বিজ্ঞান পত্রিকা

মহাকর্ষঃ একটু ফিরে দেখা

বিজ্ঞানের তত্ত্বগুলোর মাঝে মহাকর্ষ তত্ত্বটা বিজ্ঞানের ইতিহাসের সবটা সময় জুড়েই আছে। সেই প্রাগৈতিহাসিক সময় থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক যুগ পর্যন্ত মহাকর্ষ নিয়ে মাতামাতি। সেই টলেমী-কোপার্নিকাস থেকে শুরু করে গ্যালিলিও- কেপলার হয়ে নিউটন-আইনস্টাইন সকলেই মাথা খাটিয়েছেন এই তত্ত্বের উপর। হাল আমলের গ্র্যাভিটন, গ্র্যাভিটি ওয়েভ নিয়ে অধিক টাকার বাজেট তথা বিগ সায়েন্স প্রজেক্ট সার্নে নিরন্তর গবেষণা চলছে। মহাকর্ষ নিয়ে একটি সমস্যার সমাধান হয় তো আরেকটি সমস্যার উদয় হয়।  বিজ্ঞানের শুরুর দিনটি হতে যাত্রা করে আজকের দিনটি পর্যন্ত বিজ্ঞান মহলে এর দাপুটে পদচারণা।

মহাকর্ষ তত্ত্বের ক্রমান্বয়িক বিকাশ ও পরিবর্তনে সৌরজগৎ ও মহাবিশ্বের ধারণার ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। মহাকর্ষ তত্ত্ব আবিষ্কার করেন আইজ্যাক নিউটন। তার এই আবিষ্কারের পেছনের চালিকা ছিল পূর্ববর্তী বিজ্ঞানীদের ভুল ও আংশিক সঠিক মতবাদ। মানবজাতির লম্বা ইতিহাসের বেশ অনেকটা সময় ধরে জগতে ঘটমান সমস্ত ঘটনাকে স্বর্গীয় দেব-দেবীর কার্যকলাপ বলে ধরে নেয়া হতো। সূর্য, চাঁদ, সৌরমণ্ডলের গ্রহ সহ অন্যান্য নক্ষত্রকে দেব-দেবীর সত্তা বলে বিশ্বাস করতো। প্রাচীন বিজ্ঞানীরা তাদের বিশ্বাসের দেব দেবীদের গতিবিধি বুঝতে চেষ্টা করতো। তারা পর্যবেক্ষণ করতো এবং সে পর্যবেক্ষণ থেকে সতর্ক হতো আর ভবিষ্যদ্বাণী করতো। যদিও সেসব ভবিষ্যদ্বাণীর সবটুকুই ভিত্তিহীন এবং কোনো সময়ে মিলে গেলে তা ছিলো সম্পূর্ণই কাকতালীয়।

আকাশের যেসব বস্তুকে পর্যবেক্ষণ করা হতো তাদের বলা হতো স্বর্গীয় বস্তু (celestial bodies)। তখন সর্বজনীন একটা মতবাদ প্রচলিত ছিল পৃথিবী হচ্ছে এই মহাবিশ্বের কেন্দ্র। সূর্য, চাঁদ, সহ অন্যান্য নক্ষত্র ও গ্রহ পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। স্বাভাবিক বুদ্ধিমত্তায় এমন ধরনের বিশ্বাস হতেই পারে যে পৃথিবী কেন্দ্রে আছে। খোলা চোখেই তো দেখা যাচ্ছে সূর্য প্রতিদিন পূর্ব দিক থেকে ওঠে আর ঘুরতে ঘুরতে পশ্চিমে অস্ত যায়। সকল তারার আস্তরণ পশ্চিম দিক থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে পূর্ব দিকে গিয়ে শেষ হয়। এই সহজ জিনিস দেখতে হলে তো আর টেলিস্কোপ লাগে না। তাই এমন ধরনের ভাবনা একজন বিজ্ঞানী ভাবতেই পারে, স্বাভাবিক। আর সেজন্যই সকল শ্রেণীর মানুষ এই পৃথিবীকেন্দ্রিক বিশ্ব মডেলে (geocentric astronomical model) বিশ্বাস করতো।[1]

এই পৃথিবীকেন্দ্রিক মডেলে গ্রহ নক্ষত্রদের কক্ষপথের জ্যামিতিক ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে এর পক্ষে একটা শক্ত গাণিতিক ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করেন ক্লডিয়াস টলেমী। উল্লেখ্য পৃথিবীকে বিশ্বজগতের কেন্দ্রে ধরে নিলেও টলেমীর এই ব্যাখ্যা  ছিল ত্রুটিপূর্ণ এবং অত্যন্ত জটিল।[2] [3]  তার মডেলে সমগ্র তারকা জগতকে একত্রে একটা স্তর কল্পনা করা হয়েছিল যা অনেকটা ভেতর থেকে দেখা গম্বুজের আস্তরণের মতো বলে ধরে নেয়া হয়।

