প্রতিনিয়তই মানুষ জীবাণুঘটিত রোগে ভোগে। এই জীবাণুদের প্রতিরোধ করতে প্রায় সারা বিশ্বেই এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার অনেক জনপ্রিয়। জীবাণু প্রতিরোধে এন্টিবায়োটিক দৃশ্যত কার্যকর হলেও এর অনেক ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। প্রথমত জীবাণুরা ধীরে ধীরে এন্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে। প্রতিরোধ গড়ে তুললে ঐ প্রজাতির জীবাণুর জন্য ঐ এন্টিবায়োটিক আর কাজ করে না। নতুন এন্টিবায়োটিকের সন্ধান করতে হয়। মিউটেশনের মাধ্যমে প্রতিরোধ গড়ে তোলা জীবাণুর জন্য এন্টিবায়োটিক তৈরি করা এতটা সহজ হয় না। তৈরি করা গেলেও সাধারণত তা অনেক দিন সময় নেয়। মানুষ এবং জীবাণুর দৌড়ে জীবাণুরাই সবসময় এগিয়ে থাকে। একারণেই অনেকে ইদানীং এন্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছেন, জীবাণুদের মানুষের চেনা-জানার মাঝে রাখা উচিত। মিউটেশনের মাধ্যমে তাদেরকে অচেনা করলে মানুষেরই ক্ষতি।
যদি এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা না হয় তাহলে বিভিন্ন প্রাণঘাতী রোগের বেলায় করনীয় কী? এই সমস্যারই সমাধান নিয়ে এসেছেন হাস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। নমনীয় সোনার পাত ও অবলোহিত (infrared) আলো ব্যবহার করে জীবাণু প্রতিরোধের একটি কৌশল তৈরি করেছেন তাঁরা। এই প্রক্রিয়ায় ২৫/৩০ সেকেন্ডের মাঝেই সকল জীবাণু মরে শেষ হয়ে যাবে। এমনটাই জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
পূর্ববর্তী গবেষণা থেকে তাঁরা জানতে পারেন যে ন্যানো পর্যায়ের সোনার ক্ষুদ্র পাত আলো শুষে নিতে পারে। অর্থাৎ ফোটন কণাকে ধারণ করতে পারে। ফলে ক্ষুদ্র স্কেলে প্রচণ্ড তাপমাত্রার সৃষ্টি হয়। উৎপন্ন তাপমাত্রার পরিমাণ আশেপাশের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট।
তাদের উদ্ভাবিত এই পদ্ধতির জীবাণু ধ্বংস করার ক্ষমতা পরীক্ষা করে দেখতে কিছু পরিমাণ ব্যাকটেরিয়াকে সোনার ন্যানো ডিস্কের উপর রাখেন। তারপর ডিস্কের উপর লেজার বিম থেকে অবলোহিত আলোক রশ্মি প্রয়োগ করেন। তখন সোনার পাতের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা এসে দাড়ায় ১৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। লেজার প্রয়োগের সাথে সাথেই বলতে গেলে এক রকম ‘তাপীয় শক’ তৈরি হয়। ফলাফল যা আশা করেছিলেন তাই, আশেপাশের জীবাণুরা সব শেষ।
স্ক্যানিং ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপি সিস্টেম (SEM) ব্যবহার করে তারা এই ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছেন। এর মাধ্যমে তারা দেখেছেন মানুষের শরীরের অতি পরিচিত সাধারণ ব্যাকটেরিয়া E. Coli ধ্বংস হয়ে যায় মাত্র পাঁচ সেকেন্ডের মাঝেই। সবচেয়ে বেশি তাপ সহ্যকারী ব্যাকটেরিয়া, যেগুলো মাটি থেকে টগবগে গরম পানি ওঠে এমন অঞ্চল, আমেরিকার ইউলোস্টোন ন্যাশনাল পার্কে থাকে থাকে তাদের ধ্বংস হতে সময় লাগে ২৫ সেকেন্ড।
অল্প সময়ে কার্যকর বলে গবেষকদের উদ্ভাবিত এই প্রক্রিয়া জীবাণু ধ্বংসে অনেক সময় বাঁচিয়েছে। এই পদ্ধতি সর্বসাধারণের ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত ও উন্নীত হলে খুব অল্প সময়ের ভেতরেই মানুষ আরোগ্য লাভ করবে। প্রচলিত পদ্ধতিতে এমন রোগ থেকে নিদান পেতে সাধারণত অনেক সময় লাগে।
গবেষকেরা তাদের গবেষণার বিস্তারিত প্রকাশ করেছেন Optical Materials Express জার্নালে প্রকাশ করেছেন।
গবেষকেরা ন্যানো ডিস্কের এই পদ্ধতি ব্যাকটেরিয়া মারার পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করার চেষ্টা করছেন। সম্ভাব্য অনেকগুলো ক্ষেত্রের মাঝে আছে পানি। পানির মাঝে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করলে পানিকে সহজেই রোগ-জীবাণুমুক্ত করা যাবে। বাংলাদেশের মতো দেশে যেখানে রোগ জীবাণুর বিস্তার সহজ ও ব্যাপক সেখানে এই পদ্ধতি খুব কাজে আসতে পারে।