প্রায় একশো বছরেরও আগে থেকে এটা জানা যে সূর্য তার অক্ষের সাথে কিছুটা হেলে থেকে ঘূর্ণন সম্পন্ন করে। পৃথিবী যেমন নিজের অক্ষের উপর প্রতি একদিনে একবার করে ঘূর্ণন সম্পন্ন করে তেমনই সূর্যও নিজের অক্ষের উপর ঘূর্ণন সম্পন্ন করে। তবে সূর্যের ঘূর্ণন ঠিক অক্ষ বরাবর হয় না, ৬ ডিগ্রি কোণে হেলে থেকে ঘুরে। ৬ ডিগ্রি হয়তো পরিমাণের দিক থেকে খুব একটা বেশি না, কিন্তু তারপরেও এই হেলে থাকা পৃথিবীর ঋতুবৈচিত্র্যের উপর প্রভাব ফেলে। তার উপর খুব ভারী একটি নক্ষত্র ঠিক কীসের প্রভাবে এমন হেলে থাকবে সেটাও বিজ্ঞানীদের জন্য একটা আগ্রহোদ্দীপক প্রশ্ন। উল্লেখ্য পৃথিবীও তার নিজের অক্ষের উপর কিছুটা হেলে থেকে ঘূর্ণন সম্পন্ন করে, এর ফলে শীত ও গ্রীষ্মের পালাবদল দেখতে পাই আমরা।
অন্যদিকে এই বছরের শুরুর দিকে নবম গ্রহের অস্তিত্বের সম্ভাবনার কথা জানানো হয় [নবম গ্রহ সম্বন্ধে জানতে পড়ুন এখানে এবং এখানে]। আবিষ্কারের ঘোষণা দেবার সাথে সাথে পৃথিবীর বিজ্ঞানপাড়ায় সাড়া পড়ে যায় এবং সৌরজগৎ তথা সূর্য-পরিবার নিয়ে বিজ্ঞানীদের আবারো ভাবনা চিন্তা বেড়ে যায়। এটি আবিষ্কারের পর সাত আট মাসে এই গ্রহ এবং এই গ্রহের সাথে সম্পর্কিত অনেক ক্ষেত্রে শত শত বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়।
সূর্যের হেলে থাকার এই সমস্যাটা অনেক দিন ধরেই বিজ্ঞানীদের ভাবাচ্ছিল। কনস্টানটিন ব্যাটিজিন নামে একজন বিজ্ঞানী ২০১২ সালের দিকে সূর্যের হেলে থাকার কারণ ব্যাখ্যায় একটি অনুকল্প (hypothesis) প্রদান করেছিলেন। তাঁর অনুকল্প অনুসারে সূর্য হেলে থাকার কারণ অন্য কোনো একটি নক্ষত্রের প্রভাব। প্রায় ক্ষেত্রেই দেখা যায় কোনো নক্ষত্র জন্মের সময় বাইনারি সিস্টেমে জন্ম নেয়। অর্থাৎ অধিকাংশ ক্ষেত্রে একসাথে দুটি নক্ষত্রের জন্ম হয়। পরবর্তীতে নানা রকম মহাজাগতিক ঘটনায় কিছু ক্ষেত্রে নক্ষত্রের জোড়া ভেঙে যায়। সূর্যও হয়তো এরকম বাইনারি অবস্থায় জন্ম নিয়েছিল এবং ঐ ভ্রাতৃ-নক্ষত্রটির শক্তিশালী মহাকর্ষীয় আকর্ষণের প্রভাবে সূর্য কিছুটা হেলে থেকে ঘূর্ণন সম্পন্ন করে।
ঘটনাক্রমে ২০১৬ সালের শুরুতে নতুন নবম গ্রহ আবিষ্কৃত হয় এবং ঐ বিজ্ঞানীর নজরে আসে। তখন তিনি তার আগে দেয়া অনুকল্পকে এই গ্রহের সাথে বাঁধেন। এই গ্রহের সাথে বেঁধে নেবার সুবিধা হচ্ছে, এই গ্রহের অস্তিত্ব সম্বন্ধে বিজ্ঞানীরা আস্থাশীল, অন্যদিকে সূর্যের ভ্রাতৃ-নক্ষত্রের অস্তিত্ব প্রমাণিত নয়। তার তত্ত্ব মতে সূর্যের হেলে থাকার পেছনের কারণ হিসেবে আছে এই গ্রহটি।
গ্রহটি পৃথিবী থেকে মাত্র ১০ গুণ বেশি ভারী, যেখানে বৃহস্পতি গ্রহ পৃথিবী থেকে ৩০০ গুণ বেশি ভারী। বৃহস্পতি এত ভারী হওয়া স্বত্বেও সূর্যের ঘূর্ণনে প্রভাব ফেলে না কিন্তু নতুন গ্রহটি স্বল্প ভারী হয়েও কীভাবে সূর্যের ঘূর্ণনে প্রভাব রাখে? এই প্রশ্নের উত্তরে জনাব কনস্টানটিন যা বললেন তা অনেকটা এরকম- নবম গ্রহটির কক্ষপথ অনেক দূরে অবস্থিত এবং অনেক বেশি বিস্তৃত। সূর্যকে যদি কেন্দ্র হিসেবে ধরে নেয়া হয় এবং কেন্দ্র থেকে অনেক দূরে যদি কোনো বস্তু যদি সূর্যের আকর্ষণে বাধা থাকে তাহলে ঐ বস্তুর ভর কম হলেও তার প্রভাব বেশি হবে। কীভাবে? ধরা যাক একটি দরজা, যা কবজাকে কেন্দ্র করে ঘুরে। কবজার কাছাকাছি অবস্থানে যদি খুব জোরেও বল প্রয়োগ করা হয় তাহলে তার ফলে দরজা এত বেশি দূরে সরে না। অন্যদিকে কেন্দ্র থেকে দূরে, অর্থাৎ দরজার প্রান্তভাগে অল্প বল দিয়ে ধাক্কা দিলেও সহজেই দরজা সরে যায়। বলের প্রয়োগক্ষেত্র যদি কেন্দ্র থেকে দূরে হয় তাহলে অল্প বল প্রয়োগেও তা অধিক পরিমাণ সরণ ঘটাতে পারে। [ Astronomy Magazine, ibtimes.co.uk অবলম্বনে]
– সিরাজাম মুনির শ্রাবণ
বিজ্ঞান পত্রিকা প্রকাশিত ভিডিওগুলো দেখতে পাবেন ইউটিউবে। লিংক:
১. টেলিভিশনঃ তখন ও এখন
২. স্পেস এক্সের মঙ্গলে মানব বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা
3. মাইক্রোস্কোপের নিচের দুনিয়া