বিজ্ঞান পত্রিকা

মুদ্রায় বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞান

 

বাংলাদেশের মুদ্রাগুলোর জন্য আক্ষেপ হয়, বেচারাদের হাঁপ ছেড়ে বাঁচার যেন কোনো সুযোগ নেই। সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে টাকা তার রূপ বদলাতে বাধ্য হয়। ব্যাংক নোটের এই অবস্থা নিয়ে অনেকের মনেই একটা স্থায়ী অসন্তোষ কাজ করে।

নোটের ব্যাপারে একটা অনুকল্প হতে পারে এমন- নোটে বিজ্ঞানী ও গণিতবিদদের ছবি দেয়া উত্তম। হতে পারে সেটা বাঙ্গালি বিজ্ঞানী, তবে বিজ্ঞানী সে বাঙ্গালিই হতে হবে এমনটাও নয়। বিজ্ঞানীরা কোনো দেশের একার মানুষ নন, তাঁরা সমগ্র পৃথিবীর। একটা জাতিকে, সমাজকে, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যান বিজ্ঞানীরা। সকল সমস্যার সমাধান দেন বিজ্ঞানীরা। সুখ স্বচ্ছন্দে থাকার জন্য সবকিছুই করে দেন বিজ্ঞানীরা। অন্য সকল উন্নত উন্নত দেশগুলোতে দেশে বিজ্ঞানীদের কদর দেয়া হয় বলেই তারা উন্নত ও স্বচ্ছন্দপূর্ণ জীবন উপভোগ করতে পারে। তাদের টাকায়, প্রতীকে, আদর্শ লিপিতে সবকিছুতে বিজ্ঞানী আর গণিতবদ।

এই অংশে উদাহরণ হিসেবে কয়েকটি দেশের মুদ্রাতে বিজ্ঞানীদের ছবি সম্বলিত নোট দেখে নেই। তখন আবিষ্কার করব অনেক দেশেই মুদ্রাতে গণিতবিদ, বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট বিষয় বিবেচনা করেছে।

১. পরমাণু জগতের দুই সারথি। ডেনমার্কের ৫০০ ক্রোনারের নোটে নীলস বোর এবং নিউজিলেন্ডের ১০০ ডলারের নোটে আর্নেস্ট রাদারফোর্ড।

২. সুইজারল্যান্ড ও জার্মানির নোটে দুই গণিতবিদ। সুইজারল্যান্ডের নোটে স্থান পেয়েছেন লিউনার্ড অয়লার আর জার্মানির নোটে স্থান পেয়েছেন কার্ল ফ্রেডরিখ গাউস।

৩. দুই জীববিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েড ও চার্লস রবার্ট ডারউইন। ফ্রয়েড রয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার মুদ্রা শিলিং এ আর ডারউইন আছেন ব্রিটিশ পাউন্ডে।

৪. দুই রসায়নবিদ লুই পাস্তুর এবং লর্ড কেলভিনকে ব্যাংক নোটে অমর করে রেখেছে যথাক্রমে ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ড। ১০০ ব্রিটিশ পাউন্ডে কেলভিন আর ৫ ফ্রাঙ্কে পাস্তুর।

৫. পদার্থবিজ্ঞানী ও রসায়নবিদ মেরি কুরিকে খুঁজে পাওয়া যায় অনেক দেশের মুদ্রাতেই। নিচের দুটি মুদ্রার একটি ফ্রান্সের আরেকটি পোল্যান্ডের। ফ্রান্সের ৫০০ টাকার নোটে মেরি কুরির পাশাপাশি তাঁর স্বামী, আরেক বিজ্ঞানী পিয়েরে কুরিও আছেন।

৬. তড়িৎ বিজ্ঞানের নিকোলা টেসলার ছবি দিয়ে যুগোস্লাভিয়া অনেকগুলো নোট ছাপিয়েছে। ৫ দিনার হতে আরম্ভ করে ১০০০০০০০০০ দিনার পর্যন্ত অনেকগুলো নোটে টেসলার ছবি পাওয়া যায়।