টলেমীর পৃথিবীকেন্দ্রিক মডেল, যেটি ছিল অত্যন্ত জটিল ও ত্রুটিপূর্ণ। [ছবিঃ দ্য গ্র্যান্ড ডিজাইন, স্টিফেন হকিং ও লিওনার্ড ম্লোডিনো।] পাশে টলেমীর (খ্রি পূর্ব ৩০৭-২৮৩) ছবি।
এমন সব চোখের দেখা ও বিশ্বাসের বাইরে গিয়ে পর্যবেক্ষণ ও যুক্তিবাদের আশ্রয়ে পৃথিবীকেন্দ্রিক মডেলের বিপরীতে কথা বলেছিলেন নিকোলাস কোপার্নিকাস। তিনি দেখতে পান ঋতুর পরিবর্তন হচ্ছে এবং একটা নির্দিষ্ট সময় পরপর সেই ঋতু আবার ফিরে আসছে, এমনটা স্থির পৃথিবীকেন্দ্রিক মডেলের সাথে মেলে না। এই সমস্যা আর পাশাপাশি অন্যান্য গ্রহ নক্ষত্রদের কক্ষপথের সমস্যা সমাধানকল্পে তিনি সৌরকেন্দ্রিক মডেল প্রদান করেন। সূর্যকে সৌরজগতের কেন্দ্রে ধরে নিয়ে মডেল কল্পনা করলে গ্রহ নক্ষত্রদের গতিপথের সমস্যাগুলো আর থাকে না। কোপার্নিকাসের এই মডেল তৎকালীন মানুষ ও চার্চকে নাড়া দিয়েছিল। বলতেই হবে তার এই মডেল কেউ পাত্তা দেয়নি। পরবর্তীতে তার মডেল বিখ্যাত বিজ্ঞানী, জ্যোতির্বিদ গ্যালিলিও গ্যালিলি এবং জোহানস কেপলারের সমর্থন পায়। তখনকার সময়টাতে খ্রিষ্ট ধর্ম প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছে এবং প্রচণ্ড প্রতাপ বজায় রাখছে।

কোপার্নিকাস ও জিওর্দানো ব্রুনো।

সে সময়টাতে ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলা মানে মৃত্যুর দলিলে দস্তখত করে ফেলা। জিওর্দানো ব্রুনো নামে এক বিজ্ঞানী কোপার্নিকাসের তত্ত্বকে সমর্থন ও প্রচার করতেন বলে তাকে চার্চ জনসমক্ষে জ্যান্ত পুড়িয়ে মেরে ফেলেছিল।[4] [5] এখানে একটা ব্যাপার পরিষ্কার করা দরকার। বিজ্ঞানে বা বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ‘মডেল’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার। একটি মডেলে ত্রুটি থাকতেই পারে এবং পরবর্তী কোনো সময়ে সে মডেল ভুল প্রমাণিত হতেই পারে। বিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে এমন ক্রমান্বয়িক পরিবর্তন। পরমাণুবাদের ব্যাপারটাই দেখা যাক না, অবিভাজ্য ও বিভাজ্য এ নিয়ে কত বিজ্ঞানীর কত কথাই না ছিল। একবার একটা সঠিক হয় তো কয়েক বছর তার উল্টোটা। বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে এসব গুরুত্বপূর্ণ। তেমনই টলেমীর দেয়া মডেলটাও গুরুত্বপূর্ণ। তার মডেলের বিপরীত মডেল কেউ বিশ্বাস করাতে কাউকে পুড়িয়ে মেরে ফেলেছে বলে তার জন্য টলেমীকে দোষ দেয়া যাবে না। দোষ সবটাই ধর্মীয় উগ্রবাদীদের।

গ্যালিলিও গ্যালিলি তাঁর সময়কালের সবচেয়েয়ে আধুনিক কাজটা করেছিলেন। তাঁর সময়ে তিনি শুনতে পান এমন একটা জিনিস উদ্ভাবিত হয়েছে যেটি দিয়ে কোনো বস্তুকে বেশ কয়েকগুণ বড় করে দেখা যায়। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন এই জিনিসটা দিয়ে দূরের জিনিসকে কাছে আনা যাবে। নবতর এই উদ্ভাবনটা তিনি নিজের কাজে লাগান। খেটেখুটে একটা টেলিস্কোপ দাঁড় করান এবং সেই টেলিস্কোপ দিয়ে দিনের পর দিন পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন। তার হাত দিয়েই শুরু হয় পর্যবেক্ষণলব্ধ জ্যোতির্বিজ্ঞানের যাত্রা। তার হাত দিয়েই শুরু হয় এক শ্রেণির মানুষের বিশ্বাস করা স্বর্গীয় দেব দেবতার গতিবিধি চলাফেরার তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ। তথ্য উপাত্ত সংগ্রহের উদ্দেশ্য ছিল সঠিক ও গ্রহণযোগ্য একটি তত্ত্ব বা মডেল প্রদান করা।[6] এই টেলিস্কোপের সাহায্যে গ্যালিলিও স্বর্গীয় বস্তুসমূহের মাঝে এমন কিছু দেখতে পেলেন যা আগে কখনো  কেউ দেখেনি। পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তিনি দেখতে পেলেন শুক্র গ্রহের দশা পরিবর্তন এবং বৃহস্পতি গ্রহের চাঁদগুলো এমন ধর্ম প্রদর্শন করছে যা কোপার্নিকাসের মডেলকে সমর্থন করে।

