বিজ্ঞান পত্রিকা

পরমাণুর গহীন নিসর্গে | ৩: ইলেক্ট্রন | ৩.৬: তরঙ্গ এবং কণিকা

অধ্যায়-৩: ইলেক্ট্রন
অনুচ্ছেদ-৬: তরঙ্গ ও কণা
[বইয়ের সূচীপত্র তথা প্রকাশিত সবগুলো আর্টিকেলের জন্য এখানে দেখুন]

যদি আলো কোয়ান্টাম হিসেবে বিরাজিত থাকে এবং যদি প্রতিটি কোয়ান্টাম স্থানের মধ্য দিয়ে পৃথকভাবে গতিপ্রাপ্ত হয় তাহলে কোয়ান্টাম একটি কণার মতোই  আচরণ করে। সেই কারণে কোয়ান্টামকে কণাধর্মী একটি নামও প্রদান করা হয়। ইলেক্ট্রনের নামের সাথে মিল রেখে অধিকাংশ কণাই নামের শেষে ‘অন’ প্রাপ্ত হয় এবং এই বিবেচনায় ১৯২৮ সালে আমেরিকান পদার্থবিদ আর্থার হোলি কম্পটন (Arthur Holly Compton, ১৮৯২-১৯৬২) এই ধরনের একটি গতিময় কোয়ান্টামকে নাম দেন ‘ফোটন’ গ্রীক ভাষায় যার অর্থ হচ্ছে আলো।

এই নামকরণের বিষয়টি বেশ যুক্তিসঙ্গত ছিলো কেননা ১৯৯৩ সালে কম্পটন দেখালেন যে, বিকিরণ কণার মতোই  আচরণ করে; শুধু মাত্র পৃথক পৃথক ভাবে গতিময় হওয়ার জন্যই নয় বরং বিকিরণের সাথে কণার আচরণের মিল আছে বলেই। তরঙ্গদৈর্ঘ্য যত ক্ষুদ্র হয় তথা কোয়ান্টামের শক্তি যতো বেশী হয় ততোই যেন তারা তরঙ্গের চেয়ে কণাধর্মীতা বেশী প্রদর্শন করে।

কম্পটন এক্স রে কিভাবে ক্রিস্টালের মধ্য দিয়ে বিচ্ছুরিত হয় তা নিয়ে গবেষণা করলেন এবং দেখলেন যে, বিচ্ছুরণের প্রক্রিয়ায় এদের তরঙ্গদৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পায়। এর মানে হলো বিচ্ছুরণের সময় ক্রিস্টালের মধ্যে অবস্থিত ইলেক্ট্রনের মাধ্যমে এক্স রে’র কোয়ান্টামের শক্তি হ্রাস পায়। কম্পটন ভাবলেন এই প্রভাব প্রকৃতিগত, যেমন একটি বিলিয়ার্ড বল দ্বারা অপরটিকে আঘাত করা হলে প্রথমটি শক্তি হারায় এবং অপরটি শক্তি অর্জন করে। তিনি দেখলেন, তিনি যখন গাণিতিকভাবে এই বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করলেন তখন খুবই যথার্থভাবে তা ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে এবং এটি তাই প্রকৃত সত্য বলে তাঁর কাছে মনে হলো। এটিকে বর্তমান কম্পটন প্রভাব বলে ডাকা হয়।

এখান থেকে এই বিষয়টি বের হয়ে এলো যে, নিউটন এবং হাইগেনস উভয়েই আড়াইশ বছর আগে আংশিক ভাবে সত্যতা ধারণ করেছিলেন। আলো এমন কিছু নিয়ে গঠিত যা একই সাথে কণা এবং তরঙ্গ। বিষয়টি বিভ্রান্তিকর মনে হতে পারে। সাধারণ দৃশ্যমান জগতে তরঙ্গের অস্তিত্ব আছে, যেমন: পানির তরঙ্গ; আবার কণার অস্তিত্ব¡ও আছে, যেমন: বালির কণা এবং এই দুটি বিষয় নিয়ে দৃশ্যমান জগতে কোনো বিভ্রান্তি নেই। দৃশ্যমান জগতে দুটি পুরোপুরি পৃথক ব্যাপার,; তরঙ্গ হলো তরঙ্গ আর কণা হলো কণা।

