বিজ্ঞান পত্রিকা

মানুষের পৈশাচিক মস্তিষ্ক

চায়ের স্টলে টিভি চলছে। টিভিতে রেসলিং খেলা দেখাচ্ছে। রেসলিং দেখতে দেখতে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে কিছু পরিমাণ মানুষ। রেসলিংয়ে অপেক্ষাকৃত চৌকস খেলোয়াড়ের পক্ষ নিয়েছে চায়ে চুমুকরত কিছু দর্শক। চৌকস খেলোয়াড়টি যে মাত্রই তার প্রতিপক্ষকে জোরে আঘাত করছে কিংবা বড়সড় এক আছাড় মারছে তখনই চায়ে চুমুকরত দর্শক গলার মাঝে চেপে আর ঠোঁটে জোরে জোরে বলে উঠে “দে!” “আরো দে!”

কিংবা চলছে একটি সিনেমা, যেখানে নায়কের নাম ফাটাকেষ্ট [এই পটভূমিতে ভারতীয় বাংলার একটি সিনেমা আছে। নাম “মিনিস্টার ফাটাকেষ্ট”।]। নায়কের এক ঘুষিতেই সবকিছু চৌচির হয়ে যায়। নায়ক যখন একসাথে অনেকগুলো মানুষকে ‘সাইজ’ করছে তখন দর্শকেরা এমন উত্তেজনাকর মুহূর্তে চেঁচিয়ে উঠে বলছে “ফাটাকেষ্ট, পিটাইয়া ফাটাই লা!”

এই যে দর্শকেরা একটা মানুষ কিংবা একদল মানুষকে মেরে তক্তা বানানোর জন্য সমর্থন যুগিয়ে যাচ্ছে এটার সবটাই কিন্তু হচ্ছে তাদের অবচেতন মনের সাময়িক সক্রিয়তার ফলে। অবচেতন মন যদি ঐ মুহূর্তে চেতন মনের উপর বেশি প্রভাব ফেলতে না পারতো তাহলে মানুষ- ‘দে, আরো দে’ কিংবা ‘ফাটাই ফেল’ টাইপের উক্তি করতো না। যে ব্যক্তি এই ধরনের উক্তি করছে সে নিজেও জানে মানবিক দিক থেকে একজনকে আছাড় মারা একদমই উচিৎ নয় এবং সেটার কোনো সমর্থন তো নয়ই। কিন্তু তারপরেও মানুষ এগুলো করছে। এই যে মানুষ এগুলো করছে সেগুলোতে কিন্তু তাদের সামান্যতম দোষও নেই। ঐ সময়ের সবকিছুই হচ্ছে টেলিভিশনের পর্দায় বেশি মনোযোগ এবং স্বাভাবিক মননের নিজ অবস্থান থেকে সাময়িক বিচ্ছিন্নতার ফলে। কেন মানুষ এমন করে তা জানতে হলে চলে যেতে হবে মানুষের ইতিহাসের লক্ষ লক্ষ বছর আগে।

ধারণা করা হয় ৪০ লক্ষ বছর আগে মানুষের উদ্ভব। [মানুষের উৎপত্তির সময়কালের এই হিসাবগুলো করা হয় সাধারণত ফসিল রেকর্ডের উপর ভিত্তি করে। তাই উৎপত্তির সময়টা মাঝে মাঝে পরিবর্তিত হয়। এখন যে ফসিলটাকে সবচেয়ে বেশি পুরাতন বলে ধরা হচ্ছে, পরবর্তীতে যদি তার থেকেও আগের কোনো ফসিল পাওয়া যায় তাহলে নতুন ফসিলের বয়সের উপর ভিত্তি করে মানুষের উৎপত্তির সময়কাল গণনা করা হবে।] এই লম্বা সময়ের প্রায় সবটাই মানুষ শিকার করে কাটিয়েছে। নগরায়নের ফলে মানুষ সভ্য হয়েছে এই মাত্র ১২ হাজার বছর আগে। তার মানে দেখা যাচ্ছে আজ পর্যন্ত আধুনিক মানুষের ইতিহাসে ৯৯ ভাগেরও বেশি সময় পার করেছে শিকার ও সংগ্রহ করে। প্রতিটা সফল শিকারে ছিল আনন্দ উল্লাস। যত বেশি শিকার করা যেত খাদ্যের যোগান থাকতো তত বেশি। যে যত বড় শিকার করতে পারতো সে ছিল তত বেশি সফল।

