বিজ্ঞান পত্রিকা

টাইফুন টারবাইন জাপানকে ৫০ বছরের বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে

“টাইফুন স্বাভাবিক বড় ধরণের প্রাকৃতিক দূর্যোগ” বলছিলেন আতশুশি শিমিজু । কিন্তু জাপানী এই প্রকৌশলীর কাছে এটাই সবচেয়ে বড় কোন বিষয় নয়। কারণ তিনি বিশ্বাস করেন প্রকৃতির এই হিংস্র শক্তিই জাপানের সবুজ শক্তি (গ্রীন এনার্জি) সমস্যার সমাধান করবে।

শিমিজু তাঁর বিশ্বাসকে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে উদ্ভাবন করেছেন বিশ্বের প্রথম টাইফুন টারবাইন। এটি দেখতে অনেকটা ডিম ভাঙ্গা যন্ত্রের আকৃতির এবং শক্তিশালী। যা শুধু অবিশ্বাস্য শক্তিশালী সাইক্লোন প্রতিরোধী হিসেবে ডিজাইন করা হয়নি সাথে সাথে এর শক্তিকেও জয় করে নেবে।

আটলান্টিক ওশেনোগ্রাফিক এবং আবহাওয়া ল্যাবরেটরির মতে, “পৃথিবীব্যাপী যে পরিমাণ বিদ্যুৎ শক্তির প্রয়োজন তার প্রায় অর্ধেক উৎপাদন করার মতো গতিশক্তি একটি পরিপক্ক টাইফুন তৈরী করে থাকে।”

চ্যালেন্জারীরর টাইফুন টারবাইন

শিমিজু বলেন, “একটি টাইফুন থেকে প্রাপ্ত শক্তি দিয়ে জাপানের ৫০ বছরের বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে।”

২০১১ সালের মার্চে ফুকুশিমায় পারমানবিক বিষ্ফোরনের পূর্ব পর্যন্ত পারমানবিক শক্তির মাধ্যমে ২১০০ সাল পর্যন্ত জাপানের প্রাথামক বিদ্যুৎ শক্তির ৬৬ ভাগ পূরণ করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু প্রলয়ংকরি সুনামি ও ভূমিকম্প যার জন্য ১৯ হাজার মানুষ নিহত হয় এবং তিনটি পারমানবিক প্রকল্প নষ্ট হওয়ার মাধ্যমে সব পরিকল্পনা ব্যহত হয়।

বর্তমানে জাপানের প্রয়োজনীয় শক্তির ৮৪% আমদানী করা হয় হয় এবং পারমানবিক চুল্লিগুলোও এখন অকেজে অবস্থায় রয়েছে কারণ সম্ভাব্য বিপর্যয়ের ঝুঁকির কারণে দেশটি এই শক্তির উৎস থেকে দূরে সরে এসেছে। বায়ু শক্তিকে কাজে লাগানোর প্রচেষ্টাও মূলত ব্যার্থ।

শিমিজু বলেন, “গত কয়েক দশক ধরে জাপান ইউরোপীয় ধাচে বায়ু টারবাইন তৈরী করেছে। কিন্তু এগুলোকে টাইফুন এলাকার জন্য ডিজাইন করা হয়নি এবং স্থাপন করার সময়েও এই পরিস্থিতির সতর্কতা বিবেচনায় আনা হয়নি। ফলে এগুলো প্রায় সম্পূর্ণ রূপেই ভেঙ্গে পড়েছে।”

বায়ুশক্তি বিশেষজ্ঞদের অনুসারে, ২০১৩ সালের উসাগি টাইফুনরে সময় হংহাইওয়ান বায়ু খামারের ৮ টি টারবাইন ধ্বসে পরেছে এবং আরো আটটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ফলে সৌরশক্তির উপর জাপানের সরকারের বিশেষভাবে দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছেন। যার ফলে শহরের বাড়িগুলোতে সৌর প্যানেল দেখাটা এখন বিরল কোন দৃশ্য নয়।

শিমিজু বলেন, “শক্তির প্রকার হিসেবে জানের সৌর শক্তির চেয়ে বহুগুণ বেশি বায়ু শক্তি রয়েছে এবং শুধু এটা ব্যবহার করা হচ্ছেনা।” দেশটি ২০১৬ সালেই ইতমধ্যেই ৬টি টাইফুনের মুখোমুখি হয়েছে।শিমুজির মতে বায়ুশক্তির দিক দিয়ে জাপানের মহাশক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

২০১৩ সালে শিমুজি তাঁর চাকরি ছেড়ে দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন সবুজ প্রযুক্তির ফার্ম চ্যালেন্জারি এবং একটি টাইফুন সহনীয় শক্তিশালী  টারবাইন উদ্ভাবনের জন্য অর্থায়ন পেয়ে যান।

শিমিজু এবং তাঁর দল প্রচলিত টারবাইনের নকশায় দুটি মৌলিক পরিবর্তন আনেন।প্রথমত, এটিকে তাঁরা জাপানের উদ্দেশ্যহীন বায়ুর ধরণ বিবেচনা করে একে উলম্ব অক্ষ বিশিষ্ট সর্বমুখী হিসেবে ডিজাইন করেন। এরপর ফুটবল খেলার প্যানাল্টি শটের মতো ঘূর্ণণ সৃষ্টির জন্য এতে ম্যাগনেস প্রভাব অন্তর্ভূক্ত করেন যাতে সোজা পথে আগত বলের জন্য বিচ্যুত হয়ে পাশের দিকে ঘূর্ণনের সৃষ্টি করে।

ম্যাগনেস প্রভাব টারবাইনের ফলকের (ব্লেড) উপর অভূতপূর্ব মাত্রায় নিয়ন্ত্রণ রাখতে সক্ষম হয়। কেন্দ্রের দন্ডটিকে শক্ত করার মাধ্যমে প্রকৌশলীরা ঝড়ের মাঝে ফলকের ঘুর্ণীর মাত্রা নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম হবেন। যখন ২০১৫ সালে দলটি তাঁদের আবিষ্কারের একটি মডেল পরীক্ষা করেন তখন এটি ৩০ ভাগ দক্ষতা অর্জন করেছিল। যন্ত্রচালিত বায়ু টারবাইন সাধারণত ৪০ ভাগ দক্ষতা অর্জন করতে পারে কিন্তু এগুলো শক্তিশালী টাইফুনের মুখে টিকে থাকতে পারেনা।

জুলাই মাসে ওকিনাওয়াতে প্রথম বারের মতো তাঁরা এর পরীক্ষামূল সংস্করণ স্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু এখন গবেষক দলটির এটিকে বাস্তবে টাইফুনের মুখোমুখি করে এর দক্ষতা পরীক্ষার প্রয়োজন ।

শিমিজু বলেন, “আমি আমাদের বায়ু বিদ্যুৎ জেনারেটরটি নতুন জাতীয় স্টেডিয়ামে স্থাপন করতে চাই। ২০২০ সালের টোকিয়ো অলিম্পিকের জন্য নির্মিত স্টেডিয়ামে এই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ পরিবর্তনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ।”

-শফিকুল ইসলাম

Exit mobile version