সমস্যাটি হলো আলো আমাদের চারপাশের বিভিন্ন বস্তুর মতো নয় এবং তাই একটি সূত্র অনুযায়ী এদেরকে বিশেষ কোনো গোত্রে ফেলা যায় না। আলোকে যখন বিশেষ কোনো উপায়ে পর্যবেক্ষণ করা হয় তখন ব্যাতিচার প্রদর্শন করে যেমনটি পানির তরঙ্গ করে থাকে। অন্যভাবে, পর্যবেক্ষণ করলে আবার তারাই শক্তি স্থানান্তর প্রদর্শন করে যেমনটি করে থাকে বিলিয়ার্ডের বল পরস্পরের সাথে সংঘর্ষের মাধ্যমে। কোনো ধরনের পর্যবেক্ষণ না করলে আলোকে একই সাথে তরঙ্গ এবং কণা হিসেবে দেখা যেতে পারে। আপনি আলোকে যখন পর্যবেক্ষণ করবেন তখন শুধুমাত্র কণা অথবা তরঙ্গ হিসেবে পাবেন, একই সাথে দুটিকে পাবেন না।

এই বিষয়টি আসলে এতটা রহস্যমন্ডিত নয়। কল্পনা করুন আপনি একটি আইসক্রিমের কোণের দিকে তাকিয়ে আছেন। চওড়া অংশটি আছে উপরের দিকে এবং প্রান্তবিন্দুটি আছে নিচের দিকে। এবারে ভাবুন আপনি চওড়া প্রান্তটি বরাবর চোখ রেখে প্রান্তবিন্দুটি দেখার চেষ্টা করছেন। তাহলে আপনি প্রথমক্ষেত্রে কোণটিকে একটি ত্রিভুজের মতো এবং দ্বিতীয় ক্ষেত্রে একটি বৃত্তের এতো দেখতে পাবেন। একই সাথে ত্রিভুজ ও বৃত্তের এতো দেখা যাবে না।

আপনি হয়তো জিজ্ঞেস করতে পারেন কোণটির দ্বি-মাত্রিক আকৃতি আসলে কেমন? এই প্রশ্নের উত্তর হবে “এটি নির্ভর করে আপনি এর দিকে কীভাবে তাকাচ্ছেন তার উপর”। একই ভাবে আপনি হয়তো প্রশ্ন করতে পারেন, আলো কি সত্যিকারে একটি তরঙ্গ নাকি একটি কণা এবং এর উত্তরে আপনাকে বলতে হবে “এটি নির্ভর করে আপনি ঠিক কীভাবে একে পর্যবেক্ষণ করছেন”।

আইসক্রিমের কোণের দিকে আপনি অক্ষ বরাবর তাকালে বৃত্তাকার দেখতে পাবেন, আর পার্শ্ব বরারব তাকালে ত্রিভুজাকার দেখা যাবে। আইসক্রিম কোণের দ্বিমাত্রিক আকৃতি কেমন হবে তা নির্ভর করবে তাকানোর পদ্ধতির উপর।

আলোর কণা প্রকৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো এটি ইথার মাধ্যমের ধারণাকে অপ্রয়োজনীয় করে তুলেছিলো। এক শতাব্দী ব্যাপী বিজ্ঞানীদের মনে অস্তিত্ব স্থাপন করার পরে এবং এটিকে ব্যাখ্যা দানের প্রয়োজনীয়তা ক্রমশঃ মনের মধ্যে সংশয় তৈরি করার পরে এটি বিদায় নেয়- এবং মনে হতে থাকে যেন ইথারের অস্তিত্ব কখনো ছিলই না- ব¯ুÍতঃ এর অস্তিত্ব আসলেই কখনো ছিলো না।

যদি কোনো কিছুকে তরঙ্গ বলে মনে হয় এবং দেখা যায় যে, এর একটি কণা বৈশিষ্ট্য আছে তাহলে কি কোন কিছুকে যদি কণা বলে মনে হয় তাহলে তার একটি তরঙ্গ বৈশিষ্ট্য থাকার কথা নয়? ফরাসী পদার্থবিদ লুই ভিক্টর ডি ব্রগলি (Louis Victor de Broglie, ১৮৯২-১৯৮৭) প্রস্তাব করলেন যে এমনটি হতে পারে। তিনি আইস্টাইনের ভর ও শক্তির রূপান্তর বিষয়ক সমীকরণ এবং ম্যাক্স প্ল্যাংকের কম্পাকের সাথে কোয়ান্টামের আকারের সম্পর্ক বিষয়ক সমীকরণ দু’টি একীভূত করে দেখালেন যে, প্রতিটি কণাও সম্ভবতঃ সুনির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যের তরঙ্গের মত আচরণ করতে পারে।

