এইচআইভি প্রতিরোধের ক্ষেত্রে গরুর ক্ষমতা বিষ্ময়কর। যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকগণ গরুর এই প্রতিরোধ ক্ষমতা বিশ্লেষণ করে মানুষের জন্য একটি টিকা তৈরি করতে চাইছেন।
গরুর শরীরে এইচআইভি ভাইরাস প্রবেশ করলে এরা খুব দ্রুত একটি এন্টিবডি তৈরি করে ফেলে যা এইচআইভির আক্রমন প্রতিহত করে। ধারণা করা হয় গরুর ব্যক্টেরিয়া-নির্ভর পরিপাক তন্ত্রের প্রেক্ষিতে শরীরে রোগ প্রতিরোধের অত্যন্ত কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। এই সব তথ্যের বিশাল প্রয়োগযোগ্যতা আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের গবেষকগণ মনে করেন।
মানবশরীরে এইচআইভি খুবই পিচ্ছিল এবং কুখ্যাত প্রতিপক্ষ। এটি এত দ্রুত বিবর্তিত হয়ে যায় যে যখনই রোগীর শরীরে এটি প্রতিরোধের কোনো ব্যবস্থা তৈরি হতে যায় তখনই এটি এর গঠন বদলে ফেলে। তবে রোগীদের একাংশ আক্রান্ত হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যে কার্যকর এন্টিবডি তৈরি করতে পারে যা একটি বিস্তৃত রকমের ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে। ফলে বিবর্তিত রূপের ভাইরাসও এই এন্টিবডির মাধ্যমে অকার্যকর করা যায়।
যদি একটি টিকা তৈরি করা যায় যা শুধু কিছু মানুষের নয় বরং সকলের জন্য এই বিস্তৃত এন্টিবডি তৈরি করতে সাহায্য করবে তাহলে খুব সহজেই এইচআইভি নির্মূল করা সম্ভব। কিন্তু অদ্যাবধি এই ধরনের কিছু কেউই করতে পারেন নি।
এমতাবস্থায়, ইন্টারন্যাশনাল এইডস ভ্যাকসিন ইনিশিয়েটিভ এবং স্ক্রিপস (Scripps) রিসার্চ ইনস্টিটিউট এইচআইভি গবেষণায় গরুকে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে। গবেষকদের একজন, ড. ডেভিন সক বলেন “গবেষনায় যে সাড়া পাওয়া গেছে তা হতবিহ্বল করে দেওয়ার মতো।” গরুর শরীরে প্রয়োজনীয় এন্টিবডিগুলো মাত্র কয়েক সাপ্তায় তৈরি হয়ে যায়।
ড. সক আরো বলেন, “এটি কতটা বিস্ময়কর তা বুঝতে পারা যায় মানুষের সাথে তুলনা করলে। মানুষের শরীরে এই এন্টিবডিগুলো তৈরি হয় তিন থেকে পাঁচ বছর সময়ে।”
নেচার জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষনায় উল্লেখ করা হয়, গরুর শরীরের এন্টিবডি ৪২ দিনের মধ্যে ২০% এইচআইভি স্ট্রেইনকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। আর ৩৮১ দিনের মধ্যে ৯৬ শতাংশ ভাইরাস নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়।
সাধারণত মানব শরীরে বিস্তৃত পাল্লার যে এন্টিবডিগুলো তৈরি হয় সেগুলো লম্বা এবং প্যাঁচানো। অপরদিকে গরুর এন্টিবডিগুলো সহজাতভাবেই অধিকতর লম্বা ও প্যাঁচানো। এই বৈশিষ্ট্যটি এইচআইভি প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ বলে ধারনা করা হচ্ছে।
ধারনা করা হয় গরুর ‘জাবর কাটা’ বৈশিষ্ট্যের পরিপাক তন্ত্রের হজমের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্য এবং বিরুপ ব্যাক্টেরিয়া। এই ব্যাক্টেরিয়াগুলোকে নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্যই এদের অতিকার্যকর রোধ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়ে বলে মনে করা হয়।
এসবের অর্থ হচ্ছে, ক্রমান্বয়ে গরু মানুষের ঔষধ উৎপাদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হয়ে উঠতে পারে যা এইচআইভির মতো ভাইরাস প্রতিরোধ করবে। তবে গবেষণার প্রধান লক্ষ্য থাকবে, এমন একটি টিকা তৈরি করা যা মানুষের নিজের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকেই উৎসাহিত করবে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিস্তৃত পাল্লার একটি এন্টিবডি তৈরি করতে।
-বিজ্ঞান পত্রিকা ডেস্ক