মানুষ তার ইতিহাসের বেশিরভাগ সময়ই পার করেছে শিকারি সংগ্রাহক হিসেবে।

এই শিকারি সংগ্রাহক বা Hunter Gatherer সমাজের স্থায়িত্ব কম করে হলেও ৩৯ লক্ষ ৮০ হাজার বছর। এত পরিমাণ সময় ধরে মানুষের মস্তিষ্ক খুন জখম ও হত্যার সাথে খাপ খাইয়ে গড়ে উঠেছে। আমাদের তথা আধুনিক মানুষের মস্তিষ্কের মূল নিয়ামকগুলো তখন থেকেই ধীরে ধীরে গড়ে উঠে স্থায়ী হয়ে বসেছিল। অনেক অনেক পরে মানুষ নগরায়ন ঘটিয়ে সভ্যতার সূচনা করে। কিন্তু মানুষ বাইরে থেকে দেখতে সভ্য হয়ে গেলে কী হবে, ভেতরে রয়ে গেছে আদিম মানুষের প্রকৃতি। আধুনিক মানুষের করোটির ভেতর বাস করছে আদিম প্রস্তরযুগের মস্তিষ্ক।

যেখানে হোমো স্যাপিয়েন্স (আধুনিক মানুষ) প্রজাতির সমস্ত ইতিহাসের ৯৯% এরও বেশি সময় বনে জঙ্গলে পশু শিকার, ফলমূল সংগ্রহ ও গোত্রে গোত্রে যুদ্ধ বিগ্রহ করে কাটিয়েছে সেখানে মস্তিষ্কের প্রায় সবটা জুড়েই যে বন-জঙ্গল, শিকার, যুদ্ধ-বিগ্রহের তথ্যে ঠাসা থাকবে এ আর বিচিত্র কি? সেজন্যই হয়তো আজকের দিনেও একজন অন্যজনকে মারতে দেখলে মানুষের মস্তিষ্কের একটা অংশ উত্তেজিত হয়ে উঠে। সমর্থন যোগায় এবং অবচেতনেই মুখ থেকে বেরিয়ে আসে “মার, আরো মার।” এর সবকিছুই হচ্ছে মানুষের ডিএনএ-তে স্মৃতি হিসেবে থেকে যাওয়া তথ্যের ফলে। আমাদের পূর্ব-পুরুষের অনুভূতি আমাদের রক্তে মিশে আছে। আমাদের ডিএনএ-তে মিশে আছে পূর্বপুরুষদের স্মৃতি। পূর্ব-পুরুষের স্মৃতিই আমরা বংশানুক্রমে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বয়ে চলেছি। আধুনিক মানুষ হয়েও আমি আপনি সকলেই নিজেদের মস্তিষ্কে আদিম মানুষের বীজ ধারণ করছি। এই আধুনিক মানুষের করোটির ভেতর পূর্বপুরুষদের আদিম প্রস্তরযুগের মস্তিষ্ক বাস করার ব্যাপারটাকে বলা হয় ‘সাভানা অনুকল্প’।[ভালোবাসা কারে কয়, অভিজিৎ রায়, শুদ্ধস্বর, ২০১২]

আধুনিক করোটির অভ্যন্তরে বাস করছে প্রাচীন শিকারি সংগ্রাহক সমাজের মস্তিষ্ক।

আধুনিক মানুষের করোটিতে বসবাসরত আদিম মস্তিষ্কের ব্যাপারটা খুব সহজ একটা উদাহরণের মাধ্যমেই অনুধাবন করা যেতে পারে। আজকের যুগে অনেকেই সাপ, তেলাপোকা, মাকড়শা কিংবা টিকটিকি দেখলে আঁতকে উঠে, ভয় পায়। কিন্তু বাস, ট্রাক, পিস্তল ইত্যাদি দেখলে আঁতকে উঠে না। এদের ভয় পায়না বললেই চলে। বনে জঙ্গলে বসবাস করা দিনগুলোতে এসব পোকামাকড়ের বিষাক্ততা ও ক্ষতিকারক প্রতিক্রিয়া এখনো মানুষের স্মৃতিতে রয়ে গেছে। অনেকটা অবচেতনেই আমরা সকলেই এই রয়ে যাওয়া স্মৃতি বহন করি। কিন্তু অন্যদিকে বাস, ট্রাক, অস্ত্র বেশি পরিমাণ ক্ষতিকারক ও মৃত্যুর কারণ হওয়া স্বত্বেও এদের দখলে আঁতকে উঠি না। বাস-ট্রাক, অস্ত্র-শস্ত্র এদের ইতিহাস খুবই অল্প। মাত্র কয়েকদিন আগে এদের উদ্ভব। এদের দেখে আঁতকে উঠার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ স্থায়ী স্মৃতি এখনো মস্তিষ্কে জমা হয়নি। অন্যদিকে লক্ষ লক্ষ বছরে স্থায়ী হওয়া স্মৃতি এত সহজে ছেঁড়েও যাচ্ছে না। যার ফলশ্রুতিতে আমরা আধুনিক ও সভ্য হওয়া স্বত্বেও মাঝে মাঝে বর্বর আচরণ করে থাকি।

