বিজ্ঞান পত্রিকা

আড়াইশ’ বছরের প্রচলিত জ্ঞানের বিরোধিতাকারী নতুন অাণবিক কাঠামোয় পরমাণু বর্জ্য অপসারণ

বিজ্ঞানীরা রসায়নের আড়াইশ’ বছর ধরে চলে আসা সূত্রের বিরোধীতাকারী একটি নতুন আণবিক কাঠামো আবিষ্কার করেছেন। সম্প্রতি জার্মানীর প্রসিদ্ধ জার্নাল Angewandte Chemie International Edition এই সংক্রান্ত গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়। এতে একধরনের সুপ্রামলিকুলের (বা অতিঅণু) বর্ণনা করা হয়েছে যা তৈরি হয়ে দুটি ঋনাত্বকভাবে চার্জিত বাইসালফেট অণুর বন্ধনের মাধ্যমে। এতদিন আমরা জানতাম কেবল ধনাত্মক এবং ঋনাত্মক আধানের মধ্যেই রাসায়নিক বন্ধক গঠিত হয়। দুটি ঋনাত্মক আধানের মধ্যে বন্ধন গঠিত হওয়ার নজির এই প্রথম।

কেবলমাত্র সম্প্রতিক সময়েই বিজ্ঞানীরা এই ধরনের অণু গঠিত হওয়া সম্ভব এই ব্যাপারে একমত হতে পেরেছেন। এর আগে বিষয়টি বিজ্ঞানীদের মধ্যে অত্যন্ত বিতর্কিত ছিলো। গবেষণাপত্রটির প্রধান লেখক, ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক আমার ফ্লাড এই বিষয়ে বলেন, ” অ্যানায়ন-অ্যানায়ন বাইসালফেটের মধ্য দ্বি-অণু গঠনের এই ঘটনা প্রচলিত কুলম্বের সূত্রের বিরোধিতাকারী। আমাদের ধারনা অণুযায়ী দীর্ঘ পাল্লায় বিকর্ষণ সৃষ্টিকারী এই দ্বি-অণুর গঠন সম্ভব হয়েছে স্বল্প পাল্লার পারস্পরিক আকর্ষণের কারণে। ”

পরমাণু বর্জ্য অপসারণে সম্ভাবনা:
নতুন এই সুপ্রামলিকুল বা অতিঅণু তৈরি হয়েছে বাইসালফেট সায়ানোস্টার অণুর সম্মিলনে। সুপ্রামলিকুল সেই সব অণুকে বলা হয়, যেখানে অনেকগুলো ছোট ছোট অণু একত্রে বন্ধন গঠন করে একটি বড় অণু তৈরি করে। আর সায়ানোস্টার অণু হলো তারকাকৃতির একধরনের অণু যেগুলো আমার ফ্লাডের গবেষক দল নিজেদের গবেষণাগারে তৈরি করেছেন।

২৫০ বছরের রসায়নের জ্ঞানের বিরোধিতাকারী এই অণুটি নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে যা ইতিপূর্বে ভাবা যায় নি। এটিকে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুল্লীর বর্জ্য অপসারণের সমাধান হিসেবে ভাবা হচ্ছে।

পরমাণু বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এবং প্রক্রিয়াজাতকরণে ক্ষতিকর যৌগসমূহকে কঠিন বস্তুতে পরিণতঃ করে অপসারণ করতে হয় যেন যেগুলো চুঁইয়ে গিয়ে দূষণ করতে না পারে। যখন এই বস্তুগুলো পানির প্রবাহের সাথে মিশে যায় তখন বিপুল শৈবাল উৎপাদনের বিস্ফোরণ তৈরি করতে পারে যা পানিতে বিষক্রিয়া ঘটায় এবং মাছের মৃত্যুর কারণ হয়।

কিন্তু নতুন এই অতি অণু পারমাণবিক বর্জ্যের সালফেট অপসারণ করতে পারবে এবং রাসায়নিক সারের মাধ্যমে উদ্ভুত পরিবেশের ক্ষতিকারক ফসফেট জাতীয় বস্তুও সরিয়ে নিতে পারবে। এর ফলে কার্যকরভাবে পরিবেশ দূষণ রোধ করা যাবে বলে আশা করা যায়।

-বিজ্ঞান পত্রিকা ডেস্ক

Exit mobile version