বিজ্ঞান পত্রিকা

দ্বিমেরু ব্যাধি : একটি ভিন্ন ধারার সমস্যা

দ্বিমেরু ব্যাধি বা বাইপোলার ডিজঅর্ডারকে বলা হয়ে থাকে ম্যানিক-ডিপ্রেসিভ ইলনেস। এটা মূলত একধরনের ব্রেন ডিজঅর্ডার। এর ফলে ব্যক্তির মানসিক অবস্থার খুব দ্রুত পরিবর্তন ঘটে।

মস্তিষ্কের একধরনের অস্বাভাবিক অবস্থার কারণে আমাদের মুডে খুব ঘনঘন পরিবর্তন আসে। তখন কাজ করার স্পৃহা, কর্মক্ষমতা এবং নিত্যদিনের স্বাভাবিক কাজগুলো করা কঠিন হয়ে পড়ে। মোটামুটিভাবে চার ভাগে ভাগ করা যায় এই বাইপোলার ডিজঅর্ডারকে। যার কারণে একজন মানুষের মুড একদম ফুরফুরে মেজাজ থেকে একেবারে খাদে নেমে যেতে পারে। এই যে তার মন খুব ভাল আছে বা খুব সাবলীল তার আচার-আচরণ, এ সময়টাকে বলা হয়ে থাকে ম্যানিক এপিসোড। আর যখন সেই একই ব্যক্তি দুঃখে ভারাক্রান্ত হয়ে একদম আশাহত হয়ে পড়ে বা মানসিকভাবে খুব খারাপ বোধ করে সে সময়টাকে বলা হয় ডিপ্রেসিভ এপিসোড। এখানে বলে রাখা ভাল যে ম্যানিক এপিসোডের তীব্রতা যদি তুলনামূলক কম হয় তখন সেটাকে বলে হাইপোম্যানিক এপিসোড।

বাইপোলার ডিজঅর্ডারের রকম ফের

চার রকমের মাঝে সাধারণত যে দুটোর কথা চলেই আসে সেগুলো হল যথাক্রমে বাইপোলার I এবং বাইপোলার II

বাইপোলার I কে সংজ্ঞায়িত করার ক্ষেত্রে বলা হয়, ম্যানিক এপিসোড নিদেনপক্ষে এক সপ্তাহব্যাপী থাকবে এমনকি এও হতে পারে যে কারও অবস্থা এতটাই গুরুতর যে তাকে হসপিটালাইজড করতে হতে পারে। আর ওদিকটায় ডিপ্রেসিভ এপিসোড কমপক্ষে দুই সপ্তাহ ধরে চলে সাধারণত। এই ক্ষেত্রে এমন হওয়াটাও অসম্ভব না যে দুটো এপিসোডই একই সাথে চলছে।

এবারে আসা যাক বাইপোলার II– এ। এই ক্ষেত্রে ডিপ্রেসিভ এপিসোড থাকবে আর তার সাথে চলবে হাইপোম্যানিক এপিসোড অর্থাৎ ম্যানিক এপিসোডের তীব্রতা পুরোপুরি অনুভূত হবে না।

এছাড়াও আরও যে দুটো ভাগ আছে সেগুলো একটার বেশ শক্ত নাম আছে- সাইক্লোথাইমিক ডিজঅর্ডার বা সাইক্লোথাইমিয়া। এই ক্ষেত্রে যেটা দেখা যায় সেটা হচ্ছে হাইপোম্যানিক এপিসোড এবং ডিপ্রেসিভ এপিসোড উভয়ের সংখ্যাই খুব বেড়ে যায় এবং এর ব্যাপ্তি থাকে কমপক্ষে দুই বছর।তবে শিশু এবং বয়ঃসন্ধিকালে উপনীতদের ক্ষেত্রে এক বছর।

একদম শেষ যে ভাগটা সেটাকে প্রকৃতপক্ষে আলাদা কোনো নামে ডাকা হয় না। এটা বলতে এমন কিছু ভিন্নধর্মী লক্ষণ বোঝায় যেগুলো ওপরের তিনটি ভাগের কোনোটির সাথেই সাদৃশ্যপূর্ণ নয়।

বাইপোলার ডিজঅর্ডারের লক্ষণসমূহ

বাইপোলার ডিজঅর্ডারের কিছু নীরব কারণ থাকে অর্থাৎ সাধারণভাবে অনেকেই এসব কারণকে এড়িয়ে যায়। এবারে সেগুলোর কথাই জেনে নেওয়া যাক।

তবে এ কারণগুলোকে আবার এভাবেও দেখানো যায় যে কীভাবে তারা বিপরীত একটা সম্পর্ক বজায় রাখে। অর্থাৎ ম্যানিক এপিসোডে যা অনুভূত হচ্ছে ডিপ্রেসিভ এপিসোডে সেগুলো অনেকাংশেই উল্টো হয়ে যাচ্ছে।

কেন হয় বাইপোলার ডিজঅর্ডার?

আজ অবধি বিজ্ঞানীরা সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারেন নি কেন বাইপোলার ডিজঅর্ডার হয়। তবে তাদের মতামত এরকম যে বেশ কিছু বিষয় জড়িত থাকে এই সমস্যাটার সঙ্গে।

 চিকিৎসা

চিকিৎসা বা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে খুব তীব্র পর্যায়ের বাইপোলার ডিজঅর্ডারও ভাল হয়। মূলত এই অসুখটা সমগ্র জীবনব্যাপী। সবচেয়ে ইতিবাচক সমাধান হল একই সাথে মেডিকেশন এবং সাইকোথেরাপি নেওয়া যেটাকে বলা হয়ে থাকে টক থেরাপি। এই যে মুডের হুটহাট পরিবর্তনের সমস্যা এটা কারও কারও জীবনে একদম স্বাভাবিক হয়ে আসে আবার কখনও কখনও দীর্ঘ সময় পরে হলেও ফিরে আসে। সেজন্য সামগ্রিকভাবে অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট, পরিবারের সদস্যদের সাথে সম্পর্ক, নিজস্ব ব্যবহারের একটা ধারাবাহিক পরিবর্তন, সামাজিক জীবনে চলাফেরা এবং এরই মাধ্যমে একটি ভারসাম্যপূর্ণ জীবন চলার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা উচিৎ।

তথ্যসূত্র
Reader’s Digest
National Institute of Mental Health

-রাশিদ তাকী সাকীব
বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি, শাবিপ্রবি

Exit mobile version