তেলাপোকা দেখলে যতটা আতকে উঠি বাস ট্রাক দেখলে ততটা আতকে উঠি না।

এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন চলে আসে- মানবিক গুণগুলোকে কেন ভালো হিসেবে দেখছি। কেন ভালো গুণগুলো বেশি প্রদর্শিত হয়। আর কেনই বা অমানবিক দিকগুলো সুযোগ পেলেই চাগিয়ে উঠে? মানুষ যদি আগে বর্বরই থেকে থাকতো তবে কেন, কিসের লাভে সভ্য হয়ে গেল? কেন নীতিবান হয়ে গেল? সভ্য বা নীতিবান হয়ে যাবার ব্যাপারটাকে গাণিতিকভাবে খুব সহজেই দেখানো যায়। প্রক্রিয়াটার নাম গেম থিওরি। সহিংসতা তথা অনৈতিকতা এবং নৈতিকতার মাঝে এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক আছে। গবেষক স্যামুয়েল বাওয়েল দেখিয়েছেন আদিম শিকারি-সংগ্রাহক সমাজের অনৈতিকতা, বর্বরতা হতেই প্রয়োজনের তাগিদে জন্ম নিয়েছিল নৈতিকতা।

শিকারি-সংগ্রাহক সমাজের অধিকাংশ গোত্রই একে অন্যের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত থাকত। এলাকা দখল নিতো, খাদ্য কেড়ে নিতো, নারী অধিকার করতো। একদলের সাথে আরেকদলের যুদ্ধে লিপ্ত হবার সময় অবধারিতভাবেই অনেকের প্রাণ যেতো। তার মানে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া গোত্র জয়ী হোক আর না হোক প্রাণ কিন্তু যেতো ঠিকই। এভাবে যদি ধীরে ধীরে প্রাণ কমে যেতে থাকে তাহলে তারা বিবর্তনের দিক থেকে অকার্যকর হয়ে যায়। বিবর্তনের দৃষ্টিকোণ থেকে তারাই বেশি পরিমাণ সফল যারা উত্তর প্রজন্ম তথা বেশি পরিমাণ বংশধর রেখে যেতে পেরেছে। অন্যদিকে যারা যুদ্ধ বিগ্রহে কম লিপ্ত হয়েছে তারা টিকে রয়েছে বেশিদিন এবং অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি কম থাকাতে দীর্ঘমেয়াদি সময়ের স্কেলে তারা প্রজন্ম তৈরিতে বেশি সফল। গবেষক বাওয়েল দেখিয়েছেন শিকারি সংগ্রাহক সমাজে যে গোত্রের সদস্যরা পরস্পরকে সহযোগিতা করেছে তারাই প্রকৃতির নির্বাচনে টিকে রয়েছে বেশি। এখানে খুবই সহজ কিন্তু অদ্ভুত উপায়ে অনৈতিকতা থেকে নৈতিকতার উদ্ভব হয়েছে।

ব্যাপারটা আরেকটু পরিষ্কার করা যায় জেলখানার কয়েদীদের দোটানার উদাহরণের মাধ্যমে। প্রিজনার্স ডিলেমা নামে এটি বিখ্যাত। ধরা যাক একজন পুলিশ  একটি খুনের মামলায় দুজন আসামীকে ধরে এনেছে। দুজনের নাম ধরা যাক জাম্বু ও লম্বু। এই দুজনই সন্দেহের তালিকায় উপরে কিন্তু নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না কে আসল অপরাধী কিংবা আদৌ দুজনের মাঝে কেউ অপরাধী কিনা। এই সমস্যার সমাধানের জন্য আসামীদের সামনে কিছু শর্ত উপস্থাপন করা হলো-

  1. দুজনের মাঝে জাম্বু যদি দাবী করে যে,অপর জন তথা লম্বু অপরাধী আর লম্বু যদি নিশ্চুপ থাকে তাহলে জাম্বু মুক্তি পাবে এবং লম্বু ৫ বছরের কারাদণ্ড পাবে। (এখানে জাম্বু বিশ্বাসঘাতকতা করছে লম্বুর সাথে আর লম্বু সহযোগিতা করছে জাম্বুকে।)
  2. জাম্বু, লম্বু দুজনেই যদি নিশ্চুপ থাকে তাহলে উভয়েরই ২ বছরের কারাদণ্ড হবে। (দুজনই দুজনকে সাহায্য করছে।)
  3. দুজনেই যদি এঁকে অপরকে দোষারোপ করে নিজের পিঠ বাঁচিয়ে অপর জনকে অপরাধী বানানোর চেষ্টা করে তবে তাদের প্রত্যেকেরই ৪ বছরের কারাদণ্ড হবে। (জাম্বু লম্বু দুজনই এঁকে অপরের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছে।)
কয়েদীদের দোটানা। ছবিঃ এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা।

