বিজ্ঞান পত্রিকা

চিনির অস্বাস্থ্যকর প্রভাব কম দেখানোর জন্য গবেষকদের ‘ঘুষ’ দিয়েছিল চিনি শিল্প!!

এটা এখন আর গোপন বিষয় নয় যে, খাদ্য শিল্পগুলো নিয়মিত বৈজ্ঞানিক গবেষণায় অর্থায়ণ করে থাকে আর এর ফলাফলগুলো সবসময় তাদের পক্ষেই যায়। চকোলেট কোম্পানি, সিরিয়াল প্রস্তুতকারক তথা প্রত্যেকের দ্বার ব্যবহৃত একটি সহজ এবং সহজ যুদ্ধ কৌশল যার মাধ্যমে তারা তাদের উদ্যেশ্য সকলের কাছে প্রকাশের পথ খুঁজে নেয়। কিন্তু সম্প্রতি আবিষ্কিৃত ৫০ বছর পুরোনো এক গবেষণাপত্র থেকে জানা যায় কিভাবে একটি চিনি শিল্প কয়েক দশক ধরে এমন কাজ অনুশীলন করে আসছে। এই প্রভাবশালী গবেষণা দেখাচ্ছে চিনি হৃদরোগের প্রবণতার প্রভাব কতটুকু হ্রাস করছে।

সানফ্রানসিষ্কো বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষক কর্তৃক প্রকাশিত নথিতে দেখা গিয়েছে ১৯৬০ সাল থেকে চিনি শিল্প কিভাবে হৃদরোগের উপর মিষ্টি জাতীয় দ্রব্যের প্রভাব বিষয়ক বাড়তে থাকা মতামতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আসছে। উপরন্তু চিনি গবেষণা সংস্থা (বর্তমানে চিনি সমিতি নামে পরিচিত) বিজ্ঞানীদের অর্থায়ন করছেন এ রোগের প্রধান কারণ যে চর্বি তা প্রমাণ করার জন্য।

বর্তমানে এই নথির একটি পর্যালোচনা JAMA Internal Medicine -এ প্রকাশ করা হয়েছে। এতে দেখা গিয়েছে, ১৯৬৭ সালে চিনি গবেষণা সংস্থা (SRF)-র অর্থায়নে সায়েন্টিফিক রিভিউতে স্বাস্থ্যের উপর চিনির প্রভাব খুঁজা হয়। হার্ভাডের প্রত্যেক বিজ্ঞানীকে ৫০ হাজার ডলার করে প্রদান করা হয় এটা প্রমাণ করার জন্য যে, হৃদরোগ গুলোর উপর চিনির থেকে চর্বির প্রভাব বেশি। ১৯৬২ সালে SRF নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে বৈজ্ঞানীক গবেষণাটি প্রকাশের আগে তারা এর ফলাফলের উপর প্রভাব বিস্তার করেছিল।

১৯৬৭ সালের নথি গুলো যখন বিস্তারিতভাবে পর্যালোচনা করা হচ্ছিল তখন দেখা যায়, গবেষণার জন্য গবেষকদের অর্থায়ন করেছিল ঐ SRF এর এবং তাদের একটি সংযোগ ছিল কোলেষ্টরেল কে হৃদরোগের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য। JAMA ইন্টারনাল মেডিসিন নিবন্ধনের ভাষ্য দিয়ে নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের  পুষ্টি ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ের একজন অধ্যাপক ম্যারিয়েন নেসলে লিখেছেন, এটি প্রমাণ করে যে এই গবেষণার উপর শিল্পটির বড় ধরনের প্রভাব ছিল।

নেসলে আরও লিখেন, “এই নথি সন্দেহ পোষণ করে যে, পূর্বনির্ধারিত একটি ফলাফলের উদ্দেশ্যে শিল্পটি নিজস্ব অর্থায়নে এমন গবেষণা পরিচালনা করে ছিলেন। তদন্তকারীরা জানতেন কি ছিল তাদের প্রত্যাশা ও কি তৈরী করেছিল।” নেসলে এখানেই থেমে নেই। তিনি আরও বলেন, এরকম কাজ প্রাচীনকালের ইতিহাস থেকেই চলে আসছে। “এটা কি আসলেই সত্যি যে, খাদ্য কোম্পানীগুলো পূর্ব থেকেই তাদের মতো করে গবেষণা ফলাফল তৈরী করে থাকে? হ্যাঁ এটাই সত্যি। এভাবেই অনুশীলন চলতে থাকছে।”

তাই পরবর্তী সময়ে আপনি যদি কোন খাদ্য কিংবা পুষ্টি সম্পর্কে স্বাস্থ্যের জন্য বড় ধরণের সুফলের কথা শুনে থাকেন তবে একটু সময় নিয়ে গবেষণার পেছনে কারা অর্থায়ণ করছে তার দিকে একটু গভীর দৃষ্টি প্রয়োগ করবেন।

-শফিকুল ইসলাম

Exit mobile version