বিজ্ঞান পত্রিকা

প্রথম বারের মতো একটি বৃহদাকার কোয়ান্টাম কম্পিউটারের রূপরেখা উন্মোচিত

বিজ্ঞানীরা কোয়ান্টাম কম্পিউটিংযের স্বপ্ন দেখছেন বহুদিন। এটা এমন এক প্রযুক্তি যা আমাদেরকে একটি অবিশ্বাস্য তথ্য প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতা দেবে। সম্প্রতি তাঁরা একটি ব্যবহারিক কোয়ান্টাম কম্পিউটারের রূপরেখা (ব্লু প্রিন্ট) প্রকাশ করেছেন। এই নকশায় দেখানো রূপরেখা দিয়ে একটি ফুটবল মাঠের আকারের কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরী করা যাবে এবং সেই সব সমস্যার সমাধান করতে পারবে যা পূর্বে আমাদের বিদ্যমান প্রযুক্তি দিয়ে সমাধান করা অসম্ভব ছিলো। আর এসবের মাধ্যমে আমরা প্রযুক্তির আরেকটি বিপ্লবে পৌঁছুতে যাচ্ছি।

যুক্তরাজ্যের সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ন কোয়ান্টাম প্রযুক্তি দলের একজন সদস্য উইনফারড হেসটিংগার গণমাধ্যমকে বলেন, “এবার আমরা বৃহৎ পরিসরে একটি কোয়ান্টাম কম্পিউটার নির্মানের খুঁটিনাটি বিষয়াদি প্রকাশ করেছি। এর মাধ্যমে জীবন সত্যিই বদলে যাবে। আমরা এমন সব কাজ করতে সক্ষম হবো যা পূর্বে কল্পনার বাইরে ছিলো।”

১৯৮২ সালে নোবেল বিজয়ী পদার্থবীদ রিচার্ড ফাইনম্যান প্রথম কোয়ান্টাম প্রযুক্তির উত্থাপন করেছিলেন। যদিও এখন পর্যন্ত এটা ব্যবহারিক আকারে নির্মাণ করা হয়নি তবে ভবিষ্যতে আমরা এর মাধ্যমে বিপুল পরিমাণে তথ্য প্রক্রিয়া করণ করার জন্য সংযোজন করতে পারবো।

বর্তমান কম্পিউটার যা 1 এবং 0 বিট বাইনারি কোডে সীমাবদ্ধ কিন্তু কোয়ান্টাম কম্পিউটার qubits উপর ভিত্তি করে গঠিত। ‘ভুতুরে’ কোয়ান্টাম প্রভাবের জটিল অবস্থার ফলে তথ্যকে অতি ক্ষুদ্র মাত্রায় প্রকাশ করে। প্রত্যেক qubits 0, 1 অথবা এই দুইয়ের মাঝের ‘superposition’ অবস্থাকে গ্রহণ করে থাকে। তাই qubits কোন প্রদত্ত মুহুর্তে শুধুমাত্র 1 অথবা 0 বিট না হয়ে একই সময়ে এর সবকিছুই হতে পারে। এর মানে এরা একযোগে যে কোন গণনার কাজ সম্পন্ন করতে পারে।

কোয়ান্টাম কম্পিউটার প্রসঙ্গে গুগলের দাবি, তাদের D-Wave 2X ‘কোয়ান্টাম কম্পিউটার’ আপনার ল্যাপটপের তুলনায় ১০০ মিলিয়ন গুণ দ্রুততর, যদিও সর্বসম্মতভাবে এটা নাকি একটি সঠিক কোয়ান্টাম কম্পিউটারই নয়। একটি প্রকৃত কোয়ান্টাম কম্পিউটার এর চেয়েও বেশী তথ্য রূপান্তরে ভূমিকা রাখে।

বিশ্বজুড়েই একটি পাঠ্য ও ব্যবহারিক প্রথম কোন কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরী করার প্রতিযোগিতা চলছে তবে এ কাজটি এখনও ধীর গতিতে এগুচ্ছে। কারণ এমন এক অদ্ভুত প্রভাবকে কাজে লাগানো খুব একটা সহজ কাজ নয়। এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা সবচেয়ে বেশী ১০ বা ১৫ qubits এর যন্ত্র তৈরী করতে সক্ষম হলেও এগুলো কেউ ব্যবহার করতে পারেনি।