এই পরিস্থিতিতে আসামিরা কী করবে? উল্লেখ্য তারা একজনকে আরেকজনকে দেখতে পাবে না। সম্পূর্ণ পরীক্ষাটাই হবে আলাদা আলাদা কক্ষে। জাম্বু নিজের সর্বোচ্চ লাভের জন্য স্বাভাবিকভাবেই লম্বুকে অপরাধী বলতে চাইবে। আর এতে যদি লম্বু নিশ্চুপ থাকে তাহলে জাম্বু ছাড়া পেয়ে যাবে। কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে লম্বু যে জাম্বুকে ছাড় দিয়ে দিবে এমন নিশ্চয়তা নেই। আবার দুইজনই যদি স্বার্থপর হয়ে অপরকে দোষারোপ করে তাহলে ৪ বছর করে দণ্ড পড়বে দুজনের কাঁধে। দেখা যাচ্ছে নিজের স্বার্থের দিক থেকে একচেটিয়া লাভবান হতে চাইলে ক্ষতির সম্ভাবনা বেড়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে এঁকে অপরকে যদি ছাড় দেয়, সাহায্য করে তবে দুজনেরই শাস্তি কমে যাচ্ছে।

ঠিক এরকম পরীক্ষা যদি বারবার পরিচালনা করা হয় তাহলে লম্বু জাম্বুদের মতো সবাই পারস্পরিক সাহায্যের একটা ধারণায় ধীরে ধীরে প্রবলভাবে বিশ্বাসী হয়ে উঠবে। এই পারস্পরিক সাহায্যই তাদের সর্বনিম্ন শাস্তির নিশ্চয়তা। ঠিক এমনি করেই প্রাচীন কালের মানুষেরা নিজেদের মাঝে নৈতিকতা তৈরি করে নিয়েছে। তারা খেয়াল করে দেখেছে যে যে গোত্র পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল তারা বেশি সফলভাবে টিকে রয়েছে। বিপদে একে অপরকে সাহায্য করেছে। ব্যাপারটা এরকমভাবে দেখানো যায়- যে যে গোত্রের সদস্যরা পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল নয় তারা সহানুভূতির অভাবে ধীরে ধীরে সংখ্যার দিক থেকে কমে এসেছে। এমনকি একটা গোত্র যদি বিশ্বাসঘাতকতা করে আপাত লাভবান হয়েও থাকে তারপরেও দেখা যায় পরবর্তীতে এই গোত্রই আবার অন্য কারো দ্বারা আক্রান্ত হয়। যখন তারা আক্রান্ত হয় তাদের কেউ সাহায্য করতে আসে না। কারণ তারা অন্যদের সাহায্য করেনি। তেমনই যারা সহানুভূতিশীল তাদের বিপদের বেলায় অন্যরা সাহায্য করেছে। সাহায্য সহযোগিতা পেয়ে পেয়ে টিকে রয়েছে বেশিদিন। ধীরে ধীরে তাদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এভাবেই প্রয়োজনের তাগিদে, মানুষের সুবিধার জন্য নৈতিকতার জন্ম হয়েছে। বাস্তব জীবনেও আমরা এই গেইম থিওরি মেনে চলি নিজেদের অজান্তেই।

যারা পরস্পরকে সহযোগিতা করেছে তারাই টিকে রয়েছে বেশীদিন। পরস্পরের প্রতি সহযোগিতার মাধ্যমেই পৃথিবীতে শতাব্দীর পর শতাব্দী প্রজাতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা সম্ভব। ছবিঃ Leremy, dreamstime.com

