ল্যাটিন Terra অর্থ পৃথিবী বা ভুমি বা মাটি। এখান থেকেই টেরাকোটা, টেরিস্ট্রিয়াল কিংবা টেরা ফর্মেশন (terraformation) শব্দগুলোর উৎপত্তি। বাংলায় টেরাফর্মেশন শব্দটির অর্থ করা যেতে পারে ‘পৃথিবীকরণ’। প্রাণধারণের অনুপযোগী কোনো গ্রহকে নানাবিধ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নিয়ে গিয়ে পৃথিবীর মতো পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে প্রাণ ধারণের তথা বসবাসের উপযোগীকরণের পদ্ধতিকেই টেরাফর্মিং বলা হয়।
উদাহরণ হিসেবে মঙ্গলের কথা আলোচনা করা যেতে পারে। মঙ্গলে পৃথিবীর মতো প্রাণের বিকাশের পরিবেশ নেই তা আমরা সবাই জানি। এর প্রাণের বিকাশের প্রধান অন্তরায়গুলো হলো নিন্মতাপমাত্রা, বায়ুমন্ডলের লঘু ঘনত্ব, অক্সিজেনের অভাব, পানির অভাব ইত্যাদি। যদি মঙ্গলকে টেরাফর্মিং করতে হয় তাহলে এই পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে হবে। গতশতাব্দীতে অনেকেই মঙ্গলের টেরাফর্মেশনের প্রক্রিয়া নিয়ে ভেবেছেন। প্রথমতঃ তাঁরা চিন্তা করেছিলেন মঙ্গলের জমাটবাঁধা কার্বনডাই-অক্সাইডকে আংশিকভাবে গ্যাসে পরিণত করা হবে যা গ্রীনহাউজ ইফেক্ট তৈরি করে তাপমাত্রা বৃদ্ধি করতে থাকবে এবং এরফলে আরো বেশী কার্বন-ডাই অক্সাইড নির্গত করবে। তারপর এতে প্লাংকটন জাতীয় জীব ছেড়ে দেওয়া হবে। এরা কার্বন-ডাই অক্সাইড শোষণ করে বৃদ্ধি পাবে এবং সালোকসংশ্লেষনের মাধ্যমে বায়ুতে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ করবে।
তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে মঙ্গলের শিলাস্তরে জমে থাকা পানি তরলীকৃত হয়ে ধীরে ধীরে প্রবাহিত হওয়া শুরু হবে এবং একপর্যায় মহাসাগরের সূচনা করবে। এই অবস্থায় অপেক্ষাকৃত বড় বড় উদ্ভিদ এবং কিছু কিছু প্রানীর জন্য বসবাস উপযোগী পরিবেশ তৈরি হবে। এই ধারায় যেতে যেতে একসময় পৃথিবীর মতোই পরিবেশ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে (চিত্র দ্রষ্টব্য)।
কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী গবেষকদের এধরনের পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে বসেছে। তাঁরা ধারনা করছেন মঙ্গলের একসময়কার ঘন বায়ুমন্ডল সৌরঝড়ের প্রভাবে উড়ে গেছে। যদি তা-ই হয় তাহলে মঙ্গলের বুকে জমে থাকা কার্বন-ডাই অক্সাইডের পরিমাণ খুবই কম যা নতুন করে বায়ুমন্ডল তৈরির জন্য যথেষ্ট হবে না (আগে ধারণা করা হয়েছিলো মঙ্গল শীতল হয়ে যাওয়ার এর কার্বনডাই-অক্সাইড শিলায়স্তরে জমা হয়েছে)। এবং মঙ্গলের দুই মেরুতে শুধু কার্বন-ডাই অক্সাইডই নয় বরং এর বিশাল অংশ বরফ হিসেবে সংরক্ষিত। মঙ্গলের নিজস্ব চৌম্বকক্ষেত্র নেই। পৃথিবীতে বায়ুমন্ডল টিকে আছে এর চৌম্বকক্ষেত্রের জন্য। চৌম্বকক্ষেত্র সৌরঝড়গুলোকে পৃথিবীর দুইমেরুতে আবদ্ধ করে ফেলে এবং যার ফলে বায়ুমন্ডল ঝড়ের কবলে পড়ে উড়ে যায় না।
-বিজ্ঞান পত্রিকা ডেস্ক