শুধু যুগোস্লাভিয়াই নয় সার্বিয়া সহ অন্যান্য দেশের নোটেও টেসলার ছবি পাওয়া যায়। নিচের ছবিতে সার্বিয়ার ১০০ দিনার দেখা যাচ্ছে। এই নোটটাতে টেসলার ছবির পাশাপাশি তাঁর আবিষ্কার করা সূত্রের গাণিতিক রূপ স্থান পেয়েছে। নোটের অপর পিঠে চিন্তামগ্ন টেসলা এবং তাঁর কর্মের একটা কার্যকর প্রয়োগ ক্ষেত্রের ছবি জায়গা করে নিয়েছে। সবদিক থেকে এই নোটটা অসাধারণ হয়েছে।

দুই আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানী আইনস্টাইন ও শ্রোডিংগার স্থান পেয়েছে যথাক্রমে ইজরাইল ও অস্ট্রিয়ার মুদ্রাতে। ইজরাইলের ৫ ও অস্ট্রিয়ার ১০০০ টাকা মূল্যমানের নোটে। নোটে যেমন বিজ্ঞানীর ছবি ঠাই পেয়েছে তেমনই নোটের পরিবেশও বিজ্ঞানবান্ধব কিংবা বিজ্ঞানমনস্ক। আশেপাশের চিত্র লেখা রেখা সবকিছুতেই বিজ্ঞানের ছোঁয়া দেখতে পাওয়া যায়। দেখলে অল্পতেই বোঝা যায় কতটা আন্তরিকতা রয়েছে এই নোটগুলোর উপর।

বিজ্ঞানের বরপুত্র কোপার্নিকাস, কেপলার, গ্যালিলিওর ছবিও আছে নানান দেশের নোটে। কোপার্নিকাস আছেন পোল্যান্ডের নোটে আর গ্যালিলিও আছেন ইতালির নোটে।

আর বিজ্ঞানের ইতিহাসে চিরায়ত যাঁরা তাঁরাও বাদ যাবেন কেন? বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন না করে বিজ্ঞান বিষয়ক কিছু কথা বলেছিলেন কিন্তু বিজ্ঞানের শুরুটা তো তাঁরাই করেছিলেন। তাঁদের বেশিরভাগ মত আজ ভুল হতে পারে, তাদের কর্মপদ্ধতি সঠিক না হতে পারে কিন্তু তাঁরা ছিলেন সে হিসেবে বিজ্ঞানমনস্ক। শুরুর দিকের অবদানের জন্য তাঁরা স্মরণীয়। তাদের স্মরণ করে সম্মান দিয়েছে বেশ কয়েকটি দেশ। নিচের ছবিগুলোতে গ্রিসের ১০০ টাকার নোটে ডেমোক্রিটাস, ১০ টাকার নোটে এরিস্টটল এবং ইতালির ৫০০০০০০ টাকার নোটে প্লেটো শোভা পাচ্ছেন।

আমাদের দেশের মুদ্রাতেও বিজ্ঞানীদের ছবি দেয়া গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাংক নোটগুলোতে বিজ্ঞানী উদ্ভাবকদের ছবি দিলে দেশের মানুষের বিজ্ঞানীদের প্রতি একটা অন্যরকম সম্মান বোধ কাজ করবে সবসময়। বিজ্ঞানীদের আলাদা একটা গুরুত্ব বেরিয়ে আসবে। এতে করে একটা বিশেষ সম্মান জানানো হবে তাদের। ‘বিশেষ’ মানুষের বিশেষ সম্মান। যাঁদের ছবি জাতীয় নোটে থাকে তাঁরা নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ এবং পৃথিবীর অন্যতম সেরা ব্যক্তিত্ব। ছাত্রদের কেও কেও এ দেখে সংকল্প করে বসবে “আমি বিজ্ঞানী হবো।” আমি অবশ্য বলছি না যে সবাই বিজ্ঞানী হয়ে যাবে কিংবা সবাই বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে যাবে। নোটগুলোতে বিজ্ঞানীর ছবি ছাপালে যে তার সুন্দর একটা প্রভাব পড়বে সেটা অবশ্যই স্পষ্ট। তা দেখে ছাত্ররা বিজ্ঞানী হতে অনুপ্রাণিত হবে এটা কোনো দৈব বাণী নয় এটা সাধারণ গাণিতিক বাস্তবতা।