এই ব্যাপারটা আরেকটা প্রশ্নের দিকে নিয়ে যায়। ধীরে ধীরে মানুষ সহানুভূতিশীল ও নৈতিক হয়ে গেলে এখনো কেন কেউ কেউ অমানবিক কিংবা পৈশাচিক আচরণ করে? কিংবা প্রত্যেক ভালো মানুষ তার জীবনে অল্প হলেও অমানবিক কাজ করে থাকে কেন? এই প্রশ্নের উত্তরটা অন্যভাবে আগেই আমরা পেয়ে গেছি। সবটাই হয় মানুষের মস্তিষ্কে স্থায়ী হয়ে থেকে যাওয়া প্রাচীন স্মৃতির ফলে। সাভানা অনুকল্প অনুসারে আধুনিক করোটির ভেতর বাস করছে প্রাচীন শিকারি সংগ্রাহক সমাজের মস্তিষ্ক। এই প্রশ্নের পিঠেও আরেকটা প্রশ্ন এসে পড়ে, মস্তিষ্কের বেশিরভাগই যদি শিকারি সংগ্রাহক সমাজের স্মৃতিতে পূর্ণ থাকে তাহলে তো আমাদের আচরণের বেশিরভাগই হতো শিকারি সংগ্রাহক সমাজের মতো।

আসলে “আধুনিক করোটির ভেতর বাস করছে প্রাচীন শিকারি সংগ্রাহক সমাজের মস্তিষ্ক” এই কথাটির মাঝে একটি সূক্ষ্ম ফাঁক রয়ে গেছে। আধুনিক মানুষের মস্তিষ্ক প্রাচীন সমাজের স্মৃতিতে ঠাসা, এই কথার মানে এই নয় যে প্রাচীন স্মৃতি সবসময়ই থেকে যাবে। বরঞ্চ আমাদের মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে পারিপার্শ্বিকতার সাথে পরিবর্তিত হয়ে চলছে। মানুষের ইতিহাসের ৯৯ ভাগ সময় জঙ্গলে শিকার ও সংগ্রহ করে কাটিয়েছে তাই মস্তিষ্কের স্মৃতিও হবে জঙ্গলের শিকার ও সংগ্রহ কেন্দ্রিক। যদি আধুনিক সভ্যতাকেন্দ্রিক সমাজ অনেক দিন ধরে স্থায়ী হয় বা মানুষ অনেক অনেক দিন আধুনিক পরিবেশে থাকে তাহলে অবশ্যই মস্তিষ্কের স্মৃতিতে সভ্যতা আধিপত্য বিস্তার করবে। হোমো স্যাপিয়েন্সের ভবিষ্যতে এমন একটা দিন হয়তো আসবে যেখানে সময়ের স্কেলে শিকারি সংগ্রাহক সমাজের স্থায়িত্বের শতকরা পরিমাণ ৯৯% থেকে কমে গিয়ে ১০% এরও নীচে চলে আসবে। সময় বয়ে যেতে দিলেই এটা হয়ে যাবে।

এবার আরো একটা ব্যাপারে আসা যাক। উপরে দেখা গেল মানুষের মস্তিষ্কে আগের স্মৃতি রয়ে গেছে বলে মাঝে মাঝে খুন জখমের মাঝে পৈশাচিক আনন্দ পায়। খুন জখমকে উল্লাসের শব্দ উচ্চারণ করে সমর্থন জানায়। মানুষের জীনে স্থায়ী হয়ে থাকা স্মৃতির ৯৯% যদি শিকারি সংগ্রাহক সমাজের হয়ে থাকে তাহলে তো মানুষের মাঝে পৈশাচিক আচরণের পরিমাণই বেশি থাকার কথা। কেন মানুষের মাঝে খারাপ গুণের চেয়ে ভালো গুণের পরিমাণ বেশি দেখা যায়?

মানুষ জৈবিকভাবে বিবর্তিত হবার পাশাপাশি সামাজিকভাবেও বিবর্তিত হয়। মানুষের মননের পরিবর্তনে আশেপাশের পরিবেশ, সমাজ, আইন-কানুন প্রভাব রাখে। সামাজিকতার চাপে মানুষ কিছু কিছু আচার আচরণে অভ্যস্ত হতে বাধ্য হয়। একটা উদাহরণ টানা যায়। ‘ধর্ষণ’ নামক একটা ব্যাপারে মানুষ প্রাচীনকাল থেকেই অভ্যস্ত। আদিম মানুষের গোত্রে গোত্রে যুদ্ধ হলে গোত্রের সম্পদ দখলের পাশাপাশি নারীর দখল নিতো। গণহারে ধর্ষণ করতো। লক্ষ লক্ষ বছরের স্মৃতি এখনো রয়ে গেছে কিন্তু সামাজিকতা ও আইনের চাপে আজকের মানুষ ধর্ষণ করে না বা ধর্ষণকে ঘৃণা করে। আর যদিও আজকের যুগেও কেউ কেউ ধর্ষণ করে সেটা জনসংখ্যার মোট পরিমাণের তুলনায় খুবই কম। পারিপার্শ্বিক সামাজিক পরিবেশ ও  আইনের কারণে মানুষ তার চিরাচরিত কাজ থেকে বিচ্যুত হতে বাধ্য হয়। ঠিক এই কারণেই মানুষের জিনে স্থায়ী হওয়া স্মৃতির বেশিরভাগ বর্বর হওয়া স্বত্বেও মানুষ সভ্য আচরণ করে। অনেকটা জিনোটাইপ ও ফিনোটাইপের মতো। ফিনোটাইপ হচ্ছে বাইরে প্রদর্শিত গুণাবলী যেটা অস্থায়ী। জিনোটাইপ হচ্ছে বাইরের ও অভ্যন্তরের গুণাবলী যেটা স্থায়ী। মানুষের ক্ষেত্রে ফিনোটাইপ হচ্ছে সামাজিক ব্যাপার স্যাপার গুলো যেগুলো যেকোনো সময়ই পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে।

