বিজ্ঞান পত্রিকা

অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারস্পরিক যোগাযোগের মাধ্যমে খাদ্য গ্রহণ করে ব্যাকটেরিয়া

ব্যকটেরিয়া কলোনি যখন কঠিন সময়ের সম্মুখীন হয় তখন এরা পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে গিয়ে পরিস্থিতি বুঝে সময়কে ভাগ নেয় এবং এমন ভাবে খাদ্য গ্রহণ করে থাকে যার মাধ্যমে এদের জীবিত থাকার সুযোগ অনেক গুণ বৃদ্ধি পায়।

গত বছর ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গুলোল সুলে ঘোষণা দিয়েছিলেন ব্যাকটেরিয়ারা পশুদের স্নায়ু কোষগুলি যেভাবে যোগাযোগ করে থাকে ঠিক অনুরূপভাবে এরা একে অন্যের সাথে ইলেক্ট্রোকেমিক্যাল সংকেত আদান-প্রদানের মাধ্যমে যোগাযোগ চালিয়ে থাকে। কলোনির কেন্দ্রে থাকা ব্যাকটেরিয়াগুলি অল্প পরিমাণ খাদ্য সকলের সাথে সমন্বয় করার জন্য পটাশিয়াম আয়ন ব্যবহার করে দলের অন্যান্য ক্ষুধার্ত সঙ্গীদের কাছে বার্তা প্রেরণ করে।

এই আবিষ্কারটি যথেষ্ট বিস্ময়কর ছিলো তবে সুলের সর্বশেষ কাজটিও অনেকটা অদ্ভুত। শারীরিকভাবে বিভক্ত দুটি ভিন্ন প্রজাতির ব্যাকটেরিয়ার কলোনি তাদের বৃদ্ধি সমন্বয় করার জন্য এদের মধ্যবর্তী উপাদনগুলির মাধ্যমে নাড়ি স্পন্দনের যোগাযোগ করে থাকে।

সায়েন্স জার্নালের এর এক রিপোর্টে সুলে জানান, যখন দুটি ব্যাসিলাস সাবটিলিস এর দুটি বায়োফিল্মের প্রকরণ ২ মিলিমিটার দূরত্বে গ্লিসারিন এবং গ্লুটামেটের অল্প মজুদের মধ্যে পৃথকভাবে অবস্থান করে তখন এদের বৃদ্ধি এবং একত্রীকরণ একই সময়েই হয়ে থাকে। অবশেষে এদের নড়াচড়া একটি নির্দিষ্ট অবস্থার বাইরে চলে যায়, যার ফলে একটি প্রকরণ অন্য একটি প্রকরণের দেয়া খাদ্য পেতে থাকে এবং একে অপরের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে। আর এই পদ্ধতিতেই প্রজাতিগুলি সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতিতে খাদ্য গ্রহণ করতে পারে এবং প্রত্যেকের সর্বাধিক বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে।
এক বিবৃতে সুলে জানান, “এখানকার সবচেয়ে সুন্দর বিষয়টি হচ্ছে, এটি একটি সরল এক কোষী ব্যাকটেরিয়া যা খুবই ছোট এবং যাকে একক জীব বলে মনে হয়। কিন্তু একটি কলোনির মধ্যে তারা খুব গতিশীল এবং জটিল আচরণ প্রদর্শন করে যেখানে আপনি আরও বেশী পরিশীলিত কার্যক্রম অথবা একটি সামাজিক যোগাযোগ ব্যবস্থা দেখতে পাবেন। এটা অনেকটা কম্পিউটার বিজ্ঞানের সেইম টাইম শেয়ারিং ধারণার মতো।”

তিনি আরও বলেন, “আরেকটি মজার ব্যাপার হচ্ছে এই সহজ কার্যক্রমটি ২ বিলিয়ন বছর আগে সৃষ্টি হয়েছে আর আমরা এই কৌশলটি বর্তমানে সকল কার্যক্রমে ব্যবহার করছি।”

এমনকি যখন দুটি উপনিবেশ একই সাথে তাদের বৃদ্ধির শেষ পর্যায়ে পৌছে যাবে, তখন একটি সামান্য আগেই শুরু হবে। আর এটাই দ্বিতীয় বায়োফিল্মকে নিজেদের বৃদ্ধি করা থেকে বিরত করবে সে অনুসারেই দুটি বায়োফিল্মের অবস্থার পার্থক্য বৃদ্ধি করে। ধীরে ধীরে এদের সময়ের পার্থক্য বৃদ্ধি পেতে থাকে যতক্ষণ না উভয়েই সম্পূর্ণরূপে নিজেদের দশার বাইরে চলে যেতে পারে। এই প্রক্রিয়া শুধুমাত্র তখনই ঘটে যখন গ্লুটামেটের সমাবেশ কম থাকে।

[iflscience.com- অবলম্বনে]

-শফিকুল ইসলাম

Exit mobile version