বিজ্ঞান পত্রিকা

বিলুপ্ত হওয়া ‘ক্ষুদে’ সিংহ আবিষ্কৃত

অষ্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের বিশ্ব ঐতিহ্য ঘোষিত রিভারস্লেই (Riversleigh) এলাকায় দ্বিগর্ভ বা থলিসমৃদ্ধ এক নতুন প্রজাতির সিংহের জীবাশ্ম দেহাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে। দীর্ঘ বিলুপ্ত প্রজাতিটি এদের নিকটতম বড় প্রতিবেশির থেকে অধিক দ্রুতগামী ছিল। গবেষকরা ধারণা করছেন ১৮ মিলিয়ন বছর আগে অষ্ট্রেলিয়ার রেইনফরেষ্টের সুউচ্চ গাছের চূড়া দিয়ে এরা ভ্রমণ করত।

স্যার ডেভিড অ্যাটেনব্রোর সম্মানে আবিষ্কারক দল এবং এদের ছোট আকৃতির জন্য প্রজাতিটির নাম রাখেন মাইক্রোলিও অ্যাটেনব্রোঘি। বিশ্ব প্রকৃতির ইতিহাস তুলে ধরার জন্য অ্যাটেনব্রোর যে আত্মোৎসর্গ, উদ্দিপনা এবং রিভারস্লেই বিশ্ব ঐতিহ্যের একজন জিবাশ্ম সংরক্ষক হওয়ার বিষয়টিকে সম্মান জানানোর জন্যই এই প্রজাতির নামকরণ তাঁর নামানুসারে করা হয়।

এই ক্ষুদ্র সিংহটি দেখতে কেমন ছিল তা এর কিছু দাঁত, হাড়, খুলির ভাঙ্গা অংশের জীবাশ্মের উপর ভিত্তি করে ধারণা করার চেষ্টা করা হয়েছে। গবেষকরা ভাবছেন এই ক্ষুদ্র প্রজাতির সিংহটি এদের নিকটতম আত্মীয় মারশুপিয়াল সিংহ থেকে অনেক ছোট হয়ে থাকবে।

নিউ সাউথওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দলের একজন সদস্য অ্যানা গিলেষ্পি বলেন, “মাইক্রোলিও অ্যাটেনব্রোঘি এদের পরিবারের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর, বুদ্ধিমান এবং কুস্বভাবের হয়ে থাকবে। এটা সিংহের আকারের না হয়ে বনবিড়াল বিশেষের মতো হবে। যার ওজন মাত্র ৬০০ গ্রাম। যা অনেকটা পসম পাখি বিশেষের মতো দেখতে।”

বিভিন্ন প্রজাতির সিংহের সাথে মাইক্রোলিওর আকারের অনুপাত

এছাড়াও এটা স্পষ্ট যে, এর অনেক ধারালো ছুরির মতো পেষক দাঁত ছিলো যার সাহয্যে সে যেকোন জিনিস অতি সহজে টুকরো টুকরো করে ফেলতো।

গিলেস্পি আরো বলেন, “মাইক্রোলিওরা উত্তর মায়োসিন রেইন ফরেষ্টে দ্বিগর্ভ সিংহের দুটি প্রজাতিতে ছড়িয়ে ছিল, একটি বিড়াল আকারের এবং অন্যটি কুকুর আকারের। যদিও এটা সম্ভব যে তারা একে অপরের সংঙ্গে প্রতিযোগীতা করতো এবং আকারের অনেকটা পার্থক্য থাকলেও শিকারের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে দক্ষ ছিলো। এরা গাছের অগ্রভাগ দিয়ে লাফালাফি করতো, ছোট ছোট পোকামাকড় যেমন, গিরগিটি, পাখি গোগ্রাসে গিলে ফেলতো।”

জিবাশ্মগুলি চুনাপাথরের স্তুপে সংরক্ষিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় যার ফলে গবেষকরা মনে করছেন মাইয়োসিন পর্বের একটি রেইনফরেষ্টে এটি তৈরী হয়।

দলের আরেক সদস্য সুজান হ্যান্ড বলেন, “রিভারস্লেই এ সংরক্ষিত হাজার হাজার জিবাশ্মের দলিল অনুযায়ী, মাইয়োসিনের শুরুর ‍দিকে উত্তর অষ্ট্রেলিয়ার জলবায়ু স্থির এবং খুব ভেজা ছিল। যেখানে বিভিন্ন ধরণের স্তণ্যপায়ী প্রাণীর বৈচিত্র ছিল। যেটা অনেকটা বর্তমান অষ্ট্রেলিয়ার বোর্ণিও এলাকায় দেখা যায়।”

এই ক্ষুদ্র দ্বিথলি বিশিষ্ট সিংহ ছাড়াও দলটি সেখানে একটি দৈত্যাকার প্লাসিপাস, শামুক খাদক মার্শুপিয়াল, প্রকান্ড কোয়ালাস এবং বিশ্বের সবথেকে প্রাচীন (এবং বড়) শুক্রাণু যা ঐ একটি যায়গা থেকে পাওয়া গিয়েছে।

গবেষক দলটি আশা করছেন এই ক্ষুদ্র সিংহের সম্পূর্ণ নমুণা আবিষ্কার করার যাতে এর জীবন ও অভ্যাস সম্পর্কে পুর্ণাঙ্গ ধারণা পাওয়া সম্বব হয়। এই দলের অন্য এক সদস্য মাইক আর্চার বলেন, “এই প্রজাতিটির অবশিষ্ট মাথার খুলি এবং কংকালের  সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার মাধ্যমে এর জীবনধারণ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া সম্ভব হবে। যার জন্য পূর্ণাঙ্গ নমুনা সংগ্রহ পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।”

রিভারস্লেইতে অনেক আশ্চর্য ধরনের প্রাণীর আবিষ্কারের সাথে সাথে আমরা অপেক্ষায় রয়েছি পরবর্তীতে কোন প্রাণীটি বেরিয়ে আসে।

শফিকুল ইসলাম

Exit mobile version