১৬১০ সালের দিকে গ্যালিলিও দেখতে পান চাঁদের কলা যেমন প্রতি মাসে একটু একটু করে পরিবর্তিত হয় তেমনই শুক্রগ্রহও কলার মতো দশার পরিবর্তন দেখায়। শুক্রগ্রহের এমন দশার পরিবর্তন পৃথিবীকেন্দ্রিক মডেলের সাথে মিলে না। সূর্য যদি পৃথিবীর চারপাশে ঘুরে এবং সেই সাথে শুক্র গ্রহও পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরে তাহলে কলার এমন পরিবর্তন দেখা যেত না।

জুলাই ২০১০ হতে জানুয়ারি ২০১২ পর্যন্ত শুক্রগ্রহের বিভিন্ন দশা। ছবি, ডেভ স্মিথ।[7] ছবিতে বিভিন্ন সময়ে সূর্যের সাপেক্ষে পৃথিবী থেকে দৃশ্যমান শুক্রগ্রহের কলা দেখানো হয়েছে।
মূলত পৃথিবী ও সূর্যের মাঝে শুক্রগ্রহের অবস্থানের কারণে দশার পরিবর্তনের এই ব্যাপারটা ঘটে। পৃথিবীকে যদি সৌরজগতের কেন্দ্রে ধরা হয় তাহলেও শুক্রকলা দেখা যাবে। কিন্তু পৃথিবীকেন্দ্রিক সৌরজগৎ ও সূর্যকেন্দ্রিক সৌরজগতের ক্ষেত্রে শুক্রকলা ভিন্ন দেখায়। নিচের চিত্রটি খেয়াল করলে দেখা যাবে একই কোণে শুক্রের দশা ভিন্ন ভিন্ন দেখাচ্ছে। বিশেষ করে দুই পাশে সবার উপরের দশা দুটো। ডান দিকের দশার মাধ্যমে এটা বোঝানো হচ্ছে- শুক্র যখন পৃথিবী আর সূর্যের মাঝামাঝি থাকে তখন শুক্রকলা সম্পূর্ণই অদৃশ্য থাকে। ধীরে ধীরে যখন পৃথিবীর কক্ষপথের ঠিক বিপরীত দিকে যায় তখন পূর্ণকলা প্রদর্শন করে। কিন্তু টলেমীর পৃথিবীকেন্দ্রিক মডেল অনুসারে এমন পূর্ণকলা প্রদর্শন করার কথা নয়। পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে শুক্রগ্রহের ক্ষেত্রে ঠিক এই ব্যাপারটাই ধরে ফেলেছিলেন গ্যালিলিও।

পৃথিবীকেন্দ্রিক ও সূর্যকেন্দ্রিক মডেলে শুক্রকলার পার্থক্য।

শুক্রকে পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি বৃহস্পতিকেও পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছিলেন গ্যালিলিও। সে বছরই (১৬১০) তিনি বৃহস্পতির আশেপাশের চারটা বস্তুকে দেখতে পান এবং তাদের গতিপথ সম্পর্কিত তথ্য-উপাত্ত লিপিবদ্ধ করতে থাকেন। একসময় লিপিবদ্ধ করা সকল তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ধান্তে আসেন যে এরা চাঁদের মতো বৃহস্পতির চারপাশে ঘুরছে।[8] পৃথিবীকেন্দ্রিক মডেলে এটা একদমই অপ্রত্যাশিত। এই মডেল অনুসারে সমগ্র মহাবিশ্বের সকল কিছুই পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরে। আর এই মডেলে ধর্মীয় সমর্থন থাকাতে এটি পেয়েছিল অনন্য মাত্রা। কিন্তু একি? তিনি নিজের চোখে দেখেছেন সবকিছু পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরে না। নিজের চোখ তো আর অন্তত নিজের কাছে মিথ্যা বলে না।

দুই গ্রহের এই দুই অকাট্য প্রমাণ পেয়ে তিনি সূর্যকেন্দ্রিক মডেল সমর্থন ও প্রচার করেন। আজকে আমরা জানি বৃহস্পতির প্রায় ৬৩ টি উপগ্রহ আছে।[9] [10] তাদের মাঝে সবচেয়ে বড় চারটাই শনাক্ত করতে পেরেছিলেন গ্যালিলিও। তাঁর শনাক্ত করা চারটি উপগ্রহকে গ্যালিলিয় চন্দ্র (Galilean Moons) বলে ডাকা হয়।[11] গ্যালিলিওর এমন সব দারুণ প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও অনেকেই তাঁর তত্ত্ব বিশ্বাস করেনি কিংবা বুঝতে চেষ্টা করেনি। কেউ কেউ তাকে বলতে শুরু করল গ্যালিলিওর হাতে থাকা যন্ত্রটাতে ত্রুটি আছে আর তাই তাতে আকাশমণ্ডলীর ভুল বিম্ব দেখে বিভ্রান্ত হচ্ছে। এটা একটা অশুভ ও অভিশপ্ত যন্ত্র! কেউ কেউ তাকে পাগল, মাথা নষ্ট বলে ডাকতে শুরু করলো। সূর্যকেন্দ্রিক মডেলের সমর্থন ও প্রচারণার জন্য তাকে চার্চ কর্তৃক অপমানজনক শাস্তিও পেতে হয়েছিল।

