বিজ্ঞান পত্রিকা

এমড্রাইভের সর্বশেষ স্বত্ত্ব সকলের জন্য উন্মুক্ত

এমড্রাইভ এক প্রকার রকেট ইঞ্জিন, যা কোন প্রকার জ্বালানী ছাড়াই বিদ্যুতের মাধ্যমে ধাক্কার সৃষ্টি করে।গত বছরের মে মাসেই নাসার গবেষকগণ জানিয়েছিলেন তাঁরা এমড্রাইভ প্রোটোটাইপের ১০ সপ্তাহের একটি পরীক্ষা সফল ভাবে সম্পন্ন করেছেন। আর দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় পর এর আবিষ্কারক গাইডো ফেট্টা তাঁর আবিষ্কারের নিজস্ব সংস্করণ মহাকাশে পরীক্ষা চালানোর অনুমতি পেয়েছেন।

আর এরই মধ্যে যুক্তরাজ্যের মেধাসত্ব অফিস বৃটিশ এমড্রাইভ উদ্ভাবক রজার শওয়ারের পক্ষে সর্বশেষ পেটেন্ট আবেদন প্রকাশ করেছেন।

শওয়ার বিজনেস টাইমকে বলেন, “পেটেন্ট প্রক্রিয়াটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা সাধারণ প্রাতিষ্ঠানিক পিয়ার রিভিউয়ের মতো নয় যেখানে একটি বেনামী পর্যালোচলনা লুকিয়ে রাখা হয়। এটার সবটাই সবার জন্য উন্মুক্ত।”

প্রথম বারের মতো ১৯৯৯ সালে শওয়ার এমড্রাইভ উদ্ভাবন করেন। যদিও পরীক্ষামূলক প্রমাণে বুঝা যাচ্ছিল এরকম ইঞ্জিন কাজ করতে পারে, তবুও বিজ্ঞানীরা এর সফলতা নিয়ে বিতর্ক করেছেন।

কেন? কারণ বিজ্ঞানের মৌলিক সূত্রগুলোর একটিকে এটি ভঙ্গ করেছে। আর সেটা হলো “প্রত্যেক ক্রিয়ার একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে।”

এমড্রাইভের প্রধান গঠন হচ্ছে, এটি ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গ ব্যবহার করে ‘জ্বলানী’ হিসেবে। যার মাধ্যমে মাইক্রোওয়েভ ফোটোন একটি মোচক আকৃতির ধাতুর বদ্ধ কক্ষে এক প্রকার ধাক্কা সৃষ্টি করে সামনের দিকে অগ্রসর হয়।

কিন্তু এখানে সমস্যাটা হচ্ছে, ‘একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া’। যার সাহায্যে সামনের দিকে অগ্রসর তা পরিচালনা করার জন্য পেছন থেকে ধাক্কার প্রয়োজন। আর এমড্রাইভের সে ধাক্কা বা নিষ্কাশন নেই।

নিউটনের তৃতীয় সূত্র মতে, কোন প্রকার নিষ্কাশন ছাড়া আপনি ধাক্কার সৃষ্টি করতে পারেন না। অথচ নাসার বিজ্ঞানী ও বিশ্বের অন্যান্য গবেষক দল পরীক্ষা করে দেখেছেন এমড্রাইভ শুধু ধাক্কাই সৃষ্টি করতে পারেনা, এটা তাত্ত্বিক ভাবে সমগ্র মহাকাশযানের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদন করতে সক্ষম।

যদি আমরা এমন একটি ইঞ্জিন দিয়ে মহাকাশযানের প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করতে পারি তাহলে এটা অত্যন্ত ব্যবহুল ও ভারী রকেট জ্বলানীর পরিবির্তে ব্যবহার করা সম্ভব হবে। যার মাধ্যমে সৌরজগতের যে কোন স্থানে ভ্রমণ করার মতো বাধা দূর করা যাবে।

নাসার ঈগলওয়ার্ক গবেষণাগারের গবেষক দলের প্রধান হ্যারোল্ট হোয়াইট বলেন, এমড্রাইভের একটি মহাকাশযান নভোচারীদের একটি দল নিয়ে মঙ্গল গ্রহে মাত্র ৭০ দিনে পৌছতে পারবে। যা নাসার বর্তমান প্রযুক্তি দ্বারা নির্দিষ্টকৃত সময়ের অর্ধেকেরও কম সময়।

যদিও শওয়ার এরকম একটি যন্ত্রের প্রস্তাব করেছিলেন প্রায় দুই দশক আগে। তবুও তিনি সবাইকে পেছনে ফেলার জন্য পেটেন্টের পর পেটেন্ট আবেদন করায় ব্যস্ত ছিলেন।

তাঁর সর্বশেষ পেটেন্টটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। যেখানে তিনি ধাক্কার নতুন নকশা বর্ণনা করেছেন। শওয়ার বলেন, “এটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ কারণ, এই জিনিশটি আপনি এখন অতি সহজেই তৈরী করতে পারবেন। আমরা চাই এটা হাজার হাজার তৈরী হোক।

নিচের চিত্রটিতে বিষয়বস্তুর সারমর্ম দেয়া আছেঃ নিয়ন্ত্রণ বর্তনী।

বিজনেস টাইমসের বরাত দিয়ে জানা গেছে, শওয়ার যুক্তরাজ্যের একটি মহাকাশ কোম্পানীর সঙ্গে তাঁর দ্বিতীয় প্রজন্মের এমড্রাইভ নিয়ে কাজ করছেন। যেখানে তিনি বলেছেন, যে পরিমাণ ধাক্কা নাসার গবেষক দল ও অন্যান্য গবেষকগণ গবেষণাগারে দেখেছিলেন এটি তার চেয়ে বেশী ধাক্কার সৃষ্টি করবে।

তাঁর উদ্ভাবনটি গবেষণাগার থেকে বের করে মহাকাশে নেয়া পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে এটা নিজ চোখে দেখার জন্য। যা উদ্যোক্তাকারীগণ সামনের মাসগুলোতে করতে চলেছেন।

আর এই সময়ের মধ্যেই আমরা আরেকটি মাইলফলক নথি পেতে যাচ্ছি আসছে ডিসেম্বারে কারণ, American Institute of Aeronautics and Astronautics (AIAA) নিশ্চিত করেছে এমড্রাইভের পিয়ার রিভিউ পেপার প্রকাশ করার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে।

-শফিকুল ইসলাম

Exit mobile version