বিজ্ঞানীরা অতিপরিবাহিতা জাতীয় নতুন এক ধরণের বিদ্যুৎ প্রবাহ উৎপন্ন করেছেন। এটি অতিবিদ্যুৎ প্রবাহ হিসেবেও পরিচিত। এর অর্থ হচ্ছে এটি কোন মাধ্যম দিয়ে শক্তির খরচ না করেই প্রবাহিত হতে পারে এবং ইতিমধ্যেই গবেষকগণ এই অতি বিদ্যুৎ প্রবাহকে রেকর্ড ৬০০ ন্যানোমিটার দূরত্বে পাঠাতে সক্ষম হয়েছেন।
শুনতে তেমন আকর্ষণীয় মনে না হলেও এই প্রযুক্তিটি কিন্তু গবেষণাগারের বাইরে ব্যবহার করা যেতেই পারে। যেমন, শক্তির অপচয় না করে কোন হার্ড ড্রাইভের মধ্যে বিদ্যুৎ পৌছাতে এটি কার্যকর হবে।
এই নতুন অতি কারেন্ট তৈরী করা হয়েছে ইলেক্ট্রনের যুগল দিয়ে যেগুলো একই অভিমুখে ঘূর্ণায়মান। নেদারল্যান্ডের লেইডেন ইনস্টিটিউট অব ফিজিক্সের বিজ্ঞানীরা তারের তৈরী একটি ক্রোম ডাইঅক্সাইডে এই প্রবাহ চালাতে সক্ষম হয়েছেন।
ইলেক্ট্রনের এই ঘূর্ণনটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এখন পর্যন্ত গবেষকরা মনে করতেন যে, একই অভিমুখে ঘূর্ণায়মান ইলেক্ট্রনের যুগল দিয়ে অতি কারেন্ট উৎপন্ন করা সম্ভব নয়।
অতিপরিবাহিতা হচ্ছে একটি বিদ্যুৎ প্রবাহ যা কোন মাধ্যম দিয়ে কোন প্রকার প্রতিরোধ ছাড়াই প্রবাহিত হতে পারে। ১৯১১ সালে নোবেল বিজয়ী Heike Kamerlingh Onnes এটা প্রথম আবিষ্কার করেন। তখন থেকেই অতিপরিবাহিতা আধুনিক প্রযুক্তির এক গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যয়বহুল অংশ হয়ে রয়েছে। যার ব্যবহার MRI যন্ত্র থেকে শুরু করে চৌম্বকভাসন ট্রেন সবকিছুতেই হচ্ছে।
কিন্তু হতাশার ব্যপার হচ্ছে আমরা এখনও জানিনা কিভাবে এটি কাজ করে অথবা এটাকে কিভাবে আরও কর্মক্ষম করা যায়। এবং আমরা যদি বের করতে পারতাম অতিপরিবাহিতাকে কিভাবে একটি কক্ষের তাপমাত্রার কাছাকাছি কাজ করানো যায়, তাহলে এটাও প্রযুক্তির বিপ্লব হতে পারতো। সাথে পাওয়ার গ্রিডে প্রতিরোধের ফলে যে ৭ শতাংশ বিদ্যুৎ অপচয় হয় সেটাও বন্ধ করা যেত। ১৯১১ সাল থেকে অতিপরিবাহিতা সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমরা জেনেছি।
এই আবিষ্কারের ৫০ বছর পর গবেষকগণ আবিষ্কার করেন যে অতিপরিবাহিতায় ইলেক্ট্রন যুগলবন্দী হয়ে ঘূর্ণায়মান থাকে। সেই সাথে তাঁরা খুঁজে বের করেন অবশ্যই এটা অতি কারেন্টের জন্য প্রধান চাবিকাঠি হবে।
সবশেষ গবেষণায়, ডাচ দলটি ক্রোম ডাইঅক্সাইড ব্যবহার করেছেন। যা শুধুমাত্র একটি নিট ঘূর্ণনের সাথে বিদ্যুৎ প্রবাহকে উপস্থাপন করে। পরে তাঁরা একটি অতিপরিবাহী অবস্থায় (উপরের ছবির যন্ত্রটি ব্যবহার করে) নেয়ার জন্য ধাতুটিকে ঠান্ডা করে, ইলেক্ট্রন যুগলকে একই দিকে ঘূর্ণায়মান করে অতি কারেন্ট উৎপন্ন করতে সক্ষম হয়েছেন। এই নতুন প্রবাহ আশ্চর্যজনক শক্তিশালী ছিল যা প্রতি বর্গমিটারে ১ বিলিয়ন অ্যাম্পিয়ার প্রবাহ উৎপাদন করেছিল।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, “এটা চৌম্বককে টোকা দেয়ার মতো যথেষ্ট শক্তিশালী। সম্ভাব্য শক্তির ক্ষয় ছাড়া হার্ড ড্রাইভে সুবিধা পৌছে দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে এর।” এই ধরণের শক্তিশালী হার্ড ড্রাইভ স্পিনট্রনিক্স বা ইলেক্ট্রনের ঘূর্ণন বিদ্যার উপর ভিত্তি করে করা হবে।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এই নতুন ধরণের বিদ্যুৎ প্রবাহ ব্যবহার শুরু করার জন্য আরও বহু পথ যেতে হবে। কিন্তু আমাদের এখন জানতে হবে কিভাবে এই বিপরীত অতি কারেন্ট কাজ করে এবং ভবিষ্যতে এরা আরও কত শক্তিশালী হতে পারে।
-শফিকুল ইসলাম