গ্যালিলিয় চন্দ্র ও তাদের গ্রহ বৃহস্পতি।

গ্যালিলিও যখন পর্যবেক্ষণ করছিলেন সেই সময়ে আরেক বিখ্যাত বিজ্ঞানীও গ্রহ নক্ষত্রদের পর্যবেক্ষণ করছিলেন। তিনি জোহানেস কেপলার। কেপলারের হাত ধরেই মহাকর্ষ তত্ত্বের আধুনিক ভীত প্রতিষ্ঠিত হয়, যার পূর্ণতা পায় নিউটনের মাধ্যমে। কেপলারের শিক্ষক ছিলেন আরেক বড় সড় পর্যবেক্ষণ জ্যোতির্বিদ টাইকো ব্রাহে। টাইকো তার সকল পর্যবেক্ষণ লিপিবদ্ধ করে রাখতেন এবং সেই লিপিবদ্ধ করা খাতা কাউকে দিতে চাইতেন না। এমনকি প্রিয় ছাত্র কেপলারকেও না। অন্যদিকে কৌতূহলী কেপলারও চাইতেন সেই খাতাটি হস্তগত করতে, কিন্তু পারতেন না।[12] [13] হঠাৎ করেই একদিন টাইকো মৃত্যুবরণ করলে তাঁর সমস্ত পর্যবেক্ষণ কেপলারের হাতে আসে। তাঁর হাতে থকা তথ্য উপাত্ত নিয়ে তিনি প্রায় ২০ বছর গবেষণা করেন।[14] তথ্য-উপাত্ত-পর্যবেক্ষণ থেকে কেপলার সূর্যের চারপাশে ঘূর্ণায়মান গ্রহগুলোর কক্ষপথের গাণিতিক ব্যাখ্যা দান করেন।

কেপলারের আগ পর্যন্ত সমস্ত বিজ্ঞানীরা, এমনকি যারা সূর্যকেন্দ্রিক মডেল সমর্থন করতেন তাঁরাও বিশ্বাস করতেন যে, গ্রহগুলো বৃত্তাকার কক্ষপথে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। কেপলার মঙ্গলের কক্ষপথের পর্যবেক্ষণ হতে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখতে পান এর গতিপথ কোনোভাবেই বৃত্তাকার নয়, এর গতিপথ তখনই সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা যায় যখন এর কক্ষপথকে উপবৃত্তাকার ধরে নেয়া হয়। এ থেকেই কেপলার গ্রহদের গতি সংক্রান্ত তিনটি সূত্র প্রদান করেন।[15] মূলত তিনি আলাদাভাবে কোথাও এই তিনটি সূত্র লিখে যাননি। তার লেখা বই থেকে বইয়ের প্রস্তাব ও সিদ্ধান্তের মর্মার্থ হিসেবে এই তিনটি সূত্র পাওয়া যায়।[16] কেপলারের এই কাজটি বিজ্ঞানের ইতিহাসে একটি মাইলফলক। এত দারুণ কিছু করতে পারলেও তিনি ধরতে পারেননি ঠিক কেন গ্রহগুলো সূর্যের চারপাশে ঘুরছে। তিনি বিশ্বাস করতেন কোনো এক মহিমান্বিত স্বত্বার আদেশে তাকে খুশি রাখতে যুগের পর যুগ ধরে পৃথিবী সহ অন্যান্য গ্রহগুলো ঘুরছে।[17] শুধু তাই নয় ধূমকেতুরা যে সূর্যের আকর্ষণে বাঁধা থাকে সেটা তিনি বিশ্বাস করতেন না।[18] তিনি মনে করতেন ধূমকেতুরা সরলরৈখিক পথে মহাবিশ্বের পথ পরিক্রমণ করেন। চলার পথে যখনই সৌরজগতের আশপাশ দিয়ে যায় তখন আমরা তাদের দেখতে পাই। অথচ সবচেয়ে মজার কথা হচ্ছে ধূমকেতুর কক্ষপথকে তার দেয়া গ্রহগতির সূত্র দিয়েই ব্যাখ্যা করা যায়!