হেসটিংস এবং তাঁর দল বলেন, ব্যবহারিক কোয়ান্টামের উন্নতিতে যে সব চ্যালেঞ্জ ছিলো তাদের নতুন এই প্রতিলিপির মাধ্যমে বিদ্যমান প্রযুক্তির সে সকল বাধা অতিক্রম করা সহজ হবে। গবেষণাগারের বাইরে বৃহদায়তন কোয়ান্টাম কম্পিউটার প্রতিষ্ঠার পথ খুঁজে পাওয়া যাবে।

পদ্ধতিটি হচ্ছে চৌম্বকীয় ক্ষেত্রে আয়ন (পরমাণুর চার্জ) কে qubits আকারে আবদ্ধ করে ব্যবহার করা হবে এবং সহনীয় আকারের মডিউলে এসব হাজার হাজার বর্গাকার পরিচালনা পদ্ধতিতে উপস্থিত থাকবে। এর মানে হচ্ছে এই বর্গাকার মডিউলগুলো বিনিময় করা যাবে যা কিনা প্রতিস্থাপন কিংবা যোগ করা যাবে। ফলে তাত্ত্বিকভাবে আপনি যত বড় ইচ্ছা তত বড় করে তৈরী করতে পারবেন।

প্রত্যেকটি মডিউলে ২,৫০০ এর মত আয়ন qubits থাকবে এবং চৌম্বক ক্ষেত্র তাদের বিভিন্ন হস্তক্ষেপ থেকে রক্ষা করবে এবং তাদের কোয়ান্টাম দশা সংরক্ষ্ণ করবে।

যখন কম্পিউটারটি চালু হয়ে যাবে তখন আয়ন গুলোর মাঝে পারষ্পরিক ক্রিয়ার মাধ্যমেই সমগ্র কার্যক্রম সঞ্চালিত হবে, মডুলার গ্রিড নাড়াচাড়ার পথ সুগম করার জন্য একে অপরের মাঝে আলতো বিনিময় সম্পাদনা করা হবে। ঠিক প্যাকম্যান আর যেমন তার গোলক ধাঁধার মাঝে এলোমেলো ভাবে পথ খুঁজে নেয়।

পূর্ববর্তী কোয়ান্টাম কম্পিউটারের নকশাতে ফাইবার অপটিকের সংযোগ ব্যবহার করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিলো কিন্তু এবারের প্রতিচিত্রতে এক মডিউল থেকে অন্য মডিউলে আয়ন পরিবহনের জন্য বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র ব্যবহার করা হয়েছে। গবেষক দলটি জানান এই পদ্ধতি তাদেরকে পৃথক পৃথক কোয়ান্টাম কম্পিউটিং মডিউলের মধ্যে ১ মিলিয়ন গুণ বেশী দ্রুত সংযোগ গতি দিতে সাহায্য করবে এবং সহনীয় তাপমাত্রায় কম্পিউটার পরিচালনার সুযোগ করে দেবে। বিকল্প নকশাগুলোর জন্য অতিপরিবাহী উপকরণ প্রয়োজন পড়বে অতিরিক্ত তাপমাত্রা ঠান্ডা করার জন্য।

দলটি আরও একটি উন্নতি সাধনের দাবি করেছে, তা হচ্ছে এবার তারা আয়ন qubits কে জায়গামত রাখার জন্য পৃথক লেজার ব্যবহার করার পরিবর্তে সমগ্র কম্পিউটার সিস্টেমে অতিক্ষুদ্রতরঙ্গ(মাইক্রোওয়েভ) বিকিরণ ব্যবহার করছে।

রূপরেখাটি এখন সকল গবেষক দলের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে এবং তারা চাইলে একটি বৃহদাকার কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরী করতে পারেন যা একটি ভবনকে পূর্ণ করতে পারবে।

হেস্টিংগার এবং তাঁর দল আশা করছে তাদের নিজস্ব সংস্করণ আর মাত্র দু বছর পরেই চলমান হবে।

অষ্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন পদার্থবীদ আন্দ্রে মরেলোর জিনি নিজস্ব একটি কোয়ান্টাম প্রযুক্তির তৈরী অরছে। সম্প্রতি নেচার কে জানান, “আমি মনে করি এটা বৈশিষ্ট্যপূর্ণ গবেষণাপত্র এবং এটা যে কোন সম্প্রদায়কে প্রভাবশালী ও বহু বছর অগ্রগামী করে তুলবে।” [সাইন্সএলার্ট- অবলম্বনে]

-শফিকুল ইসলাম

Exit mobile version