আমাদের ছেলেপিলেরা বিজ্ঞানী হোক, নানা আবিষ্কার-উদ্ভাবন করে বিশ্ব বিজ্ঞানে অবদান রাখুক সেটা আমরা সকলেই চাইবো। আমাদের দেশটা বিজ্ঞানে এগিয়ে যাক, পরের দেশের প্রযুক্তি উচ্চ মূল্যে কিনে আনার পরিবর্তে নিজেদের বানানো প্রযুক্তিতে নিশ্চয়ই আমরা চলতে চাইবো। আর তার জন্য দরকার ভাল একটা ভিত্তি। যে ভিত্তি হবে অনেক বিস্তৃত। আর সে বিস্তৃত ভিত্তির একটা হতে পারে এই নোটে, কয়েনে বিজ্ঞানীর ছবি কিংবা বিজ্ঞান বিষয়ক ছবি। টাকা জিনিসটা এমন একটা ব্যাপার যে এমন কোনো নাগরিক নেই যাকে কিনা টাকা ব্যবহার করতে হয় না।

এখন অনেকেই আমার উপর চড়াও হতে পারেন, চোখ রাঙিয়ে আসতে পারেন, আমি কেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে বাদ দিয়ে দিলাম? তিনি কি গুরুত্বপূর্ণ কেও নন? মুজিব কি অনুকরণীয় ব্যক্তি নন? আমি সবিনয়ে বলতে চাই, না বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিইনি। সুন্দর একটা দেশ প্রতিষ্ঠায় তাঁর অবদানের জন্য এবং মুক্তিযুদ্ধ সহ দেশের অনেকগুলো স্মরণীয় ইতিহাসে তার যে অবদান তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ছবিতে শেখ মুজিব অবশ্যই থাকতে পারে, সাথে সাথে বিজ্ঞানীর ছবিও থাকুক। আমার আক্ষেপটা হয়তো অনেকে ধরতে পেরেছেন। কখনোই যেন একচেটিয়াভাবে সকল নোটে একজনের ছবি না হয়। দুয়েকটা নোটে তাঁর ছবি থাকুক বাকিগুলোতে অন্যদের ছবি দেয়া হোক যারা দেশের জন্য অবদান রেখেছেন। যেমন হতে ভাষা শহীদেরা, বীরশ্রেষ্ঠরা। কিংবা হতে পারে মওলানা ভাসানী, তাজউদ্দীন আহমেদ প্রমুখ। শিক্ষাবিদ, কবি-সাহিত্যিকদের আলাদা গুরুত্ব দিতে হয়, একটা দেশে শিক্ষারই যদি কদর না হয় তাহলে শিক্ষায় দেশ ভাল করবে কি করে? ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, রবি ঠাকুর, নজরুল ইসলাম এঁরা আসতে পারেন। এই কথাগুলো ছিল সাধারণ মানুষের কথা, সাধারণ মানুষের দাবী। এখানে আমি আমার প্রস্তাবের কথা বলতে পারি।

আমি মনে করি মুদ্রায় ছবি দেবার ক্ষেত্রে এমন কারো ছবি দেয়া হোক যাঁদের অবদানে এগিয়ে গেছে সমগ্র বিশ্ব। তাঁদেরকেই বেশি পরিমাণ গুরুত্ব দেয়া হোক যাঁদের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। এই ক্ষেত্রে অবশ্যই সেটা হবে বিজ্ঞানীগণ। পৃথিবীর জন্য, সমগ্র মহাবিশ্বের জন্য বিজ্ঞানীগণ যা করেছেন তা কোনোদিনই কোনো ব্যক্তি করেননি। সেজন্য মুদ্রার ছবিতে বিজ্ঞানীদের প্রাধান্য দেয়া দরকার। এতে করে জাতির উন্নতি ত্বরান্বিত হবে, আর কমবে পক্ষপাতিত্ব ও দলীয়করণ। বাংলাদেশী ও বাঙালি বিজ্ঞানীদের মাঝে দেয়া যেতে পারে সত্যেন বসু, জামাল নজরুল ইসলাম, মেঘনাদ সাহা, কিংবা জগদীশ চন্দ্রের নাম। দেয়া যেতে পারে অমল কুমার, মাকসুদুল আলম সহ অন্যান্য বিজ্ঞানীদের নাম। আর সব ছবি বাংলাদেশের বিজ্ঞানীর দিতে হবে এমন তো আইন হতে পারে না। বিজ্ঞানীরা সকল দেশের সকল সকল জাতির। বিজ্ঞানের কোনো নিয়ম কোনো সূত্র বাংলাদেশে যেমন জার্মানেও তেমন। দেয়া যেতে পারে আইনস্টাইনের ছবি, এই ছবি দেখে ছাত্র-ছাত্রীরা আইনস্টাইনের মত উঁচু দরের বিজ্ঞানী হতে চাইবে। নিউটনই বা বাদ যাবে কেন? ছোটবেলার চাওয়া থেকেই তো শুরু। কি চাই, কি দরকার সেটাই যদি মাথায় না ঢোকানো যায় তাহলে কীভাবে হবে?