এরপর আসেন আইজ্যাক নিউটন। নিউটনের আগ পর্যন্ত সকল সূর্যকেন্দ্রিক মডেলে কিছু না কিছু পরিমাণ সীমাবদ্ধতা ছিলই। আর এর কারণে সূর্যকেন্দ্রিক মডেল নিয়ে একটা বিতর্ক সবসময়ই চালু ছিল। নিউটন তার মহাকর্ষ সূত্রের মাধ্যমে পৃথিবীকেন্দ্রিক মডেলের কফিনে সর্বশেষ পেরেকটি এঁটে দেন। একারণেই দেখা যায় মহাকর্ষ তত্ত্বের ইতিহাসে জ্যোতির্বিজ্ঞানের ইতিহাসের একটা বড়সড় যোগসূত্র আছে।

কেপলার ও নিউটন। নিউটন অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন কেপলারের কাজ থেকে। কেপলারের তিনটি সূত্রকে তিনি একটি মাত্র সূত্রে বেধে ফেলেন।

১৬৮৭ সালে নিউটন তার বিখ্যাত ‘প্রিন্সিপিয়া’ বইটি প্রকাশ করে। এই বইতে তিনি তার মহাকর্ষ তত্ত্বের কথা উল্লেখ করেন। প্রিন্সিপিয়ায় নিউটনের কাজের ভিত্তি ছিল গ্যালিলিও আর কেপলারের কাজ। তিনি মহাবিশ্বের প্রত্যেকটা বস্তুর মধ্যেই এক ধরনের পারস্পরিক আকর্ষণ বল কল্পনা করেন। এই বলের কারণে পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরে, আর একই বলের কারণে উপর থেকে মুক্ত কোনো বস্তু নিচে এসে পড়ে। এই সমস্যাটাও দেখা দেয় সূর্য যদি পৃথিবীকে আকর্ষণ করে তাহলে তো ধীরে ধীরে পৃথিবীর কক্ষপথ সংকুচিত হতে হতে সূর্যের সাথে মিলিয়ে যাবার কথা। একসময় পৃথিবী সূর্যের মাঝে পতিত হবার কথা। তিনি একটা বল কল্পনা করেন যেটা সূর্যের আকর্ষণের বিপরীতে পৃথিবীকে বাইরের দিকে টানছে। এই বলটি হচ্ছে অপকেন্দ্র বল বা কেন্দ্রবিমুখী বল। একটি সিস্টেমে কেন্দ্র হতে বাইরের দিকে অপকেন্দ্র বল ক্রিয়াশীল থাকলে সিস্টেমের কোনো বস্তুর মাঝে ঘূর্ণনের সৃষ্টি হয়। এই আকর্ষণ বল আর অপকেন্দ্র বলের ফলাফল হিসেবেই সূর্যের চারপাশে ঘুরে পৃথিবী।

পৃথিবীর চারপাশে চাঁদ ঘুরছে। চাঁদের ক্ষেত্রে তিনি হিসাব করলেন পৃথিবী যে বলে চাঁদকে আকর্ষণ করছে ঠিক কত পরিমাণ গতিবেগ থাকলে চাঁদের ঘূর্ণন বল আর পৃথিবীর আকর্ষণ বলে কাটাকাটি যায়। এই ধারণার মাধ্যমে নিউটন চাঁদের গতিবেগ হিসাব করেছিলেন কোন যন্ত্রপাতি ছাড়াই। পরবর্তীতে উন্নত যন্ত্রের মাধ্যমে নির্ণয় করা চাঁদের গতিবেগ আর নিউটনের হিসাব করা গতিবেগ প্রায় মিলে গিয়েছিল।[19]

নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র বলছে মহাবিশ্বের সকল বস্তুই তার আকর্ষণের সীমায় থাকা অন্য সকল বস্তুকে আকর্ষণ করে। এই আকর্ষণ বলের তীব্রতা কত হবে নির্ভর করে বস্তু দুটি কত ভারী তার উপর এবং বস্তু দুটি পরস্পর কত দূরত্বে আছে তার উপর। ভর বেশি হলে আকর্ষণ বেশি হবে আর দূরত্ব বেশি হলে আকর্ষণ কম হবে। নিউটনের এই সূত্রটি সমস্ত জগতকে নাড়া দিয়ে গিয়েছিল। নিউটনের গতির তিনটি সূত্র উল্লেখ করেছিলেন তিনি এই মহাকর্ষ সূত্রের জন্যই। এখানে আরেকটি কথা উল্লেখ করে রাখা ভাল- নিউটনের আগে গ্যালিলিও বিমূর্তভাবে মহাকর্ষের প্রকৃত কারণ খুঁজে পেয়েছিলেন। গ্যালিলিওর দেয়া পড়ন্ত বস্তুর সূত্রগুলো আদতে মহাকর্ষ সূত্রেরই প্রতিনিধিত্ব করে।

কিন্তু তখন পর্যন্ত মানুষের ধারণা ছিল এরিস্টটল কেন্দ্রিক। এরিস্টটল ছিল ‘বিশুদ্ধ চিন্তা’র দর্শনে প্রজ্জ্বলিত। এই দর্শন অনুসারে বিশুদ্ধভাবে করা কোনো চিন্তা প্রকৃতি সম্বন্ধে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত করবে। এরিস্টটলের ‘বিশুদ্ধ চিন্তা’ ছিল ভূপৃষ্ঠ হতে কোনো বস্তু যখন উপরে উঠে যায় তখন বস্তুর প্রতি পৃথিবীর ভালোবাসা বেড়ে যায়![20] এই ভালোবাসার কারণে উপর থেকে বস্তু নিচে নেমে আসে। আর কোনো বস্তুকে ছুড়ে মারলে গড়িয়ে চলতে দিলে তার গতি কমে যায় কারণ তারা চলতে চলতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে।[21] ক্লান্ত হলে তো গতি কমবেই!

