গত বছর হেজ ফান্ডের ম্যানেজার মার্টিন স্ক্রেলি ডেরাপ্রিম ওষুধের প্রতিটি ট্যাবলেটের দাম ১৩.৫ ডলার থেকে ৭৫০ ডলার বাড়িয়ে রাতারাতি কুখ্যাত বনে যান। এই ওষুধটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অপরিহার্য ওষুধের তালিকাভুক্ত এবং এটি সাধারণত ম্যালেরিয়া, এইচআইভি, কেমোথেরাপির রোগী এবং গর্ভবতী মহিলাসহ অন্যান্য সংক্রমিত রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়।
সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই অস্ট্রেলিয়ার একদল স্কুলছাত্র তাদের রসায়ন গবেষণাগারে মাত্র ২০ ডলারে ৩.৭ গ্রাম ডেরাপ্রিমের সক্রিয় উপদান তৈরী করেছে। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্ক্রেলির কোম্পানির মূল্য হিসেবে এই পরিমান উপাদানের দাম দাঁড়ায় ৩৫ হাজার ডলার থেকে ১ লক্ষ ১০ হাজার ডলার। এই দৃষ্টকোণ থেকে, ছাত্রদের তৈরি প্রতিটি ট্যাবলেটে খরচ হয়েছে মাত্র ২ ডলার।
গত বছর সেপ্টেম্বরে ওষুধটির দাম বৃদ্ধির পর থেকেই সিডনি গ্রামার স্কুলের ছাত্ররা তাদের রসায়ন পাঠের অংশ হিসেবে ডেরাপ্রিমের সক্রিয় সংশ্লেষণ করার চেষ্টা করতে থাকে।
সতের বছর বয়ষ্ক অস্টিন ঝেঙ দি সিডনি মর্নিং হেরাল্ড কে বলে, “বাস্তব জীবনের সমস্যা নিয়ে কাজ করতে পারায় আমাদের উৎসাহ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।”
ইউনিভার্সিটি অব সিডিনির রসায়নবিদ এলিস উইলিয়ামসনের সাথে Open Source Malaria নামক একটি অনলাইন গবেষণা শেয়ারিং প্লাটফর্মের মাধ্যমে ছাত্ররা কাজ করেছে, যা ম্যালেরিয়া চিকিৎসার জন্য ওষুধ ও চিকিৎসা পদ্ধতি জনসাধারণের কাছে পৌছে দিয়ে থাকে।
বিগত ১২ মাস যাবত তারা এই ওষুধ তৈরীর একটি নিরাপদ পন্থা খুঁজলেও গত সপ্তাহে সফলভাবে সংশ্লেষিত ৩.৭ গ্রাম পাইরিমেথামাইন তৈরী করতে পেরেছে।
উইলিয়ামসন একটি বর্ণালীলেখ ব্যবহার করে এর বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করেছেন এবং দলটি তাদের ফলাফল রয়াল অস্ট্রেলিয়ান ইনস্টিটিউটে নিউ সাউথ ওয়েলস অর্গানিক কেমেস্ট্রি সিম্পোজিয়ামে উপস্থাপন করছেন।
উইলিয়ামসন দি সিডনি মর্নিং হেরাল্ড কে বলেন, “আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর বর্ণালীলেখগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। আর এটা ১ লক্ষ ১০ হাজার ডলারের চেয়েও অমূল্য।”
যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই ওষুধটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল তবে অষ্ট্রেলিয়াসহ অন্যান্য দেশে প্রতিটি ট্যাবলেট প্রায় ১ থেকে ২ ডলারে পাওয়া যাচ্ছে। এর কারণ যুক্তরাষ্ট্রে এটি বিশেষ সুবিধার বাইরে এবং টিউরিং ফার্মাসিউটিক্যালস লুপহোল নামক ‘closed distribution model‘ এর মাধ্যমে ওষুধটির বন্টন নিয়ন্ত্রণ করছে। এর মানে দাড়াচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে স্কুলছাত্রদের তৈরী এই ‘নতুন ওষুধ’ আমেরিকার খোলা বাজারে বিক্রি করতে হলে স্ক্রেলির পণ্যের সাথে পরীক্ষার মাধ্যমে তুলনা করতে হবে।
যদি স্ক্রেলি অন্য কাউকে তুলনা করার অনুমতি না দেন তবে, উৎপাদককে নতুন একটি ওষুধ তৈরী করতে হবে সম্পূর্ণ নতুন ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার মাধ্যমে, যার জন্য খরচ হবে কয়েক মিলিয়ন ডলার। এ জন্যই আমেরিকার কোন প্রতিদ্বন্দ্বী দেখা যায়না।
কিন্তু ছাত্রদের প্রধান উদ্দেশ্য ওষুধ বিক্রি করা নয়, এটা দেখানো যে টুরিং ফার্মাসিউটিক্যালস যে দামে বিক্রি করছে তার চেয়ে সস্তায় ওষুধটি তৈরী করা যায়।[সাইন্সএলার্ট অবলম্বনে]
-শফিকুল ইসলাম