বিজ্ঞান পত্রিকা

আম্বরে আবদ্ধ এলিয়েন-সাদৃশ এক নতুন পতঙ্গের সন্ধান!!

গবেষকগণ ১০০ মিলিয়ন বছর পুরোনো দুটি পতঙ্গের সন্ধান পেয়েছেন যা আম্বরের মাঝে আটকা পড়েছিলো। আর আবিষ্কৃত এই পতঙ্গগুলো একটি নতুন প্রজাতির প্রতিনিধিত্ব করছে বলে তারা জানিয়েছেন।

একটি সম্পূর্ণ নতুন প্রজাতির পতঙ্গ খুঁজে পাওয়া অত্যন্ত বিরল ঘটনা এবং এর মাধ্যমেই আমাদের পরিচিত বর্গের সংখ্যা ৩২ টিতে পৌছালো।

এথিওকেরিনোডিয়া বারমানিকাস (Aethiocarenus burmanicus) হিসেবে পরিচিত এই পতঙ্গটির কল্পিত এলিয়েনের মতো চোখ রয়েছে, একটি ত্রিকোণ মাথা, একটি দীর্ঘ ও সমতল শরীর এবং সরু পা রয়েছে। এর অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট্যই পতঙ্গটিকে স্বতন্ত্র প্রজাতির জন্য বিশেষায়িত করেছে যার জন্য গবেষক দল একে এথিওকেরিনোডিয়ায় নামকরণ করেছে।

অরিগন স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে জর্জ পইনার জুনিয়র এবং গবেষক দলের একজন সদস্য বলেছেন, “এই পতঙ্গটির এমন সব বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা আমাদের পরচিত প্রজাতির মাঝে নেই। আমি এর আগে এমন বৈশিষ্ট্য আগে কখনোও দেখিনি। এসব কারনেই মূলত একে একটি নতুন বর্গের অন্তর্গত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।”

সদ্য পাওয়া এই পতঙ্গটির একটি অদ্ভূত বিষয় হচ্ছে এর চোখ দুটি একদম বাইরের দিকে যার মাধ্যমে এটা সরাসরি এর পেছনের দিকে তাকাতে সক্ষম হতো। এছাড়াও এর ঘাড়ের উপর একটি বিশেষ গ্রন্থি রয়েছে যা ইঙ্গিত করছে এটি এর সম্ভাব্য শিকারীর দিকে রাসায়নিক নির্গত করতো।

দলটি বলেছে, “এ জীবাশ্মের বৈশিষ্ট্যের মধ্যে আরো রয়েছে দীর্ঘ সংকীর্ণ সমতল দেহ, লম্বা সরু পা বিশেষত পেছনের জোড়া যা এর পেটের দৈর্ঘের দ্বিগুণ, পাখার স্বল্প দৈর্ঘ্য, বহির্গামী চক্ষু যুগল, ঘাড়ের উপর অদ্ভূত গ্রন্থি এবং ফোলা পেট।”

পতঙ্গটির ঘাড়ের গ্রন্থি

দলটি আম্বরের নমুনা দেখে বলেছে সম্ভবত এটি প্রায় ১০০ মিলিয়ন বছর আগে প্রাচীন বার্মার একটি বিলুপ্ত প্রজাতি অমনিভোর এর রূপ। এর বিলুপ্তিটা আকস্মিক ছিলো এবং এর কারণ এখনো একটি রহস্য হয়ে রয়ে গিয়েছে।

যখন এটি জীবিত ছিলো তখন এই পতঙ্গটি বেশিরভাগ সময়ই গাছে থেকে গাছে দ্রুত বেগে ছুটে চলতো। যেখানে সে সম্ভবত ছত্রাক, ক্ষুদ্র কীট বিশেষ এবং কৃমি খেয়ে থাকতো।

পইনার জুনিয়র আরও বলেছেন, “এই পতঙ্গটির আরও একটি বিশেষত্ব হচ্ছে এর মাথা দেখতে অনেকটা এলিয়েনদের চিত্রায়িত করা মাথার মতোই। দীর্ঘ ঘাড়ের সাথে বড় বড় চোখ, অদ্ভূত আয়তাকার মাথা দেখে আমি ভেবেছিলাম এটা অতিপ্রাকৃতিক বুদ্ধি সম্পন্ন প্রাণী যা একটি পতঙ্গের মুখোশ পড়ে রয়েছে।”

সাম্প্রতিক আবিষ্কারটির আগে আগে বিজ্ঞানীরা প্রায় ১ মিলিয়ন পতঙ্গ বিভিন্ন বর্গে প্রায় ৩১ টি ভাগে বিভক্ত করেছিলো। সবচেয়ে বড় পর্ব কোলেওপেট্রা যেখানে গুবরে পোকাসহ হাজার হাজার পরিচিত প্রজাতি অন্তর্ভূক্ত।

নতুন এই পতঙ্গকে সম্পূর্ণভাবে জানতে বিজ্ঞানীদের আরও গবেষনার প্রয়োজন রয়েছে। যেমন এরা কতদিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতো, কি কারণে এদের বিলুপ্তি হয়েছে এবং এই নতুন পর্বে কি আরও অন্য কোন প্রজাতি রয়েছে কিনা।                [সাইন্সএলার্ট- অবলম্বনে]

শফিকুল ইসলাম

Exit mobile version