নিউটনের কাজ ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী। আইনস্টাইন তাঁর আপেক্ষিক তত্ত্ব দেবার আগ পর্যন্ত প্রায় ২০০ বছর পর্যন্ত রাজত্ব করেছিল এই তত্ত্ব। নিউটন তাঁর একটি সূত্রের মাধ্যমে কেপলারের তিনটি সূত্রকে বেধে ফেলেছিলেন। এই সূত্রের মাধ্যমে তাঁর পূর্বসূরি সকলকে নিয়ে আসতে পেরেছিলেন। কোপার্নিকাস, কেপলার, গ্যালিলিও, টাইকো ব্রাহে সবার কাজই চলে আসে নিউটনের কাজের মাধ্যমে।

নিউটনের মহাকর্ষ তত্ত্বের মাধ্যমে সূর্যকেন্দ্রিক মডেল পাকাপাকীভাবে প্রতিষ্ঠিত হলেও তত্ত্বে মহাকর্ষ নিয়ে কতগুলো প্রশ্ন রয়ে গিয়েছিল। অনেক দূরের বস্তু ঠিক কোন প্রপঞ্চের কারণে একে অপরকে আকর্ষণ করে কিংবা কোনো মাধ্যম ছাড়া এই বল ঠিক কীভাবে কাজ করে এ বিষয়টা অমীমাংসিত ছিল। এমনকি স্বয়ং নিউটনও কিছুটা দ্বিধায় ছিলেন এটা নিয়ে। কোনো অতিভারী বস্তুর খুব কাছে থাকা কোনো বস্তুর ক্ষেত্রে কেন এই সূত্র সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারে না? যেমন বুধগ্রহের কক্ষপথ। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে মানুষ সূর্যের কাছের গ্রহগুলোকে পর্যবেক্ষণ করতে পারে এবং দেখতে পায় বুধ গ্রহের কক্ষপথে কিছুটা গড়মিল আছে। বুধগ্রহের কক্ষপথ পুরোপুরি উপবৃত্তাকার নয়। এটি প্রতি চক্রে (সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে বুধগ্রহের সময় লাগে ৮৮ দিন) একটু একটু করে সরে যায়। সরে সরে যদি পূর্ণ চক্র সম্পন্ন করে তাহলে সে পথ একটি ফুলেল নকশার মতো হয়। নিউটনের তত্ত্ব অনুযায়ী এমনটা ছিল অপ্রত্যাশিত।

বুধ গ্রহের কক্ষপথের ফুলেল নকশা। এর কক্ষপথ পুরোপুরি উপবৃত্তাকার না হবার কারণে এমনটা হয়।

অনেকদিন ধরে অমীমাংসিত থাকার পর আলবার্ট আইনস্টাইন এই সমস্যার সমাধান দেন। ১৯১৫ সালে তাঁর দেয়া সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্ব এই ঘটনার ব্যাখ্যা দেয়। আইনস্টাইনের সমাধান বলে মহাকর্ষ হচ্ছে স্থান-কালের বক্রতার ফলাফল। এতে আকর্ষণ বিকর্ষণ বলতে কিছু নেই। ভারী বস্তু তার আশেপাশের স্থান-কালকে বাঁকিয়ে ফেলে। আর সূর্যের চারপাশে ঘূর্ণায়মান প্রত্যেকটা বস্তুই সরলরেখায় চলে। সূর্য তার ভরের কারণে আশেপাশের স্থানকে বাঁকিয়ে ফেলে। বুধ সহ অন্যান্য গ্রহরা সেই বাঁকিয়ে যাওয়া সরলরেখায় চলে। স্থান-কালের ‘মাত্রা’টি সূর্য বাঁকিয়ে রেখেছে বলে পৃথিবীর সরলরৈখিক গতিকে উপবৃত্তাকার বলে মনে হয়। আর বুধগ্রহ সূর্যের সবচেয়ে কাছের গ্রহ হওয়াতে ঐ স্থান-কাল একটু বেশি পরিমাণ বাঁকিয়ে ফেলে বলে তার গতিপথ পুরোপুরি উপবৃত্তাকার না হয়ে ফুলেল বিন্যাস দেখায়। আইনস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা একটু কষ্টকর।

এখানে প্রশ্ন হতে পারে বাঁকিয়ে রাখা পথে চললে সে পথটা সরলরৈখিক হয় কী করে? সরলরেখা বলতে আমরা কী বুঝব? দুটি বিন্দুর মাঝে সংযোগ করা সোজা রেখাকে আমরা সরলরেখা বলে কল্পনা করি। কিন্তু সরলরেখা হচ্ছে দুটি বিন্দুর মাঝে সর্বনিম্ন দূরত্বের রেখাটি। একটি সরল রেখাই দুই বিন্দুর মাঝে সবচেয়ে কম পথ রচনা করে। দ্বিমাত্রিক স্থানে সরলরেখাকে সোজা দেখা যায়। কিন্তু ত্রিমাত্রিক স্থানে সরলরেখা সোজা নাও হতে পারে। যেমন গোলকের পৃষ্ঠে আঁকা সরলরেখা।