১৯২৫ সালে আমেরিকান পদার্থবিদ ক্লিন্টন যোসেফ ড্যাভিসন (Louis Victor de Broglie, ১৮৮১-১৯৫৮) একটি বায়ু শূন্য নলে ধাতব নিকেল থেকে ইলেক্ট্রনের প্রতিফলন নিয়ে গবেষণা করছিলেন। নলটি দুর্ঘটনাবশতঃ বিদীর্ণ হয়ে গিয়েছিলো এবং নলের ভিতরের তপ্ত নিকেল বাতাসের অক্সিজেনের সংস্পর্শে এসে এর পৃষ্ঠে মরিচার পর্দা পড়ে গেলো। এই পর্দা সরানোর জন্য ড্যাভিসনকে নিকেলের টুকরোটিকে দীর্ঘ মেয়াদে উত্তপ্ত করতে হলো। এই কাজ শেষে দেখা গেলো নিকেলের ইলেক্ট্রন প্রতিফলনের ধর্ম বদলে গেছে। দুর্ঘটনার পূর্বে নিকেলের পৃষ্ঠে অনেক ছোট ছোট ক্রিস্টাল ছিলো কিন্তু পরবর্তীতে ছোট ক্রিস্টালগুলো একীভূত হয়ে অল্প কয়েকটি বড় ক্রিষ্টালে পরিণত হয়েছিলো।

ড্যাভিসন, যিনি ডিব্রগলির প্রস্তাবনা সম্বন্ধে জানতেন, ভাবলেন এই প্রক্রিয়াটিকে চলতে দেওয়া যায় এবং নিকেলের খন্ডটিকে আরো বড় আকৃতির একক ক্রিস্টালে রূপান্তর করা যায়। এটি হয়তোবা কোনো ইলেক্ট্রনের যদি তরঙ্গ বৈশিষ্ট্য থেকে থাকে তাহলে তা দেখাতে সক্ষম হবে। তিনি একঝাঁক ইলেক্ট্রনকে নিকেলের একক ক্রিস্টাল বরাবর তাক করলেন এবং দেখলেন যে ইলেক্ট্রনগুলো শুধু প্রতিফলিতই হয় না বরং প্রতিসরণের নিয়ম অনুযায়ী প্রতিসরিতও হয় এবং এবং ব্যতিচার প্রদর্শন করে। অথার্ৎ ইলেক্ট্রনের একটি তরঙ্গ ধর্ম আছে।

একইভাবে, ১৯২৫ সালে জে.জে. থমসনের একমাত্র পুত্র ব্রিটিশ পদার্থবিদ জর্জ প্যাগেট থমসন (George Paget Thomson, ১৮৯২-১৯৭৫) দ্রুতগামী ইলেক্ট্রনের ঝাঁককে পাতলা সোনার পাতের মধ্য দিয়ে প্রবিষ্ট করলেন এবং তিনিও ব্যাতিচার ক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করলেন। ফলস্বরূপ, ডি ব্রগলি ১৯২৯ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করলেন এবং ড্যাভিসন এবং জে.পি. থমসন ডিব্রগলির প্রস্তাবনাটিকে পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করার জন্য ১৯৩৭ সালের নোবেল পুরষ্কার ভাগাভাগি করে নিলেন। অবশ্য ইলেক্ট্রন তরঙ্গ, তড়িৎ চৌম্বক তরঙ্গ ছিলো না বরং এদেরকে বলা যেতে পারে ‘বস্তুর তরঙ্গ’।

পদার্থবিদগণ এই অবস্থায় আশ্বস্ত হলেন যে, জগতের সবকিছুরই তরঙ্গ এবং কণা বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান যদিও উভয় বৈশিষ্ট্য সমান হারে থাকতে হবে এমন কোনো কথা নেই। একটি কণার ভর যতো বাড়তে থাকবে তার কণা বৈশিষ্ট্য ততোই প্রকট হতে থাকবে এবং তার তরঙ্গ বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষণ করা ততোই দুঃষ্কর হয়ে উঠবে। একটি বিলিয়ার্ড বল কিংবা এই পৃথিবীটিরও তরঙ্গ বৈশিষ্ট্য আছে। কিন্তু এই বস্তুগুলোর ক্ষেত্রে তরঙ্গদৈর্ঘ্য এতোই  ক্ষুদ্র যে, এদের সেই তরঙ্গ বৈশিষ্ট্য কখনোই পর্যবেক্ষণ না করা যাওয়াটিই স্বাভাবিক। তাত্ত্বিকভাবেই কেবল আমরা জানতে পারি যে, এদের তরঙ্গ বৈশিষ্ট্য আছে। এমনকি একটি বালির দানারও তরঙ্গ বৈশিষ্ট্য যেকোনো ধরনের পর্যবেক্ষণ করার তুলনায় যথেষ্ট সুক্ষ। বরং একটি ইলেক্ট্রনের ভর এতোই  ক্ষুদ্র যে যথাযথ পরীক্ষার মাধ্যমে এর তরঙ্গ বৈশিষ্ট্য সহজেই পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব।