এসব কথা ছাপিয়ে যে কথাটি চলে আসে তা হচ্ছে আদিম মানুষের মাঝে যে শুধুই বর্বরতা ছিল তা কিন্তু না। আদিম মানুষের মাঝেও অনেক মানবিকতা ছিল। সেগুলোও আমরা অবধারিতভাবে পেয়েছি।

আজকের যুগে কেন বর্বরতা ঘৃণিত? এই প্রশ্নের উত্তরে একটা মৌলিক ব্যাপার খেয়াল রাখতে হবে, সভ্যতা একটি চলমান প্রক্রিয়া। যে জিনিস কোনো এক সময় বৈধ ছিল সে একই জিনিস পরবর্তী সময়ে নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছে। যে জিনিসকে আজ ভালো বা সঠিক হিসেবে দেখা হচ্ছে সে জিনিসই একদিন হয়ে যেতে পারে ভুল ও ক্ষতিকারক। যেমন কয়েক দশক আগেও ধুমপান করা ছিল ব্যক্তিত্বের পরিচায়ক। সাহিত্যিক সত্যজিৎ রায় বা আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ছবি কিংবা শেখ মুজিবের ছবি দেখলেই ব্যাপারটা বোঝা যায়। আরো একটা বিখ্যাত উদাহরণ হতে পারে বিপ্লবী চে গুয়েভারার ছবি।

ধুমপানরত অবস্থায় সাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ও বিপ্লবী চে গুয়েভারা।

একটা সময় সিগারেট ফুঁকা ছিল পুরুষত্বের প্রতীক। বনে গিয়ে হরিণ শিকার করা, অতিথি পাখি মারা ছিল সৌখিন কাজের মাঝে একটি। কৃষ্ণাঙ্গদের মানুষ হিসেবে না মনে করা, মানুষকে দাস হিসেবে সারাজীবন খাটানো সবই ছিল বৈধ, সবই ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু আজকের যুগে দাস প্রথা নিষিদ্ধ, বন্যপ্রাণী হত্যা করা কাপুরুষতার পরিচায়ক এবং দণ্ডনীয় অপরাধ। কিছু কিছু দেশে প্রাকাশ্যে ধুমপান রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ, কিছু কিছু দেখে রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ না হলেও সামাজিকভাবে নিষিদ্ধ। সমগ্র পৃথিবীতেই ধূমপানকে খারাপ চোখে দেখা হয়।

আজকের দিনে কোনো একটা কাজকে যেভাবে দেখা হচ্ছে, অদূর ভবিষ্যতে তা হয়ে যেতে পারে বিপরীত। মানুষের অস্তিত্বের টিকে থাকার প্রশ্নে বর্বরতা কখনোই ভালো ফল বয়ে আনতে পারে না। তাই সহজ প্রক্রিয়াতেই বর্বরতা ঘৃণিত হবে। সামাজিক চাপ ও প্রভাব এতে নিয়ন্তার ভূমিকা পালন করে।

মানুষের পৈশাচিক ও নৈতিক মস্তিষ্ক

আমাদের খুলির ভেতর মস্তিষ্কের তিনটি অংশ রয়েছে। গোড়ার অংশটি সরীসৃপীয় মস্তিষ্ক,মাঝেরটি স্তন্যপায়ীদের আর বাইরেরটি প্রাইমেট বর্গ তথা মানুষের। এদের নামগুলো যথাক্রমে হিন্ডব্রেইন (পশ্চাত মস্তিষ্ক) মিড ব্রেইন (মধ্য মস্তিষ্ক) ও ফোর ব্রেইন (অগ্রমস্তিষ্ক)। [এটা মস্তিষ্কের একটা সরলীকৃত শ্রেণীবিভাগ। যদিও অনেক বিশেষজ্ঞই মস্তিষ্কের এই বিভাজনকে অনুপযুক্ত মনে করেন কিন্তু তবুও প্রাথমিকভাবে বুঝতে গেলে এটা অনেক কার্যকর। ]