একটি গ্লোবে আফ্রিকা হতে আমেরিকা পর্যন্ত আঁকা সর্বনিম্ন  দূরত্বের রেখাটিকে দেখে বক্র রেখা বলে মনে হবে। কিন্তু আদতে এটিই সরলরেখা। নিচের চিত্রে একটি সমতল মানচিত্রে একটি স্থান হতে আরেকটি স্থান পর্যন্ত যাবার দুটি রাস্তা আঁকা রয়েছে। এখানে বাঁকা রেখাটাই হচ্ছে সর্বনিম্ন দূরত্ব। আর সর্বনিম্ন দূরত্বই হচ্ছে সরলরেখা। এখানে কথা হচ্ছে সরলরেখাটাকে আমরা বক্র দেখছি কেন? এমনটা হচ্ছে কারণ পৃথিবীটা গোল কিন্তু পৃথিবীর মানচিত্রটা সমতল। গোল জিনিস সমতলে আনলে কি আর সেটা ঠিক ঠিক মাপে থাকে? এই জিনিসটাকেই যদি গ্লোবে এঁকে দেখা হয় তাহলে সেই রেখাটাকে সরল দেখা যাবে।[22]

গোলকে যে রেখাটা সরল, সমতলে সে রেখাটাকে বক্র বলে মনে হয়। [ছবিঃ জ্যোতির্বিদ্যার খোশখবর, ইয়াকভ পেরেলমান।[23]]
এখন পর্যন্ত আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার তত্ত্বকে ভুল প্রমাণ করা যায়নি। এই জায়গায় আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। কোয়ান্টাম তত্ত্ব এখনকার পদার্থবিজ্ঞানের সকল সমস্যার সুন্দরতম সমাধান দিয়েছে। পদার্থবিজ্ঞানীদের একটা বহুল আকাঙ্ক্ষিত বিষয় হল প্রকৃতির চারটি মৌলিক বলকে একটি মাত্র বলের মাধ্যমে প্রকাশ করা। কোয়ান্টাম তত্ত্ব মহাকর্ষ বাদে বাকি তিনটি বলের ক্ষেত্রেই সফল হয়েছে। কিন্তু অন্য তিনটি বলের সার্থক ও কার্যকর কোয়ান্টাম তত্ত্ব থাকলেও মহাকর্ষের কোয়ান্টাম তত্ত্ব কোনোভাবেই কার্যকর করা যাচ্ছে না।[24]

সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্ব বড় স্কেলে ভারী বস্তুদের আচরণ ব্যাখ্যা করে আর কোয়ান্টাম মেকানিক্স ক্ষুদ্র স্কেলে অতি-পারমাণবিক পর্যায়ের বস্তুদের আচরণ ব্যাখ্যা করে। এখন পর্যন্ত আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্ব দিয়ে অতি-পারমাণবিক পর্যায়ের বস্তুদের আচরণ ব্যাখ্যা করা যায়নি। আপেক্ষিক তত্ত্ব যদি এই একটি কাজ করতে পারে কিংবা আপেক্ষিকতা ও কোয়ান্টাম মেকানিক্স যদি একত্রে মিলে যেতে পারে তাহলে প্রকৃতির চারটি মৌলিক বলকে একটি মাত্র কাঠামোতে ফেলা যাবে। এবং সকল কিছুর জন্য মাত্র একটি তত্ত্ব প্রদান করা যাবে। এই তত্ত্বটিকে বলা হবে সর্বময় তত্ত্ব বা সার্বিক তত্ত্ব বা Theory of Everything।

এই তত্ত্ব পদার্থবিজ্ঞানীদের বহুল আকাঙ্ক্ষিত এক জিনিস। তাই মহাকর্ষ নিয়ে হালকালের বিজ্ঞানীরা নানা ধরনের গবেষণা করছেন। বড় বড় বাজেট হচ্ছে এর পেছনে গবেষণা করার জন্য। তার উপর ঠিক এই টার্মটা মহাবিশ্বের প্রাথমিক দশা ব্যাখ্যা করতে পারবে। মহাবিশ্বের একদম শুরুর দিকের ক্ষুদ্র কোয়ান্টাম অবস্থার ব্যাখ্যার জন্যও এটার দরকার। মহাবিশ্ব সৃষ্টির সময়ে প্রথম দিকের কয়েক মুহূর্তকে ভালোভাবে বোঝা এবং ব্যাখ্যা করাও পদার্থবিজ্ঞানীদের আরেকটা বড় ধরনের আকাঙ্ক্ষা। তাই কোয়ান্টাম মহাকর্ষ হবে আগামী বিজ্ঞানীদের গবেষণার এক বড় ধরনের ক্ষেত্র।

