বিজ্ঞান পত্রিকা

স্মার্টফোন রিসাইকেলে ব্যবহৃত হবে ছত্রাক

আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটির শীতকালীন সম্মেলনে প্রদর্শিত হয়েছে কিভাবে ছত্রাক স্মার্টফোনের ব্যাটারী থেকে মূল্যবান দ্রব্যাদি নিষ্কাশন করতে পারে, যা এমনিতে অপচয় হয়ে যেত।

স্মার্টফোন বা ল্যাপটপের ব্যাটারীগুলোর ক্যাথোড তৈরি করা হয় লিথিয়াম এবং কোবাল্ট দিয়ে। এই ধাতুগুলো রিসাইকেল করার পদ্ধতি আছে, কিন্তু বর্তমান প্রযুক্তিতে রিসাইকেল করতে গেলে যেই পরিমান খরচ হয় তার চেয়ে কম খরচে খনি থেকে উৎপাদন করা যায়। ফলস্বরূপ বিপুল পরিমান পুরনো ফোন মাটি ফেলে দেওয়া হয়, আর অপর দিকে পৃথিবীর সঞ্চয় হ্রাস পেতে থাকে। রিসাইকেল করা না গেলে কোবাল্টের সঞ্চয়ে টান পড়বে এবং নবায়নযোগ্য শক্তির ক্ষেত্রটি ব্যাটারি তৈরির অভাবে সংকুচিত হয়ে পড়বে।

ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ফ্লোরিডার দুজন অধ্যাপক জেফরি কানিংহ্যাম এবং ভ্যালেরি হার্ডউড, ছত্রাকের তিনটি কার্যকর প্রজাতি দেখিয়েছেন, যেগুলো সুলভে ব্যাটারীর বজ্র থেকে ধাতু নিষ্কাশন করতে পারে।

Aspergillus niger প্রজাতির ছত্রাকগুলোকে এতদিন মানুষের শত্রু হিসেবেই দেখা হতো কারণ এগুলো ফলের গায়ে কালো দাগ তৈরি করে। Penicillium simplicissimum কে ইতিমধ্যেই ধাতব অক্সাইড থেকে জিংক নিষ্কাশনে কিংবা পলিথিনের বিয়োজনে কাজে লাগানো হচ্ছে। আর Pencillium chrysogenum সম্ভবতঃ মানুষের সবচেয়ে ভালো ছত্রাক বন্ধু, যেহেতু এটি ব্যাপক আকারে পেনিসিলিন উৎপাদনের প্রথম এবং খুবই সমৃদ্ধ উৎস।

কানিংহ্যাম একটি বিবৃতিতে বলেন, “আমরা ছত্রাকেই এই প্রকরণগুলো বেছে নিয়েছি কারণ আমরা দেখেছি এরা অন্যান্য বিভিন্ন বজ্র থেকে খুব ভালোভাবে ধাতু নিষ্কাশন করতে পারে। আমরা দেখেছি নিষ্কাশনের কার্যকারণ একই রকম হবে এবং সেই কারণে ধারনা করা যায় এই ছত্রাকগুলো যথাসম্ভব ব্যবহৃত ব্যাটারি থেকে লিথিয়াম ও কোবাল্ট নিষ্কাশন করতে পারবে।”

ছত্রাকের পক্ষে কাজ করার জন্য ব্যাটারিতে ব্যবহৃত দ্রব্যগুলো অতিমাত্রায় কঠিন পদার্থ। তাই গবেষকগণ ব্যাটারি ভেঙ্গে ক্যাথোডটিকে গুঁড়ো করে দেন। বর্তমানে প্রচলিত উচ্চ তাপমাত্রার পদ্ধতির চেয়ে এই ব্যবস্থা অপেক্ষাকৃত সুলভ। এর পরে ছত্রাকের জৈব এসিড এর উপর প্রযুক্ত হয়। এই জৈব এসিডের প্রভাবে গুঁড়ো হয়ে থাকা ক্যাথোডে বিদ্যমান কোবাল্ট ও নিকেলে নিষ্কাশিত হয়ে বেরিয়ে আসে।

দুর্ভাগ্যবশতঃ নিষ্কাশনের কাজ এখানেই শেষ হয় না, উৎপন্ন ধাতুকে এসিড হতে পৃথক করতে ঝক্কি পোহাতে হয়। কানিংহ্যামের দল এখনো এতে খুব বেশী সফলতা দেখাতে পারেন নি, তবে তাঁরা বেশ কিছু পদ্ধতির কথা ভেবেছেন এবং এগুলো নিয়ে কাজ করছেন।

ভোক্তা পর্যায়ের ইলেক্ট্রনিক পন্য লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারিই এখন সর্বাধিক হারে ব্যবহৃত হয়, তবে বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রচলন বৃদ্ধির সাথে সাথে এর ব্যবহার আরো বাড়বে।নবায়নযোগ্য শক্তি যেমন: সৌর বা বায়ুশক্তি সংরক্ষণের আধার হিসেবেও এদের গুরুত্ব দিন দিন বাড়তেই থাকবে। তাই এগুলোর রিসাইকেল করার গুরুত্বও পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকবে। তা না হলে খনি থেকে উত্তোলন করে বেশিদিন মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে এই ব্যাটারি উৎপাদন করা যাবে না।

⚫ বিজ্ঞানপত্রিকা ডেস্ক

Exit mobile version