ওমর খৈয়ামকে কবি হিসেবে আমরা মোটামুটি সবাই চিনি। কিন্তু তিনি যে একজন প্রখ্যাত গণিতবিদ এবং জোতির্বিদ ছিলেন সেই বিষয়ে আমাদের ধারনা আছে কি? এছাড়া তিনি একজন দার্শনিক হিসেবেও সুপরিচিত।
তিনি ১০৭০ সালে বিখ্যাত ও প্রভাবশালী বই Treatise on Demonstration of Problems of Algebra লেখেন যেটি ইউরোপে ব্যপকভাবে সমাদৃত হয় এবং বীজগণিতের একটি বড় দিক উন্মোচিত করে। এতে তিনি ত্রিঘাত সমীকরণসমূহের সমাধানের সাধারণ পদ্ধতি প্রতিপাদন করে দেখিয়েছেন। দ্বিপদী উপপাদ্যের বিস্তৃতি সংক্রান্ত প্যাসকেলের ত্রিভুজটিও তাঁর বইতেই প্রথম লিপিবদ্ধ হয় যা প্যাসকেলের আবির্ভাবের অনেক আগের কথা। তাঁর জন্মস্থান ইরানে এটি খৈয়াম-প্যাসকেল ত্রিভুজ নামেই পড়ানো হয়। খৈয়ামের গণিত বিষয়ক কাজের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো ইউক্লিডিয় জ্যামিতির আধুনিকায়ন যা পরবর্তীতে নন-ইউক্লীডিয় জ্যামিতির সূত্রপাত ঘটায় বলে মনে করা হয়। এসবের বাইরেও গণিতের বিভিন্ন শাখায় তাঁর আরো বিভিন্ন অবদান আছে।
জোতির্বিদ হিসেবেও খৈয়ামের অবদান অনস্বীকার্য। সুলতান জালাল আল-দীনের আমন্ত্রনে তিনি আরো কিছু জোতির্বিদের সহযোগে জালালী ক্যালেন্ডার প্রবর্তন করেন যা এখন পর্যন্ত প্রচলিত সবচেয়ে প্রাচীন এবং যথাযথ সৌর ক্যালেন্ডার। ৫০০ বছর পরে উদ্ভাবিত গ্রেগারিয়ান ক্যালেন্ডারের চেয়েও তাঁর উদ্ভাবিত ক্যালেন্ডার সঠিকভাবে বছর হিসেব করতে পারে। তিনি তাঁর ক্যালেন্ডারে ৩৩ বছরে আটটি লিপইয়ারের ব্যবস্থা রাখেন এবং সৌর বর্ষ ৩৬৫.২৪১৯৮৫৮১৫৬ দিন হিসেব করেন যা দশমিকের পর ছয় ঘর পর্যন্ত সঠিক। পৃথিবীর নিজ অক্ষের উপর ঘূর্ণনের বিষয়ে তিনিই প্রথম নক্ষত্রমন্ডলীর মডেলের মাধ্যমে সাক্ষ্যপ্রমান নিজের প্ল্যানেটারিয়ামে প্রদর্শন করে দেখান বলে বিভিন্ন স্থানে উল্লেখ আছে। জোতির্বিদ্যায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭০ সালে তাঁর নামে চাঁদের একটি ক্রেটারের নাম করা হয়। ১৯৮০ সালে তাঁর নামে একটি গৌণগ্রহের (minor planet) নাম করা হয়।
-বিজ্ঞান পত্রিকা ডেস্ক