বিজ্ঞান পত্রিকা

শরীরে বসবাসকারী ফিতাকৃমির ক্যান্সার হওয়ায় মারা গেলেন ব্যক্তি

ক্যান্সার হলে খুব দ্রুত এবং নিয়ন্ত্রনবহির্ভূত কোষ বিভাজনের মাধ্যমেসৃষ্ট জটিলতায় মানুষের মৃত্যু ঘটে। তবে কলম্বিয়ার এক ব্যক্তির ফুসফুসের টিউমারগুলো ছিলো অস্বাভাবিক। দ্রুত বর্ধনশীল এই টিউমারগুলো মানব কোষের নয় বরং তার শরীরে বসবাসরত ফিতাকৃমির।

গবেষকদের মতে মানব শরীরে বসবাসরত পরজীবী কোষের ক্যান্সার হেতু কোনো মানুষের অসুস্থ হয়ে পড়ার কাহিনী এই প্রথম। এই গবেষনার সাথে জড়িত প্যাথোলজিস্ট ড. অ্যাটিস মুয়েলেনবাখস বলেন, “আমরা বিস্মিত হয়েছিলাম যখন দেখেছি এই ব্যক্তির শরীরের ফিতাকৃমির ক্যান্সার হয়েছে এবং তা মানুষটির শরীরে সংক্রমিত হয়ে টিউমার তৈরি করেছে।”

আক্রান্ত ব্যক্তির এইচআইভি (HIV) ছিলো যা তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দিয়েছিলো। পরজীবির দেহে ক্যান্সার সৃষ্টিতে এই বিষয়টির ভুমিকা রয়েছে। যদিও এই ব্যক্তির ঘটনাটি বেশ বিরল, তবে গবেষকরা উল্লেখ করেন সারা পৃথিবীতে ফিতাকৃমি এবং এইচআইভির প্রাদুর্ভাবে লক্ষ লক্ষ মানুষ কষ্টভোগ করে। এই কারণে মুয়েলবাখস মনে করেন এধরনের আরো অনেক ঘটনার উপস্থিতি থাকা সম্ভব।

৪১ বছর বয়ষ্ক সেই ব্যক্তি শুরুতে জ্বর, কাশি এবং ওজনহ্রাস পাওয়ার লক্ষণে কলম্বিয়ার ডাক্তারদের শরনাপন্ন হয়েছিলেন। তিনি ১০ বছর আগেই এইচআইভি আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছিলেন কিন্তু তাঁর চিকিৎসা নিয়মিত চালিয়ে যান নি। সিটি স্ক্যানে তাঁর ফুসফুসে এবং লসিকা গ্রন্থিতে টিউমার ধরা পড়ে কিন্তু বায়োপসিতে টিউমারগুলোয় উদ্ভট কোষের উপস্থিতি পাওয়া যায় তাই ডাক্তারগণ সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের (CDC) শরনাপন্ন হন।

বেশ কিছু পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর গবেষকগণ তাঁর টিউমারে H. nana নামক একধরনের ফিতাকৃমির ডিএনএ শনাক্ত করেন। এই ফলাফল গবেষকদের কাছে বিশ্ময়কর মনে হয়েছে কেননা টিউমারের কোষগুলো ফিতাকৃমির দেহের কোনো কোষের সাথে মেলে না। কিন্তু আরো পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর নিশ্চিত হওয়া যায় এগুলো কৃমির দেহ থেকেই এসেছে।

গবেষকগণ অনুমান করেন যেহেতু লোকটির এইচআইভি ছিলো তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার দুর্বলতা হেতু ফিতাকৃমি শরীরে বংশবৃদ্ধি করেছে। ক্রমান্বয়ে কৃমির কোষে মিউটেশন তৈরি হয়েছে এবং সেখান থেকে ক্যান্সার কোষে পরিণত হয়েছে। টিউমারের কারণ হিসেবে ফিতাকৃমি শনাক্ত হওয়ার মাত্র ৭২ ঘন্টা আগে রোগীটি মৃত্যুবরণ করেন। H. nana মানুষের শরীরের সবচেয়ে সহজপ্রাপ্য ফিতাকৃমি যা যেকোনো সময়ে সারা পৃথিবীতে সাড়ে সাতকোটি মানুষ আক্রান্ত অবস্থায় থাকে।

যদি গবেষকগণ এধরণের আরো ঘটনা শনাক্ত করতে পারেন তবুও এর চিকিৎসা কি হবে তা অনিশ্চিত। গবেষকদের মতে ফিতাকৃমিনাশক ঔষধ প্রয়োগে ফিতাকৃমির ক্যান্সারকোষ নির্মুল না-ও হতে পারে। তবে মানুষের ক্যান্সার চিকিৎসা পদ্ধতি পরজীবির ক্যান্সারের ক্ষেত্রেও কার্যকর হতে পারে। গবেষণাটি সম্প্রতি New England Journal of Medicine এ প্রকাশিত হয়েছে।

⚫ বিজ্ঞানপত্রিকা ডেস্ক।

Exit mobile version