বিজ্ঞান পত্রিকা

মৃতদেহ থেকে কেন রক্ত নেয়া হয় না

পৃথিবীতে রক্তের চাহিদার তুলনায় রক্তদাতার পরিমাণ কম। দুর্ঘটনা সহ অন্যান্য জরুরী মুহূর্তে রক্তের দরকার হয়। শুনতে খারাপ লাগলেও সত্য যে কৃত্রিমভাবে এখনো রক্ত বানানো যায় না। দান করা রক্তের পরিমাণ কম, তাহলে আমরা কেন মৃতদেহ থেকে রক্ত নিচ্ছি না? প্রতিনিয়তই তো মানুষ মারা যাচ্ছে, মরে যাওয়া মানুষদের তো রক্তের প্রয়োজনও নেই। মৃতদেহ থেকে রক্ত নিলে কি রক্তের স্বল্পতার একটা সমাধান হয়ে যায় না? অনেকেই তো মরণোত্তর চোখ, কিডনি সহ অন্যান্য অঙ্গ দান করে থাকেন, সেভাবে রক্তও কেন দান করা যাবে না? আসলে শুনতে সহজ মনে হলেও মৃতদেহ থেকে রক্ত সংগ্রহে কিছু জটিলতা আছে।

দেহের মৃত্যুর পর রক্ত দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। দেহের সক্রিয়তা বন্ধের সাথে সাথে দূষিত পদার্থ এসে রক্তে জমে। দূষিত পদার্থের মাঝে আছ কার্বন ডাই অক্সাইড, ল্যাকটিক এসিড সহ অন্যান্য বস্তু। জীবিত অবস্থায় এগুলো কিডনি ও ফুসফুসের মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত হয়। রক্তে ক্ষারের মাত্রা (pH) স্বাভাবিক অবস্থা থেকে পরিবর্তিত হয়ে যায়। রক্ত জমাট বেধে যায়। বিভিন্ন প্রাণঘাতী জীবাণু দ্রুত বংশবিস্তার করতে পারে। অবশ্য এটা নির্ভর করবে কোনো ব্যক্তি কোন অবস্থায় মারা গিয়েছে তার উপর। যেমন কেউ জীবাণুঘটিত কোনো রোগে মারা গেলে মৃত্যুর পর ঐ জীবাণু দ্রুত সমস্ত রক্তে ছেয়ে যেতে পারে। তখন দেহের আভ্যন্তরীণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা জীবাণু প্রতিরোধ ব্যবস্থাও সচল থাকে না।

মৃত্যুর পর রক্ত যেহেতু দ্রুত নষ্ট হয়ে যায় তাই মৃত্যুর সাথে সাথেই রক্ত সংগ্রহ করে নেয়া যেতে পারে। তাত্ত্বিকভাবে অতি দ্রুত রক্ত নিলে তা ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু এখানেও একটা কথা থেকে যাচ্ছে। দেহের অন্যান্য অঙ্গ, যেগুলো দান করার ক্ষেত্রে রক্তের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেগুলোকে ব্যবহার উপযোগী রাখতে হলে রক্তের উপস্থিতি প্রয়োজন। ঐ অঙ্গগুলো বের করে নেবার পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত রক্তের উপস্থিতি প্রয়োজন।

প্রশ্ন হতে পারে দেহের ঐ অঙ্গ কেন রক্তের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ? প্রথমত জীবিত মানুষেরা কোনো ক্ষতি ব্যতীত রক্ত দিতে পারলেও কিডনি, চোখ, ফুসফুস ইত্যাদি দিতে পারে না। জীবিত মানুষ যেহেতু রক্ত দিতে পারছে তাই মৃত মানুষের বেলায় রক্তকে ব্যবহার করে দুর্লভ অঙ্গগুলো সংগ্রহ করাই উত্তম। দ্বিতীয়ত রক্ত সময়ের সাথে সাথে তৈরি হয়। একজন মৃত মানুষের কাছ থেকে রক্ত পাওয়া যাবে মাত্র একবার, কিন্তু রক্ত দানের ব্যাপারে সচেতনতা তৈরি করে একজন জীবিত মানুষ থেকে প্রতি ৩/৪ মাস পর পর সারা জীবন রক্ত সংগ্রহ করা যাবে। সব দিক বিবেচনা করে মৃতদেহ থেকে রক্ত না নেয়াই উত্তম।

মৃত দেহের রক্ত নিয়ে জীবিত দেহে দানের প্রথম পরীক্ষাটি করা হয়েছিল কুকুরের উপর। ঐ পরীক্ষা থেকে দেখা গিয়েছিল মৃত দেহ থেকে ৬ ঘণ্টার ভেতর যদি রক্ত সংগ্রহ করে জীবিত দেহে প্রবেশ করানো হয় তাহলে ক্ষতিকর কিছু হয় না। সোভিয়েত রাশিয়ায় মানুষের বেলাতেও এই পরীক্ষাটি করা হয়েছিল। কিন্তু মানুষের বেলায় মৃতদেহ থেকে রক্ত নিয়ে জীবিত দেহে দেবার সমর্থন আমেরিকা সহ অন্যান্য দেশে এখনো নেই।

সিরাজাম মুনির শ্রাবণ

বিজ্ঞান পত্রিকা প্রকাশিত ভিডিওগুলো দেখতে পাবেন ইউটিউবে। লিংক:
১. টেলিভিশনঃ তখন ও এখন
২. স্পেস এক্সের মঙ্গলে মানব বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা

Exit mobile version