গাঢ় কালো অংশে দেখানো হিন্ডব্রেইন, মিড ব্রেইন ও ফোর ব্রেইন। ছবিঃ NINDS।

গোড়ার সরীসৃপীয় অংশে নিয়ন্ত্রিত হয় ক্রোধ, ঘৃণা, উগ্রতা, লালসা, কামনা ও হিংস্রতা সহ অন্যান্য ব্যাপারগুলো। যেগুলো প্রাণের বিবর্তনের ধারায় একসময় খুব প্রয়োজনীয় ছিল। মাঝের স্তন্যপায়ী অংশে বিশ্বস্ততা, আনুগত্য, সহ দেহ পরিচালনার অন্যান্য কাজ নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন শ্বাস-প্রশ্বাস, পরিপাক ইত্যাদি। সবার উপরে এবং তুলনামূলকভাবে আকারে অনেক বড় অংশটিতে নিয়ন্ত্রিত হয় অধিকাংশ মানবিক দিকগুলো। নৈতিকতা এবং একটা বিষয়কে যৌক্তিকভাবে বিশ্লেষণ করার কাজটি সম্পন্ন হয় এই অংশে। যেমন কারো সাথে জমি নিয়ে নিয়ে লড়াই লাগলে লড়াইয়ে যে পরিমাণ ক্ষতি হবে এবং জমিতে যে পরিমাণ লাভ হবে তার তুলনামূলক বিশ্লেষণ। যে কাজটি করলে অধিক লাভবান হওয়া যাবে সেটি করার সিদ্ধান্ত নেয় এই অংশটি। মানুষের মস্তিষ্কের এই তিনটি অংশ একই সাথে অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়ায় আমাদের দৈনন্দিন কাজগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। আমাদের মানুষ নামক সত্ত্বাটির ভেতর একই সাথে ভালো, মন্দ ও পশুত্ব বিরাজ করে। এ বিষয়ে আরাফাত রহমানের দেয়া সুন্দর একটি উদাহরণ

“ধরা যাক পরকীয়ায় লিপ্ত কোন ভদ্রলোকের কথা। তিনি বিবাহিত, নিজের স্ত্রীকে ভালোওবাসেন। কিন্তু অন্য নারীর প্রতি অদিম আসক্তি এড়াতে পারছেন না। তাই নিজের স্ত্রীর সাথে প্রতারণা করেন অন্য রমণীর সাথে সম্পর্ক গড়ার জন্যে। তিনি নতুন সম্পর্কের পরিতৃপ্তি উপভোগ করছেন। একই সাথে নিজ স্ত্রীর সাথে বিশ্বাসঘাতকতার কারণে মনে মনে অপ্রসন্ন হয়ে আছেন। আবার আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য যৌক্তিক কারণও খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন।

উপরের প্রত্যেকটি ঘটনা ঘটছে ওই ব্যক্তির মস্তিষ্কের ভিন্ন ভিন্ন অংশে। তার সরীসৃপীয়-মস্তিষ্ক লালসা অনুযায়ী কাজ করে তা উপভোগ করছে। ওদিকে স্তন্যপায়ীর মস্তিষ্ক দেখছে যে তিনি স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসার পারস্পারিক বিশ্বাস ভেঙে ফেলেছেন। এজন্য মনে একটা দুঃখভাব অপ্রসন্নতা তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে মানবীয় নতুন-মস্তিস্ক অজুহাত খুঁজে চলছে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্যে।” [মস্তিস্ক ঘুম ও স্বপ্ন, আরাফাত রহমান, প্রকৃতি পরিচয়, ২০১৫ (জ্ঞান ও সভ্যতা গ্রন্থমালা)]

আমরা কি মানুষ হতে পেরেছি?

