গবেষকরা এমন এক যন্ত্র উদ্ভাবন করেছেন যা একজন ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাসের রাসায়নিক গঠন বিশ্লেষণ করে ১৭ ধরনের রোগ নির্ণয় করতে পারবেন।
রোগ শনাক্ত করার জন্য বিজ্ঞানীরা রোগীর শ্বাসকে এবারই প্রথম ব্যবহার না করলেও একটিমাত্র যন্ত্র দিয়ে প্রথমবারের মতো পারকিনসন রোগ কিংবা কিডনি ক্যান্সারসহ বৃহৎ পরিসরে কয়েকটি রোগ সঠিকভাবে নির্ণয় করা যাবে।
টেকনিয়ন-ইসরাইল ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজির গবেষক দলের প্রধান হোসাম হাইক লিখেছেন, “প্রাচীন কাল থেকেই চিকিৎসকগণ তাঁদের রোগীদের উদ্বায়ী জৈব যৌগ (VOC) পর্যবেক্ষণ করার মাধ্যমে রোগ নির্ণয়ের অনুশীলন করতেন। চিকিৎসক মহল ছাড়াও অন্যান্যদের ধারণা এগুলো রোগের সাথে সম্পর্কযুক্ত। উদাহরণস্বরূপ, অভিজাত বংশীয় লোকের বাচ্চাদের মল-মূত্র নিয়মিত তাদের চিকিৎসকরা শুকে শুকে পরীক্ষা করতেন।”
কিন্তু গবেষক দলটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা এই প্রাচীন অনুশীলনকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবেন এবং সেই দিক চিন্তা করে তাঁরা একটি যন্ত্র তৈরী করেছেন যা বিভিন্ন রোগের ‘breathprint বা শ্বাসছাপ’ বিশ্লেষণ করতে পারবেন।
এটা অনেক কার্যকর কারণ, যখন আপনি শ্বাস ত্যাগ করেন তখন বিভিন্ন উপাদান বিশেষ করে নাইট্রোজেন, কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং অক্সিজেনসহ প্রায় ১০০ ধরনের রাসায়নিক উপাদানের একটি গুচ্ছ বেরিয়ে আসে।
VOC এর পরিমাণ এবং নির্দিষ্ট ধরণ মূলত নির্ভর করে একজন ব্যক্তি কেমন সুস্থ তার উপর। এর মানে এদের বিশ্লেষণ করে আপনি বিভিন্ন রোগ নির্ণয় করতে পারবেন। এছাড়াও গবেষক দলটির মতে নিঃশ্বাস বিশ্লেষণ করা দেহের অন্যান্য তরল বিশ্লেষণ করার চেয়ে সহজ।
যন্ত্রটি তৈরি করার আগে দলটি একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন অতিক্ষুদ্র বিন্যস্ত ও উচ্চমাত্রার বিশেষায়িত সেন্সর তৈরি করেন যা একজন ব্যক্তির শ্বাসকে সূক্ষাতিসূক্ষভাবে বিশ্লেষণ করতে পারে। যদি এদের মাঝে কোন একটি VOC-র সাথে মিলে যায় তবে তা সাধারণত রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী হয়ে থাকে।
এরপর তারা যন্ত্রটিকে একাধিক রোগীর মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন, যাদের মাঝে কয়েকজন স্বাস্থবান এবং কয়েকজনের রোগ ইতিমধ্যেই নির্ণয় করা হয়েছে। সর্বমোট ২৮০৮ শ্বাসের নমুনা থেকে মোট ১৭ ধরনের রোগ নির্ণয় করা হয়েছে যাদের মধ্যে তিনটি প্রধানতম হচ্ছে ক্যান্সার, প্রদাহমূলক এবং স্নায়বিক রোগ।
তাঁরা নিম্নোক্ত ১৭ টি রোগের প্রত্যেকটি খুঁজে পেয়েছেন যা ভিন্ন ভিন্ন ‘breathprint’ উৎপন্ন করে।
- ফুসফুসের ক্যান্সার
- কলোরেক্টাল ক্যান্সার
- মাথা এবং ঘাড় ক্যান্সার
- ওভারিয়ান ক্যান্সার
- মূত্রাশয় ক্যান্সার
- মূত্রথলির ক্যান্সার
- কিডনি ক্যান্সার
- গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার
- Crohn এর রোগ
- Ulcerative কোলাইটিস
- বিরক্তিকর পেটের সমস্যা
- ইডিওপ্যাথিক পারকিনসন
- এটিপিকাল পারকিনসনিজম
- একাধিক স্ক্লেরসিস
- পালমোনারি হাইপারটেনশন ধামনিক
- দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ।
গবেষণায় আরো দেখা গিয়েছে এই যন্ত্রটি একজন মানুষের একাধিক রোগ শনাক্ত করতে পারে যেমন একজন ব্যক্তি পূর্বে কোন টিউমারের উৎস থেকে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকলে বা অন্য কোন অবস্থায় পৌছালেও তা নির্ণয় করতে পারবে।
তবে গবেষকদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে এমন একটি বহনযোগ্য যন্ত্র তৈরী করা যা ভবিষ্যতে খুব সহযে এবং দ্রুততম সময়ে নির্ভুলভাবে রোগ নির্ণয় করতে পারে। [সাইন্সএলার্ট-অবলম্বনে]
-শফিকুল ইসলাম