সায়েন্স ফিকশন মুভি দেখে অনেকেরই মনে ধারনা হয়েছে নভোচারীদের বিশেষ পোশাক ছাড়া মহাশূন্যে গেলে মানুষ চাপহীনতার কারণে ফুলে ফেটে যাবে। কিন্তু পেছনে কোনো বৈজ্ঞানিক সত্যতা নেই।
প্রথমতঃ, পোষাক ছাড়া মহাশূন্যে গেলে শরীর বিস্ফোরিত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। যদিও শরীরের উপর বাহ্যিক প্রযুক্ত চাপ হবে শূন্য, কিন্তু মানুষের শরীর যেসব উপাদান দিয়ে গঠিত সেগুলো এতো শিথীল নয় যে চাপের প্রভাব ছাড়া শরীর ফুলতে থাকবে। তাছাড়া অনেকের যেমন ধারনা চাপহীন পরিবেশে শরীরের তরল ফুটতেও শুরু করবে না। বরং যেটা হবে তা হল, চাপহীন অবস্থায় রক্তে দ্রবীভুত নাইট্রোজেন দ্রবীভুত থাকবে পারবে না এবং নাইট্রোজেন গ্যাসের বুদবুদ তৈরি করবে। এর ফলে শরীরের ভিতরে রক্তচাপ বৃদ্ধি পাবে এবং সমগ্র শরীর বেশ খানিকটা ফুলে যাবে। এসময় স্বাভাবিকের চেয়ে শরীরের আয়তন দ্বিগুন হয়ে যেতে পারে তবে তা বিস্ফোরণের কারণ হবে না, কেননা আমাদের শরীরের চামড়া যথেষ্ট স্থিতিস্থাপক। এই উৎপন্ন নাইট্রোজেন শরীরের নানাবিধ টিস্যু ক্ষতিগ্রস্থ করবে তবে তা মানুষের মৃত্যুর কারণ হবে না। বরং তার আগেই অন্যান্য নানাবিধ সমস্যায় মৃত্যু ঘটবে।
বড় ধরনের সমস্যা হবে তাপমাত্রার কারণে। ভুপৃষ্ঠে আমরা খুবই আরামপ্রদ থাকলেও শূন্যস্থানের তাপমাত্রা হবে পরমশূন্য তাপমাত্রার কাছাকাছি। এমন তাপমাত্রার পার্থক্যের কারণে আমাদের শরীর থেকে খুব দ্রুত তাপ হারাতে থাকবে। তাপ পরিবাহিত হয় তিনটি উপায়ে। পরিবহন, পরিচলন ও বিকিরণ। মহাশূন্যে পরিবহন বা পরিচলন পদ্ধতিতে তাপ হারানোর সুযোগ নেই, কেননা এই পদ্ধতিতে তাপ প্রবাহে মাধ্যম প্রয়োজন হয়। তবে বিকিরণ পদ্ধতিতে তাপ হারাতে মাধ্যমের প্রয়োজন নেই। মানব শরীর থেকে প্রতিনিয়ত ১০০ ওয়াট করে তাপ শক্তি বিকিরিত হয় কিন্তু ভূ-পৃষ্ঠে আমরা কোনো সমস্যায় ভুগি না কারণ আমাদের চারপাশে উষ্ণ বায়ুর স্তর থাকে। মহাশূন্যে এধরনের তাপ নিরোধক নেই বলে তাপ হারানো বন্ধ করার সুযোগ থাকবে না ফলে মানুষ তাপ হারিয়ে জমে গিয়ে মৃত্যু বরণ করবে। তবে মানুষের শরীরের যে আকার তাতে ১০০ ওয়াট করে শক্তি হারানো খুব বড় কিছু নয় এবং জমে যাওয়ার আগে বেশ কিছু সময় অতিবাহীত হবে। তারা আগেই মানুষের মৃত্যুর অন্য কারণ ঘটবে।
যে প্রকৃত কারণে মানুষ মারা যাবে তা হচ্ছে অক্সিজেনের অভাব। মহাশূন্যে বায়ু নেই তাই অক্সিজেনও নেই। অক্সিজেন না থাকায় রক্ত অক্সিজেন থেকে বঞ্চিত হবে এবং স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় কাজে ব্যঘাত ঘটবে। অক্সিজেন গ্রহণ না করে মানুষ কয়েক মিনিটের বেশী বাঁচতে পারে না এবং অক্সিজেনের অভাব নানাভাবে পরিলক্ষিত হতে থাকবে। শুরু হবে মস্তিষ্ক দিয়ে।
অক্সিজেনের অভাব হওয়ায় আপনার মস্তিষ্ক শক্তি বাঁচানোর জন্য কাজ করা বন্ধ করে দেবে। মহাশূন্যে নির্গমনের ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে আপনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলবেন। তবে আপনি তখনো মৃত নন। যদি এক বা দুই মিনিটের মধ্যে আপনাকে উদ্ধার করা যায় তাহলে পুনরায় জ্ঞান ফিরে পেতে পারেন। তবে পূর্বোক্ত কিছু কারণে অবশ্য আপনার শরীর ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এর মধ্যে রয়েছে নাইট্রোজেনের বুদবুদ সৃষ্টি এবং সুর্যের মাত্রাতিরিক্ত ক্ষতিকর বিকিরণে আপনার শরীরের অনকাংশ পুড়ে যাবে। আর আপনার শরীর যদি দুই মিনিটের বেশী অক্সিজেন ছাড়া থাকে তাহলে শরীরের সব অঙ্গই অক্সিজেনের অভাবে ক্রিয়া বন্ধ করে দেবে এবং এই অবস্থায় আপনাকে মৃত বলা হবে।
আর আপনি যদি মহাশূন্যে নির্গমনের আগে বড় করে দম নিয়ে নেন তাহলে হিতে বিপরীত হবে। যেহেতু বাইরের চাপ থাকবে শূন্য, তাই আপনার দম নেওয়ার ফলে ফুসফুসে যে বাতাস আটকে থাকবে তা প্রচন্ড রকমের বহির্মূখী চাপ তৈরি করবে, যার ফলে আপনার ফুসফুস বিদীর্ন হয়ে যাবে। ডুবুরীরা অনেক সময় এধরনের সমস্যার মুখোমুখি হন যদি তাঁরা খুব দ্রুত গভীর পানি থেকে উপরে উঠে আসার চেষ্টা করেন।
-বিজ্ঞান পত্রিকা ডেস্ক