মানুষ হওয়া বলতে ইতিবাচক, সহযোগিতামূলক সর্বোপরি মানবিক দিক থেকে উৎকর্ষ ঘটাকে বোঝায়। আমরা মানুষেরা হয়তো বলে থাকব আধুনিক যুগের আমরা মানুষ হয়ে গেছি। কিন্তু আসলেই কি হতে পেরেছি? আমাদের চারপাশে চলছে অস্ত্রের খেলা। যে দেশ অস্ত্রের দিক থেকে যত বেশি সমৃদ্ধশালী সে দেশ তত বেশি শক্তিশালী। প্রত্যেক দেশই প্রতিযোগিতা করছে কার চেয়ে কে বেশি বিধ্বংসী অস্ত্র তৈরি করতে পারে। সবাই চেষ্টা করছে কীভাবে একটি মাত্র অস্ত্র দিয়ে অধিক সংখ্যক মানুষ মারা যাবে। যে অস্ত্রে যত বেশি মানুষ মারা যাবে সে অস্ত্র তত বেশি দামী, তত বেশি চাহিদাসম্পন্ন। বড় বড় দেশগুলোর বাজেটে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ বরাদ্দ দেয়া হয় অস্ত্রে। বিজ্ঞানীদের নিয়ে বিলিয়ন বিলিয়ন টাকার গবেষণা প্রজেক্ট সম্পন্ন হয়। একটা মাত্র নিউক্লিয়ার বোমা দিয়ে এক নিমিষে কয়েক লক্ষ মানুষ মেরে ফেলা যায়। হাজার হাজার বছরে গড়ে উঠা একটা শহর কয়েক মিনিটে গুড়িয়ে দেয়া যায়। অস্ত্র সম্পর্কিত এই সব কাজই করছে মানুষ। একজন মানুষকে মারার জন্য আরেকজন মানুষ। ভিনগ্রহী কোনো জীব নয়।

১৯৪৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি মাত্র বোমার আঘাতে মুহূর্তের মাঝে ধ্বংস হয়ে যাওয়া হিরোশিমা শহর। ছবিটি ১৯৪৬ সালের মার্চে তোলা।

আমাদের কেউ কেউ হয়তো মনে মনে বলতে পারে এসব তো রাষ্ট্রীয় ব্যাপার স্যাপার। রাষ্ট্র চালাতে গেলে এইসব কিছু লাগেই। দেশে দেশে যুদ্ধ হতেই পারে এবং এতে প্রাণ যেতেই পারে। কিন্তু আমাদের আশেপাশে তাকিয়ে দেখলে পৈশাচিকতার অনেক নজিরই দেখা যাবে। সাম্প্রতিক কালের নজির অভিজিৎ রায়। অভিজিৎ রায় ছিলেন দুই বাংলার শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞান লেখক। একটা মতের উপর তার সমর্থন ছিল এবং সেটার উপর তিনি কিছু লেখালেখি করেছিলেন। এই লেখালেখিতে ক্ষুব্ধ হয়ে কিছু উগ্র মৌলবাদী তাকে প্রকাশ্যে রাস্তায় চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে জখম করে মেরে ফেলে। একজন ব্যক্তি কলম দিয়ে কিছু একটা লিখেছেন আর তার জবাবে কলমের উত্তর না পেয়ে পেয়েছে চাপাতির কোপ এবং ফলাফল হয়েছে মৃত্যু। এটা আমাদের মানুষকুলের পৈশাচিকতা নয় কি?

আমরা আমাদেরকে যতই মানুষ বলে মনে করি আদতে আমরা শতভাগ মানুষ নই। সামাজিকভাবেও আমরা মনুষ্যত্ব থেকে বিচ্যুত পাশাপাশি জৈবিকভাবেও বিচ্যুত। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি সেই সময় কখন আসবে যখন মানুষের পৈশাচিকতার কোনো প্রভাবই থাকবে না। এমন একটা সময় দ্রুতই চলে আসুক যেখানে মানুষের স্মৃতিতে খেলা করবে বিজ্ঞান ও গণিতের সৌন্দর্য। আদিম খুনোখুনির স্মৃতি যা-ই থাকবে তা হবে একদমই প্রভাবমুক্ত। সে সময় কখন আসবে যখন আধুনিক মননশীল স্মৃতির পরিমাণ এতই বেশি হবে যে তার প্রভাবে পৈশাচিক স্মৃতি একদমই তলিয়ে যাবে?

চুড়ান্ত তথ্যসূত্র

  1. ভালোবাসা কারে কয়, অভিজিৎ রায়, শুদ্ধস্বর, ২০১২
  2. তিন মস্তিষ্কের টানাপোড়ন, আরাফাত রহমান
  3. The Guardian
  4. বিশেষ কৃতজ্ঞতাঃ ইমতিয়াজ আহমেদ (সম্পাদক, বিজ্ঞান পত্রিকা)

-সিরাজাম মুনির শ্রাবণ
সহ-সম্পাদক, বিজ্ঞান ব্লগ
[ফেসবুক প্রোফাইল]

বিজ্ঞান পত্রিকা প্রকাশিত ভিডিওগুলো দেখতে পাবেন ইউটিউবে। লিংক:
১. টেলিভিশনঃ তখন ও এখন
২. স্পেস এক্সের মঙ্গলে মানব বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা

Exit mobile version