যীশুখৃষ্টের ‘দ্যা লাস্ট সাপার (The last supper)’ এ ১৩ জন লোক উপস্থিত ছিলেন। এই লাস্ট সাপারের পরিণতিতেই যীশুকে হত্যা করা হয়েছিল। সম্ভবত এই কারনেই পশ্চিমের দেশে ১৩ সংখ্যাটিকে অশুভ বলে মনে করা হয় । প্রায়ই সেসব দেশে ১৩ সংখ্যাটিকে উপেক্ষা করা হয়। বিল্ডিংয়ে ১২ তলার পর ১৩ তলা না দিয়ে ১৪ তলা দেয়া হয়। বাড়ির নম্বরের ক্ষেত্রেও ১২ এর পর ১৪ থাকে। মাসের ১৩ তারিখে অনেকেই বাড়ির বাইরে যেতে দ্বিধা বোধ করে। একই কথা বলা যায় শুক্রবার সম্পর্কে। সাপ্তাহের এই দিনটিকে অশুভ বলেই ধরা হয় কারন যীশুর হত্যার দিনটি ছিল শুক্রবার। যদি কোনো মাসের ১৩ তারিখে শুক্রবার পড়ে তাহলে সেই দিনটিতো অশুভেরও অশুভ!
তবে গণিতে এইসব শুভাশুভ সংস্কারের কোনো তাৎপর্য নেই। সাপ্তাহের অন্য দিনগুলো যেমন শুক্রবারও গণিতের কাছে একই রকম তাৎপর্য বহন করে। কিংবা মাসের ১৩ তারিখ হোক কিংবা ১৭ তারিখই হোক গণিতের কাছে সব তারিখই সমান। তাহলে ফ্রাইডে দ্যা থার্টিন্থ গণিতের সাথে যুক্ত হল কেমন করে?
গণিতের সাথে যুক্ত হওয়ার কারন হচ্ছে কোন মাসের ১৩ তারিখে শুক্রবার হওয়ার সম্ভবনা অন্যান্য বারের চেয়ে বেশী! অর্থাৎ অনন্য বারের চেয়ে ১৩ তারিখে শুক্রবার একটু বেশীই হয়। সেটা কিভাবে হয় এখন দেখা যাক।
গ্রেগারিয়ান ক্যালেন্ডারে একটা নির্দিষ্ট প্যাটার্ন অনুযায়ী অধিবর্ষ হয় এবং সেটা প্রতি চারশ বছর পর পর পুনরাবর্তিত হয়। অর্থাৎ প্রতি চারশ বছর পর পর দিন এবং তারিখ মিলে যায়। (উদাহরন: ২০১১ সালের জুন মাসের ১৮ তারিখে যে বার পড়বে ২০১৫ সালের জুন মাসের ১৮ তারিখও এই বার হবে)। কাজেই আমরা ৪০০ বছরের জন্য দিন এবং তারিখ হিসাব করলে সেটা পরবর্তী ৪০০ বছরের জন্যও কার্যকর হবে।
এখন ৪০০ বছরের মোট দিনের সংখ্যা হিসাব করা যাক।
পর পর ৪ বছরে মোট দিনের সংখ্যা= ৩ X ৩৬৫ + ৩৬৬ = ১৪৬১
তাহলে ৪০০ বছরে মোট দিনের সংখ্যা হবে =১০০ X ১৪৬১ = ১৪৬১০০।
কোন শতবর্ষ ৪০০ দিয়ে বিভাজ্য না হলে সেটাকে অধিবর্ষ ধরা হয় না। কাজেই উপরের ৪০০ বছরের মধ্যে কেবল একটি শতবর্ষই অধিবর্ষ হবে। সুতরাং, এই ৪০০ বছরের মধ্যে তিনটি শতবর্ষ থেকে ১ দিন করে কমিয়ে নিতে হবে। তাহলে ৪০০ বছরে মোট দিনের সংখ্যা = ১৪৬১০০-৩=১৪৬০৯৭
এই সংখ্যাটি ৭ দিয়ে নি:শেষে বিভাজ্য।
৪০০ বছরে মোট মাসের সংখ্যা ৪৮০০। প্রত্যেক মাসেই একটি ১৩ তারিখ আছে। তাহলে মোট ১৩ তারিখের সংখ্যা ৪৮০০ টি। এখন দেখা যাক ৪০০ বছরে ১৩ তারিখে সাপ্তাহের কোন দিন কতবার আসে।
দিন | ১৩ তারিখের সংখ্যা | শতকরা পরিমান |
রবি | ৬৮৭ | ১৪.৩১ |
সোম | ৬৮৫ | ১৪.২৭ |
মঙ্গল | ৬৮৫ | ১৪.২৭ |
বুধ | ৬৮৭ | ১৪.৩১ |
বৃহস্পতি | ৬৮৪ | ১৪.২৫ |
শুক্র | ৬৮৮ | ১৪.৩৩ |
শনি | ৬৮৪ | ১৪.২৫ |
বোঝাই যাচ্ছে ফ্রাইডে দ্যা থার্টন্হের সংখ্যা অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশী! এই ব্যপারটি প্রথম প্রমাণ ও প্রকাশ করেন B. H. Brown. কারো আগ্রহ থাকলে চোখ বোলাতে পারেন: American Mathematical Monthly, Vol. 40, 1933, 607.
-ইমতিয়াজ আহমেদ
সম্পাদক, বিজ্ঞান পত্রিকা
[লেখকের ফেসবুক প্রোফাইল]