শুধু বিজ্ঞানীদের ছবিই যে হতে হবে এমন কথা নেই। বিজ্ঞান সম্পর্কিত কোনো বিশেষ চিত্র, ফিগার, স্মরণীয় মুহূর্ত, স্পট ইত্যাদি হতে পারে নোটের বিষয়বস্তু। তবে অবশ্যই এমন কিছু নির্বাচন করতে হবে যাতে করে সবার মনে এক ধরণের আগ্রহ জন্মে তাঁর প্রতি। বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর মাঝে হতে পারে ফুলারিন (বাকিবল), সার্কিট, নিউরন, মাইক্রোস্কোপ, মহাকাশ, নক্ষত্র, টেলিস্কোপ, লাইকা কুকুর, স্থাপত্য, ইলেকট্রনের কক্ষপথ, পৃথিবীর ঘূর্ণন, রকেট, নভোচারী, কম্পাস, গাণিতিক চিত্র ইত্যাদি। নিচের চিত্রটা তার উদাহরণ হতে পারে।

অথবা এমনও হতে পারে নোটের এক পিঠে কোনো এক বিজ্ঞানীর ছবি এবং আরেক পিঠে বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট কিছুর ছবি। বিজ্ঞান নির্ভর ছবিটা অন্য পিঠে থাকা বিজ্ঞানীর অবদান বা কর্ম থেকে হতে পারে কিংবা নাও হতে পারে। একেবারে ভিন্ন রকম চিত্রও দেয়া যেতে পারে। একই নোটে একাধিক বিজ্ঞানীও স্থান পেতে পারে। একই নোটে কয়েকজন বিজ্ঞানীর ছবি নির্বাচিত হতে পারে বিজ্ঞানীদের কর্মক্ষেত্র, অথবা তাদের ভাষা কিংবা দেশ অনুসারে।

নিচের চিত্রে বেলজিয়ামের ২০ টাকার নোট দেখানো হল। সেখানে বিজ্ঞানীর ছবি নেই কিন্তু এটি বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট ছবি। ছবিটি লৌহের একটি ক্রিস্টাল। ক্রিস্টালের গঠন একটি ঘনকের মতো এবং এর কেন্দ্রে একটি আয়ন আছে। একটি নির্দিষ্ট বিষয়কে অনুপ্রাণিত করতে ঐ দেশের নোটে আয়রনের ক্রিস্টালের ছবি ছাপা হয়।

এবার আরও কয়েকটি ছবি লক্ষ করি। উপরের দ্বিতীয় ছবিটি রোমানিয়ার ২০০০ টাকা মূল্যের নোট যেখানে একটি সূর্যগ্রহণকে চিত্রায়িত করা হয়েছে। পরেরটি ব্রিটিশ পাউন্ড। এই নোটে যুক্তরাষ্ট্রের স্পেস শাটল এবং প্রতীকীরূপে পৃথিবীকে তুলে ধরা হয়েছে।

শেষের নোটটি পাশের দেশ ভারতের। ১৯৭৫ সাল ভারত প্রথম স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে। স্যাটেলাইটের নাম রাখা হয় বিখ্যাত গণিতবিদ আর্যভটের নামানুসারে। আর্যভটকে সম্মান দিতে এবং প্রথম প্রয়াসটিকে স্মরণীয় করে রাখতে ভারত স্মারক মুদ্রা ছাপায়।