একই ভাবে, একটি তরঙ্গের শক্তি যতোই কম থাকবে ততোই এর তরঙ্গ বৈশিষ্ট্য প্রবল হবে এবং ততোই এর কণা বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষণ করা কষ্টসাধ্য হবে। একটি পানির তরঙ্গ এতোই  দুর্বল যে (যদি একটি মাত্র পানির অণু বিবেচনায় নেওয়া হয়) এর কণা বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষণ না করাটাই সম্ভাব্য। বিষয়টি শব্দ তরঙ্গের জন্যও সত্য যদিও পদার্থবিদরা শব্দ তরঙ্গের কণাধর্মের আলোচনার জন্য একটি নাম দিয়েছেন। একে ‘ফোনন’ (phonon) নামে ডাকা হয়, গ্রীক ভাষায় যা শব্দ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।

একেকটি কোয়ান্টামের আকার খুব ক্ষুদ্র হলে এমনকি তড়িৎ-চৌম্বক তরঙ্গের কণাধর্মটি পর্যবেক্ষণও বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়, যেমন: বেতার তরঙ্গ। কেবল তখনই কণাধর্মটি সহজে দৃশ্যমান হয় যখন কোয়ান্টামের আকার বেশ বড় হয় এবং তরঙ্গদৈর্ঘ্য ক্ষুদ্র হয়, যেমন এক্স রে।
আইস্টাইন দেখিয়েছেন যে, মহাকর্ষ ক্ষেত্রও তরঙ্গ বিকিরণ করে থাকে যেমনটি করে তড়িৎ-চৌম্বক ক্ষেত্র। তবে মহাকর্ষ ক্ষেত্র তড়িৎ-চৌম্বক ক্ষেত্রের চেয়ে এতোই  অসহায় ধরনের ক্ষুদ্র যে এদের কণাধর্ম আশাহীন পর্যায়ের সনাক্তকরণ যোগ্যতার বাইরে। অবশ্য, পদার্থবিদগণ আলোচনার জন্য মহাকর্ষ ক্ষেত্রের জন্য একটি কণা ‘গ্র্যাভিটন’ ধরে নেন।

আমাদের দৃশ্যমান জগতের কণাগুলো এতোই  ভারী আর তরঙ্গগুলো এতোই  স¡ল্পশক্তির হয় যে আমরা এদের অন্য বৈশিষ্ট্যটি পর্যবেক্ষণ করতে পারি না এবং তাই এই দুই বিষয়কে সম্পূর্ণ পৃথক ও সম্পর্কহীন বলে মনে হয়। কিন্তু পরমাণু এবং এর অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে এই সম্পর্কহীনতা দূর হয়ে যায়।

মাঝে মাঝে বিজ্ঞানকে পরস্পরবিরোধী বলে অভিযোগ করা হয় এবং একে সাধারণ জ্ঞানের বিরুদ্ধে যাচ্ছে বলে মনে করা হয়। কিন্তু এটি মনে রাখা জরুরি যে, সাধারণ্যের জ্ঞানের বিষয়টি আমাদের চারপাশের পৃথিবীতে খুব সীমিত পর্যবেক্ষণ ক্ষমতার দ্বারা সীমাবদ্ধ। সাধারণ জ্ঞানের সীমার বাইরে যাওয়া বলতে মাঝে মাঝে এই সীমা অতিক্রম করে এই মহাবিশ্বের আরো যথাযথ দৃষ্টিভঙ্গী গ্রহণ করা বোঝায় (মনে রাখবেন সাধারণ জ্ঞান একসময় আমাদেরকে এই পৃথিবী চ্যাপা এবং সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে, এই জাতীয় শিক্ষা দিয়েছিলো)।

[বইয়ের সূচীপত্র তথা প্রকাশিত সবগুলো আর্টিকেলের জন্য এখানে দেখুন। বিজ্ঞান পত্রিকায় সম্পূর্ণ বইটিই পড়া যাবে, তবে মুদ্রিত সংস্করণটি সংগ্রহ করতে চাইলে যোগাযোগ করুন: ছায়াবিথী প্রকাশনী, ফোন: ০১৯১৫৯৩৯৬৬৮]

-ইমতিয়াজ আহমেদ
সম্পাদক, বিজ্ঞান পত্রিকা
[লেখকের ফেসবুক প্রোফাইল]

Exit mobile version