বিজ্ঞান পত্রিকা

ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে বুধ

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বুধ গ্রহে এক বৃহৎ উপত্যকা- আবিষ্কার করেছেন যা এই গ্রহের সংকোচন ঘটনার এক নতুন আলামত। অদ্ভুত এই ঘটনা নিয়ে বিজ্ঞানীদের মাঝে গত কয়েক দশক ধরে বিতর্ক চলে আসছে।

বিজ্ঞানীরা বলেছেন, নতুন পাওয়া এই উপত্যকাটি ৬২০ মাইল (১,০০০ কি.মি.) দীর্ঘ, ২৫০ মাইল (৪০০ কি.মি.) চওড়া এবং ২ মাইল(৩.২কি.মি.) গভীরতা একে অ্যারিজোনার বিখ্যাত গ্রান্ড ক্যানিয়ানের চেয়ে বড় এবং পূর্ব আফ্রিকার গ্রেট রিফট উপত্যকার চেয়ে গভীর করেছে।

পৃথিবীর ভূত্বক একাধিক টেকটনিক প্লেটের সমন্বয়ে সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু বুধের ভূত্বক একটি মাত্র টেকটনিক প্লেটে সৃষ্টি। এটা ক্রমেই ঠান্ডা হওয়ার কারণে ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে আসছে, ঠিক যেমন একটি আঙ্গুর শুকিয়ে কিসমিসে পরিণত হয়।

জিওগ্রাফিক্যাল বিসার্চ লেটারে প্রকাশিত গবেষণা পত্রের প্রধান লেখক টি. আর. অটার্স বুধের এই বৃহৎ উপত্যকা সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। অটার্স এবং তাঁর সহকর্মীরা মিলে মেসেঞ্জার (MESSENGER) মহাকশযানের তোলা এক ছবি থেকে এই উপত্যকা চিহ্নিত করেন। যা ২০১১ সালের মার্চ থেকে ২০১৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত গ্রহটির কক্ষপথে পরিভ্রমণ করেছিল।

প্রায় ৪.৬ বিলিয়ন বছর আগে গঠিত এই গ্রহের (এবং অন্যান্য গ্রহ) কেন্দ্র ধীরে ধীরে ঠান্ডা হতে শুরু করেছে এবং ফলাফল হিসেবে এটি সংকুচিত হয়ে চলেছে।

বিতর্ক মূলতঃ সংকোচনের পরিমান নিয়ে। নাসার মেরিনার ১০ মহাকাশযান ১৯৭০ এর মাঝমাঝি সময়ে বুধে পর্যবেক্ষনের উদ্দেশ্যে তিনবার ভ্রমণ করেছিল এবং ধারণা দিয়েছিল গ্রহটি গঠিত হওয়ার পর থেকে ১.২ থেকে ২.৫ মাইল (২ থেকে ৪ কি.মি.) পর্যন্ত সংকুচিত হচ্ছে। যা গবেষকদের মডেলের পূর্বাভাসের চেয়ে উল্লেখযোগ্যহারে কম।

কিন্তু MESSENGER বুধের অপেক্ষাকৃত ভালো দৃশ্য পেয়েছিল এবং এর নির্ভুল কাজ বিজ্ঞানীদের ৮.৭ মাইল (১৪ কি.মি.) সংকোচন নির্ধারণ করার ব্যাপারে সাহায্য করেছিল। আর এই অধিকতর সংকোচন পর্যবেক্ষণ তত্ত্বের সাথে মিলে গিয়েছিল।

নাসার কর্মকর্তারা জানান, দুটি বড় সমান্তরাল চড়াই বুধের বৃহৎ উপত্যকাকে আবদ্ধ করে রেখেছে। কিন্তু উপত্যকার অববাহিকা পার্শ্ববর্তী ভূখন্ডের নিচে রয়েছে। আর এতেই বুঝা যায় উপত্যকাটি ‘দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্য মিলন’ নামে আরেকটি পদ্ধতিতেও গঠিত হয়েছে। উপত্যকার অববাহিকার নিম্নগামীতা আশেপাশের পাথরের ঊর্ধগামিতাকেই নির্দেশ করে।

-শফিকুল ইসলাম

Exit mobile version