আমি এমনটা বলছি না যে কাজটা এখন থেকে শুরু করে দিলে চার-পাঁচ বছর পরই তার ফল পাবো। একজন ছাত্র বিজ্ঞানী হতে চাইলে সে চার-পাঁচ বছরে তা হতে পারবে না, সময় লাগবে অনেকটা। সে সময়টা পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। (সে ধৈর্য কি আর আমাদের নীতি নির্ধারণকারীদের আছ?) এতে যেহেতু কোনো সংক্ষিপ্ত পথ নেই তাই সময় বেশি লাগলেও এখনই শুরু করে দিতে হবে। শুরুই যদি না হয় তাহলে আর বাক্য কপচে লাভ কি? আমরা হয়তো ফলটা একটু পরে পাবো কিংবা ধীরে ধীরে পাবো, কিন্তু দেশের জন্য মহৎ কিছু চাইলে কাজটা এখন থেকে শুরু করে দিতে হবে। আমি হলপ করে বলতে পারি সকল নোটে একজন রাজনৈতিক ব্যক্তির ছবি যতোটা ভাল ফলাফল বয়ে আনবে তার চেয়ে শতগুণ ভাল ফলাফল আনবে বিজ্ঞানীদের ছবি দিলে।

শুধু নোটে নোটে বিজ্ঞানীদের ছবি থাকলেই যে দেশ বিজ্ঞানী দিয়ে ভরে যাবে তাও কিন্তু না। শুধু ছবি ছাপিয়ে তো আর সব হয়ে যাবে না। অন্যসকল ক্ষেত্রেও পুরোদমে চালিয়ে যেতে হবে বিজ্ঞানের কাজ। মূলত নোটের ছবি হবে বিজ্ঞানের উন্নয়নের অনেকগুলো কাজের মাঝে একটি। সকল ক্ষেত্রে এমনটা করলেই না দেশটা উন্নত হয়ে যাবে।

চিত্র: পাকিস্তানে শিশুদের পাঠ্যপুস্তকে পড়ানো হয় “এ ফর আলিফ, বি ফর বন্দুক”

সবশেষে অন্য একটা উদাহরণ দেখি। সমগ্র পৃথিবীতে পাকিস্তানে সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ আজ সবচেয়ে বেশি। অনেকগুলো ছোট ছোট ঘটনার সম্মিলিত ফলাফল হয়ে যেতে পারে বিশাল। পাকিস্তানে লেখাপড়ার শুরুতেই শেখানো হয় “এ ফর আলিফ, বি ফর বন্দুক।” (সূত্রঃ বিশ্বাসের ভাইরাস, অভিজিৎ রায়; জাগৃতি প্রকাশনী, ২০১৪) এরকম অনেকগুলো কারণের সমাবেশই বয়ে আনে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ। একদম শুরু থেকেই যদি এমন শিক্ষা দেয়া হয় তাহলে শিশু মন দাঙ্গা-হাঙ্গামাকে স্বাভাবিক মনে করবে না তো কি করবে? যদি এমন হতো এ ফর এটম, বি ফর ব্যাকটেরিয়া, সি ফর সেল, ডি ফর ডিএনএ, ই ফর আইনস্টাইন তাহলে কতই না ভাল হতো। অন্যান্য উন্নত দেশে কিন্তু এমন করেই বিজ্ঞান নির্ভর আদর্শ লিপি শেখানো হয়। মোদ্দা কথা হচ্ছে জাতির উন্নতি চাইলে, জাতির ভাল চাইলে সকল ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অনুপ্রবেশ চাই।

এতক্ষণ কথাগুলো বলে উলুবনে কতটা মুক্তা ছড়ানো হয়েছে কিনা তা জানি না। আমাদের দেশের ব্যবস্থার রন্ধ্রে রন্ধ্রে এতোটা জটিলতা যে আমার বক্তব্যের উপর কারো নজর পড়বে কিনা কিংবা পড়লেও গুরুত্ব পাবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান। তবে আমি আর হতাশ হচ্ছি না। এ নিয়ে আশা ছাড়ছি না। অচিরেই রাষ্ট্র ব্যবস্থা এমন হবে যারা বিজ্ঞানের সঠিক মূল্য বুঝতে পারবে। একটি রাষ্ট্রে বিজ্ঞানীর কতটা প্রয়োজন তা অনুধাবন করতে পারবে এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিবে।

ছবিসূত্র ও তথ্যঋণঃ

সিরাজাম মুনির শ্রাবণ
সহ-সম্পাদক, বিজ্ঞান ব্লগ
[লেখকের ফেসবুক প্রোফাইল]

Exit mobile version