যুক্তরাজ্যের নরফোকের এক সৌখিন ডুবুরি আবিষ্কার করলেন আদিম পরিবেশের সাক্ষীকে। ১০ হাজার বছর আগের বনের খোঁজ মিলল পানির নিচে।
ডন ওয়াটসন নামের ৪৫ বছর বয়সী মহিলা নরফোকের সৈকত থেকে প্রায় পৌনে তিনশ মিটার (৩০০ ইয়ার্ড) দূরে ডাইভিং করছিলেন। সমুদ্রের তীরে পানি উত্তাল থাকায় তিনি তীর থেকে দূরে গিয়েছিলেন। ২০ ফুট নিচ দিয়ে সাঁতার কাটতে গিয়ে সমুদ্রবক্ষে শাখাসহ গাছের গুঁড়ি দেখতে পেলেন। বার্তাসংস্থা রয়টার জানিয়েছে শাখাসহ সেটির দৈর্ঘ্য ২৬ ফুট। বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে মনে করছেন, সেটি ওক গাছ ছিল, প্রায় ১০,০০০ বছর আগে বেড়ে ওঠা প্রাগৈতিহাসিক যুগের বনের ধ্বংসাবশেষ। নরফোক ইংল্যান্ডের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় উপকূলবর্তী এলাকা।
বিশেষজ্ঞদের মতে এটি বরফযুগের সময়ের। পরবর্তীতে বরফের চাঁইগুলো গলতে শুরু করায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যেতে থাকে।
২০১৩ সালের শেষের দিকে বড় ধরনের এক উপকূলে আঘাত এনেছিল। ধারণা করা হচ্ছে সে সময় সমুদ্রতলদেশের বালির স্থানচ্যুতি ঘটেছে। আর এর ফলে গাছের গুঁড়ি বেড়িয়ে এসেছে। কর্নওয়াল এবং ওয়েলশ এলাকায় গত বছর এই কারণে প্রায় ৪,৫০০- ৬০০০ বছর পুরনো বনের অস্তিত্বের সন্ধান পাওয়া গেছে। সৈকতে গাছের গুঁড়ি জেগে গিয়েছিল।
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন নব্য আবিষ্কৃত বনটি একসময় ডগারল্যান্ড ভূখন্ডের উপরে ছিল। ডগারল্যান্ড নরফোক থেকেও পূর্বে বিচ্ছিন্ন দ্বীপপুঞ্জ। কিন্তু একটা সময় এটি বিচ্ছিন্ন ছিল না। রয়টার এর লেখকরা জানিয়েছেন, ডগারল্যান্ড এতটা বিস্তৃত ছিল যে শিকারী সংগ্রাহকরা একসময় পায়ে হেঁটে জার্মানীতে যেতে পারত, যেটিকে বলা হচ্ছে প্রাগৈতিহাসিক আটলান্টিস। বিবিসির সূত্রমতে ৮০০০ বছর আগে একটি সুনামীর আঘাতে ডগারল্যান্ড নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।
আশা করা হচ্ছে এই আবিষ্কার মেসোলিথিক যুগের মানুষ ও প্রাণীদের ব্যাপারে আরো তথ্য দিবে। মেসোলিথিক যুগ বলতে মধ্যপ্রস্তর যুগের কথা বোঝানো হয়। বিজ্ঞানীরা গাছের গুঁড়ির নিচেও ফসিল খুঁজে বের করবেন। এখন গাছের গুঁড়িগুলো বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণীর নিবাস হয়ে গিয়েছে। সেগুলো যেন প্রবালপ্রাচীরের মত আশ্রয়স্থান। একটা গাছের গুঁড়ি আসলে অনেক বড় জায়গার ও পরিবেশের ইঙ্গিত দিচ্ছে যা গবেষণার জন্য নতুন তথ্য পেতে সহায়তা করবে।
উচ্ছ্বসিত ওয়ালটন বলেন, “এটা আবিষ্কার করতে পারা অত্যন্ত আশ্চর্যজনক ব্যাপার একারণে যে হাজার বছর ধরে গাছগুলো লুকিয়ে আছে অনাবিষ্কৃত অবস্থায়। আপনি হয়ত কখনোই হঠাৎ একটা ডুবসাঁতার দিয়ে সমুদ্রের নিচে একটা জঙ্গল আবিষ্কার আশা করবেন না।”
⚫ শাহরিয়ার কবির পাভেল