মহাকর্ষ তত্ত্ব সেই বিজ্ঞানের শুরু থেকে যাত্রা করে এখন পর্যন্ত পরিবর্তিত হচ্ছে আর হচ্ছে। যতবারই সে বাইরের রূপ বদলেছে ততবারই আগের চেয়ে উন্নতমানের রূপ পেয়েছে। আগের অনেক অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান হয়েছে। আগামীতেও হয়তো হবে এবং সে তত্ত্ব আরও উন্নত হবে। হয়তো পরস্পর সাংঘর্ষিক তত্ত্বকেও আত্তীকরণ করে নিবে। হয়তো আরো অনেক অজানা জিজ্ঞাসার সমাধান দিবে। পরিশেষে পরিবর্তনশীল ও উন্নয়নশীল বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের ক্ষেত্রে একটা পঙক্তি বারবার চলে আসছে-

কত অজানারে জানাইলে তুমি, কত ঘরে দিলে ঠাই
দূরকে করিলে নিকট, বন্ধু, পরকে করিলে ভাই।

তথ্যসূত্র:

[1] Michal H Heart , The 100, Citadel, 2000

[3] Stephen W. Hawking and Leonard Mlodinow, The Grand Design, Bantam Books, New York, 2010

[4] Neil Degrasse Tyson, Cosmos : A Space Time Odyssey, 1st Episode, National Geographic, 2014

[5] মুহম্মদ জাফর ইকবাল, একটুখানি বিজ্ঞান, কাকলী প্রকাশনী, ২০১১

[6] The history of Gravity, https://www.physics.wisc.edu/museum/Exhibits-1/Mechanics/GravPit/index_HistGrav-2.html

[7] http://www.popastro.com/planetary/observations/observation.php?id_secRep=70

[8] সিরাজাম মুনির শ্রাবণ,সৌরজগতের মডেল: ক্রমান্বয়িক পরিবর্তন, জিরো টু ইনফিনিটি, http://bn.z2i.org/article/549

[9] “Jupiter” Encyclopædia Britannica, 2011, Ready Reference CD.

[10] মার্কিন বিজ্ঞানী ডোনাল্ড জোহানসনের এর সাক্ষাৎকার, http://www.thereport24.com/article/84911/index.html

[11] The history of Gravity, https://www.physics.wisc.edu/museum/Exhibits-1/Mechanics/GravPit/index_HistGrav-2.html

[12] ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী, ইউডক্সাসের গোলক ও অন্যান্য প্রসঙ্গ, শুধস্বর, ২০১৩

[13] A Brief History of Gravity, http://www.timaras.com/science/gravity.html

[14] এস এম মোকছেদ আলী, বস্তুর ধর্ম ও তরঙ্গ, ইউনিভার্সাল পাবলিকেশন্স, ২০১৩

[15] সূত্র তিনটি হচ্ছে-

১. সূর্যকে একটি উপকেন্দ্রে রেখে গ্রহসমূহ উপবৃত্তাকার কক্ষপথে পরিভ্রমণ করে।

২. সূর্য ও গ্রহের সংযোগকারী সরলরেখা সমান সময়ে সমান ক্ষেত্রফল অতিক্রম করে।

৩. সূর্যের চারদিকে গ্রহের আবর্তনকালের বর্গ সূর্য হতে গ্রহের গড় দূরত্বের ঘনের সমানুপাতিক। গাণিতিকভাবে  ।

অর্থাৎ সূর্যের চারপাশে যে গ্রহ আবর্তন করছে সূর্যকে একবার ঘুরে আসতে যে সময় লাগবে তা নির্ভর করে সূর্য থেকে গ্রহের দূরত্বের উপর। দূরত্ব বেশি হলে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে সময় লাগবে বেশি দূরত্ব কম হলে আবর্তনের সময়কাল হবে কম।

[16] সৌমিত্র চক্রবর্তী, প্রাণের মাঝে গণিত বাজে, অনুপম প্রকাশনী, ২০১২

[17] Stephen W. Hawking and Leonard Mlodinow, The Grand Design, Bantam Books, New York, 2010

[18] কিছু কিছু ধূমকেতু আছে যারা সূর্যের আকর্ষণ থেকে মুক্ত হয়ে অধিবৃত্তাকার পথে চিরকালের জন্য হারিয়ে যায়।

[19] কিশোর বিজ্ঞান সমগ্র, আব্দুল্লাহ আল মুতী, অনুপম প্রকাশনী, ২০০৮

[20] Michio Kaku, Universe in a Nutshell (The Physics of Everything), The City University of New York,  September, 2011 www.youtube.com/watch?v=0NbBjNiw4tk

[21] পূর্বোক্ত

[23] Yakov Perelman, Astronomy for Entertainment, Translated by A.  Shkarovsky, Foreign Language Publishing House Moscow, 1958

[24] ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী, মানুষ মহাবিশ্ব ও ভবিষ্যৎ, প্রথমা, ২০১৩

-সিরাজাম মুনির শ্রাবণ
সহ-সম্পাদক, বিজ্ঞান ব্লগ
[লেখকের ফেসবুক প্রোফাইল]

Exit mobile version