই রেসিপি হয়তো তাঁকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল।

পরশপাথর বা philosopher’s stone হচ্ছে একধরনের কাল্পনিক পাথর যার সংস্পর্শে আসলে মানুষ অমরত্ব লাভ করে। সাধারণত পৌরাণিক কাহিনীগুলোতে পরশপাথরের উল্লেখ থাকে। সেই প্রাচীন কাল থেকেই মানুষ অমরত্ব লাভ করার বাসনায় বিভোর ছিল। বিভোর ছিল বলেই পৌরাণিক কাহিনীগুলোর জন্ম হয়েছে।

নিউটনের এই পাণ্ডুলিপিটি ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখে নিলামে তোলা হয়। ফিলাডেলফিয়ার Chemical Heritage Foundation (CHF) নিউটনের শত বছরের আগের এই পাণ্ডুলিপিটি কিনে নেয়। নিউটনের রেসিপিটি অনলাইনে অবমুক্ত করে দেয়া হবে এবং সকলে বিনামূল্যেই দুর্লভ প্রক্রিয়াটি পড়তে পারবেন।

তাঁর এই পাণ্ডুলিপিতে দেখা যায় তিনি philosophic পদার্থ তৈরি করতে অন্য এক রসায়নবিদের ফর্মুলা অনুসরণ করেছেন। কিংবা অন্যভাবে বলা যায় এই অংশটি তিনি নকল করেছেন। এই অংশের মূল ফর্মুলাটি আমেরিকার আরেক বিখ্যাত রসায়নবিদের তৈরি করা। নিউটন এটা তার পান্ডুলিপিতে বলেছেনও।

তবে ফর্মুলা ধার করার পাশাপাশি নিজের চিন্তাভাবনাও যোগ করেছেন তাতে। এই স্ক্রিপ্টে পরশপাথর নিয়ে নিজের কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষার কথাও উল্লেখ করেছেন। পাশাপাশি পরীক্ষা করার প্রক্রিয়া নিয়েও কিছু আলোচনা করেছেন।

১৮ শতকের আগ পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল যে পদার্থকে ক্ষুদ্র পর্যায়ে যেকোনো উপায়ে পুনঃবিন্যস্ত করা যায়। আধুনিক ভাষায় বললে এর পারমাণবিক গঠন পালটে ফেলা যায়। মূল গঠন পালটে অন্য পরমাণুতে রূপান্তরিত করে ফেলা যায়। পাথর, লোহা কিংবা অন্যান্য সহজলভ্য সস্তা পদার্থের গঠন পরিবর্তন করে অন্য মূল্যবান ধাতু যেমন সোনায় রূপান্তরিত করা যায় বলে আরবীয়দের বিশ্বাস ছিল। সেই লোভ থেকেই আরবীয়রা দিনের পর দিন রসায়নের চর্চা করতো এবং ফলশ্রুতিতে তাঁদের হাত ধরে রসায়ন প্রভূত উন্নতি লাভ করে। তাঁদের নিজেদের পরীক্ষা নিরীক্ষার বিবরণ গোপন সাংকেতিক ভাষায় লিখে রাখতো।

নিউটন যার গবেষণা থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন আমেরিকার রসায়নবিদ জর্জ স্টার্কি। জনাব স্টার্কি ১৬৫০ সালের দিকে তখনকার বিখ্যাত রসায়নবিদদের সাথে কাজ করার জন্য আমেরিকা থেকে ইংল্যান্ড চলে আসেন। নিউটনের সময়কালের রসায়নবিদ রবার্ট বয়েলের সাথেও তিনি কাজ করেছিলেন। তাঁর ইংল্যান্ড আসার কারণেই হয়তো তাঁর পরশপাথর তৈরির প্রণালী নিউটনের হাতে এসে পড়ে।

গতিসূত্র, অভিকর্ষের সূত্র সহ অন্যান্য গবেষণা দিয়ে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানকে এগিয়ে নেবার পাশাপাশি নিউটন রসায়ন নিয়েও অনেক গবেষণা করেছেন। রসায়ন নিয়ে তিনি যে পরিমাণ লেখা লিখেছেন তার পরিমাণ অনেক। ১ মিলিয়নের চেয়েও বেশি শব্দ লিখেছেন রসায়নকে নিয়ে। কিন্তু দুঃখের কথা হচ্ছে তাঁর অধিকাংশ স্ক্রিপ্ট ১৯৩৬ সালের দিকে নানা জনের কাছে বিক্রি হয়ে গেছে। তাঁর স্ক্রিপ্টগুলো একত্রিত অবস্থায় নেই। অনেকের কাছে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

যে প্রতিষ্ঠানটি নিউটনের এই স্ক্রিপ্ট কনে নিয়েছে তারা একটি প্রকল্পের আওতায় নিউটনের এই প্রণালীটি প্রকাশ করবে। Chymistry of Isaac Newton নামের এই প্রজেক্টটি আইজ্যাক নিউটনের রসায়ন সংক্রান্ত সমস্ত গবেষণা একত্র করার কাজ করছে। এর ফলে ব্যক্তি নিউটন ও রসায়ন নিয়ে অনেক কিছু জানা যাবে।

⚫ সিরাজাম মুনির

বিজ্ঞান পত্রিকা প্রকাশিত ভিডিওগুলো দেখতে পাবেন ইউটিউবে। লিংক:
১. টেলিভিশনঃ তখন ও এখন
২. স্পেস এক্সের মঙ্গলে মানব বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা

Exit mobile version