সরাসরি সূর্যের বায়ুমন্ডলে প্রবেশের উদ্দেশ্যে নাসা একটি উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই নাসার পারকার সোলার প্রোব (PSP) মিশনটি ২০১৮ সালের গ্রীষ্মে পৃথিবী থেকে মহাকাশযান উৎক্ষেপন করবে। মানব ইতিহাসে সূর্যের বায়ুমন্ডল অভিমুখে এটাই প্রথম কোন সরাসরি অভিযান।
এটি সূর্যের চল্লিশ লক্ষ মাইলের মধ্যে একটি কক্ষপথ পরিভ্রমণ করবে এবং ‘কোরোনা’ নামে পরিচিত সূর্যের বাইরের পৃষ্ঠের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবে এবং এসময় যানটি ১৪০০ ডিগ্রি তাপমাত্রার মধ্যে অবস্থান করবে। একটি নক্ষত্রের জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও আবহাওয়ার তথ্য সংগ্রহ করাসহ বিজ্ঞানীদেরকে সৌর অগ্নিতরঙ্গ সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করতে সাহায্য করাই এ অভিযানের মূল লক্ষ্য।
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের উইলিয়াম এখার্ড রিসার্চ সেন্টার অডিটরিয়ামে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে নাসা এই ঘোষণা দেয় যা নাসা টিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত বিজ্ঞান বিভাগের ডিন অধ্যাপক রকি কলব ব্যাখ্যা করেন ১৯৫৮ সালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম সূর্য্য গবেষণার ধরণা শুরু করা হয়েছিলো। তিনি আরও বলেন, “সৌর ঝড়ের বিষয়ে অনেক মৌলিক প্রশ্নের উত্তর নেই।”
নাসা বিজ্ঞান অনুষদ অধিদপ্তরের সহকারী প্রশাসক ড. থমাস জার্বেচেন বলেন, “আমরা সৌরশক্তির সবচেয়ে খারাপ পরিবেশে যাওয়ার এবং টিকে থাকার প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। আমরা সেখানকার পরিবেশ পরিমাপ করতে চাই এবং কীভাবে এটি কোরোনা অঞ্চল উত্তপ্ত করে তা খুঁজে বের করতে চাই। এছাড়াও কীভাবে সৌর বায়ু গতিশীল হয় সেটাও জানতে চাই।”
এটি পূর্বের যে কোন অভিযানের চেয়ে সাতগুণ বেশি কাছাকাছি পৃষ্ঠে ভ্রমণ করবে এবং এই ভ্রমণে যানটি গন্তব্যে পৌঁছুতে ঘন্টায় সাড়ে চার লক্ষ মাইল গতিতে ছুটবে। অতিরিক্ত তাপমাত্রার হাত থেকে যানকে সুরক্ষিত রাখার জন্য নাসা ৪.৫ ইঞ্চি পুরু ঢালের উপর নির্ভর করবে। কোরোনার ভেতর প্রবেশ করার পর সেন্সর সরঞ্জামগুলি ঐ অঞ্চলের ইলেকট্রনিক কণার ‘স্বাদ’ ও ‘গন্ধ’ সংগ্রহ করা শুরু করবে। এছাড়াও যানটি বিজ্ঞানীদেরকে সূর্যের খুব কাছাকাছি অবস্থার ছবি নেয়ার জন্য কিছু টেলিস্কোপ বহন করবে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানী মার্টিন রেইস বলেন, “সূর্যের এতো কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তা পৃথিবীতে পাঠানো হবে প্রযুক্তিগত কৃতিত্বের চমৎকার উদাহরণ।”
সূর্য্যের পৃষ্ঠদেশ পর্যবেক্ষণে ইতিমধ্যে কৃত্রিম উপগ্রহের একটি নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হয়েছে। এ সত্বেও বিজ্ঞানীদের নিকট অতি অল্পই ধারণা রয়েছে কীভাবে নক্ষত্রগুলির বাইরের বায়ুমন্ডলে বিকিরণ তৈরী হয় এবং তা পৃথিবীর দিকে ধাবিত হয়।
তেজস্ক্রিয় ঝড়গুলি কৃত্রিম উপগ্রহের কার্যক্রম বিনষ্ট করতে এবং জিপিএসের সাথে যোগাযোগ পরিসেবা ব্যাহত করতে পারে। এছাড়াও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এরা পৃথিবীর সুরক্ষা স্তর ভেদ করে ঢুকে পরে এবং বিদ্যুৎ সরবরাহেও হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা রাখে।
১৯৭৬ সালে হেলিও-২ মিশনের একটি মহাকাশযান সর্বশেষ সূর্য্যের অতি নিকটে পৌছেছিল যা এর ২৭০ লক্ষ মাইলের কক্ষপথে পরিভ্রমণ করেছিল। নতুন এই অভিযানটি আগামী বছরের জুলাই অথবা আগষ্টে কেপ কেনাভেরাল থেকে উড্ডয়নের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
[দি টেলিগ্রাফ- অবলম্বনে]
-শফিকুল ইসলাম