মহাবিশ্ব সময়ের সাথে ত্রমশঃ উচ্চ গতিতে সম্প্রসারিত হচ্ছে এই পর্যবেক্ষণটিকে ব্যাখ্যা করার জন্য ডার্ক এনার্জির ধারনার অবতারণা করা হয়েছিলো। তবে সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দাবী করা হয় মহাবিশ্ব সম্ভবতঃ একটি ত্বরিত গতিতে সম্প্রসারিত হচ্ছে না এবং তাই ডার্ক এনার্জিরও কোনো অস্তিত্ব নেই।
তবে এটি এখন পর্যন্ত কেবলই একটি দাবী। ২০১১ সালে তিনজন বিশ্বতত্ত্ববিদ (Cosmologist) পৃথক পৃথকভাবে দূরবর্তী সুপারনোভাগুলো পৃথিবীর নিকটবর্তী সুপারনোভাগুলো হতে অপেক্ষাকৃত অধিক হারে দূরে সরে যাচ্ছে এবং যার ফলে বোঝা যায় এই মহাবিশ্ব ত্বরিত হারে সম্প্রসারিত হচ্ছে এই আবিষ্কারের জন্য নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন।
১৯৯০ এর দশকে প্রকাশিত এই গবেষণার ফলাফলগুলো খুব দৃঢ়ভাবে স্থানকালকে ছড়িয়ে দেওয়া একটি অদ্ভুতধরনের বলের উপস্থিতি নির্দেশ করে। যদি এধরনের কোনো বলের উপস্থিতি না থাকে তাহলে ১৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে বিগ ব্যাং এর মাধ্যমে সৃষ্ট একটি মহাবিশ্ব ত্বরিত হারে সম্প্রসারিত হতে পারে না। বরং সময়ের সাথে এটি ধীরে ধীরে গ্যালাক্সি, ব্ল্যাক হোল এবং অন্য যাবতীয় বস্তুর সামষ্টিক মহাকর্ষীয় বলে ক্রমশঃ সংকুচিত হয়ে আসার কথা।
এই অনুমাননির্ভর বলটিই ডার্ক একার্জী বা লুকোনো শক্তি হিসেবে পরিচিত কেননা জোতির্বিদগণ এই শক্তি সম্বন্ধে কোনো তথ্যই সংগ্রহ করতে পারেন নি।
তবে, গত ২১ অক্টোবর শুক্রবারে অনলাইনে আসা Scientific Reports জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে এই নোবেল বিজয়ী ফলাফলকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। ডেনমার্কের কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিলস বোর ইনস্টিটিউটের গবেষক এবং গবেষণাপত্রটির প্রধান লেখক জে.টি. নিয়েলসন এবং তাঁর সহাকারীবৃন্দ পুর্বের চেয়ে ভিন্ন একটি তাত্ত্বিক পরিকাঠামো ব্যবহার করে ৭৪০ টি সুপারনোভা বিশ্লেষণ করেছেন।
নতুন বিশ্লেষণে ডার্ক এনার্জি এবং মহাবিশ্ব সম্প্রসারণের সামান্যই আলামত পাওয়া গেছে।
ইংল্যান্ড অবস্থিত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এবং এই গবেষনার একজন সহ-গবেষক সুবির সরকার বলেন, “একটি সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্বের ব্যাপারে কেবলমাত্র ‘৩ সিগমা’ মানের আলামত পাওয়া গেছে, অথচ একটি মৌলিক গ্রহনযোগ্য কিছুর জন্য ‘৫ সিগমা’ মাত্রার আলামতের প্রয়োজন হয়। কাজেই হতেই পারে আমরা বিভ্রান্তিতে পড়েছি এবং ডার্ক এনার্জীর অস্তিত্ব আসলে অতিসরলীকৃত তাত্ত্বিক মডেলের ফসল যা প্রকৃত কোনো তথ্য সংগ্রহের অনেক আগে ১৯৩০ এর দশকে তৈরি করা হয়েছে।”
তবে সরকার স্বীকার করেন যে, তাঁদের নতুন ধারনা পদার্থবিদের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে আরো প্রচুর কাজ করতে হবে। এই ধারনাকে তাঁরা যথাযথই মনে করছেন যদিও অন্যান্য জোতির্বিদগণ অনেকেই এটিকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন না।
-বিজ্ঞান পত্রিকা ডেস্ক