বিজ্ঞান পত্রিকা

মহাকাশেও আধিপত্য বিস্তারের ঘোষণা দিল উত্তর কোরিয়া

উত্তর কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মাঝে বিদ্যমান স্নায়ুযুদ্ধ সম্পর্কে আমরা সবাই কমবেশি কিছুটা হলেও জানি। শক্তিমত্তার প্রকাশ ও আধিপত্য বিস্তারে তারা সবসময় একে অপরকে টেক্কা দিতে চায়। তাদের এই প্রতিযোগিতা এবার পৃথিবীর গণ্ডি ছেড়ে মহাকাশেও ছড়িয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে।

সম্প্রতি গণপ্রজাতন্ত্রী উত্তর কোরিয়ার সরকার তাদের আগামী পাঁচ বছরের কর্ম পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। তারা ২০২০ সালের মধ্যে আরো অত্যাধুনিক ও উন্নত উপগ্রহ পৃথিবীর কক্ষপথে প্রেরণের পরিকল্পনার কথা সেখানে উল্লেখ করেছে। তারা এখন সামরিক বিরোধ,মানবাধিকার লঙ্ঘনের পথ পরিহার করে মহাশূন্যে রাজত্বের কথা ভাবছে। এমনকি তাদের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা কিম জং উনের নির্দেশে ২০২০ সালের মধ্যেই উত্তর কোরিয়া চাঁদে মানুষবিহীন মহাকাশযান পাঠানোর জন্য জোর চেষ্টা চালাচ্ছে।

উত্তর কোরিয়ার জাতীয় মহাকাশযান উন্নয়ন সংস্থার বৈজ্ঞানিক গবেষণা বিভাগের পরিচালক হাইওন কুয়াং ইল। এক সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন,তারা পৃথিবীকে প্রদক্ষিণকারী উপগ্রহের উন্নতি সাধনে পরিকল্পনা করছেন। এছাড়াও ভূস্থির উপগ্রহের আধুনিকায়নে তারা খুবই আগ্রহী।কারণ এর ফলে পৃথিবীর এক প্রান্তের সাথে অপর প্রান্তের যোগাযোগ আরও নিবিড় হবে বলে তিনি মনে করেন। এখন পর্যন্ত আমেরিকাই পৃথিবীর একমাত্র দেশ যারা চন্দ্রাভিযানে মানুষ পাঠিয়ে সফল হয়েছে। তবে সোভিয়েট ইউনিয়ন,ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা,জাপান,ভারত ও চীনও চাঁদে মহাশূন্যযান পাঠিয়েছে।কিন্তু তাতে কোন মানুষ ছিল না।

উত্তর কোরিয়ার প্রযুক্তিগত শক্তির বিচারে এই পরিকল্পনাকে  অনেক উচ্চাভিলাষী বলা যেতে পারে। অনেক বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞ একে রীতিমত অসম্ভবই মনে করছেন। একনায়কতন্ত্রে বিশ্বাসী পূর্ব এশিয়ার এই দেশটি এখন পর্যন্ত মাত্র দুইটি উপগ্রহ কক্ষপথে স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। প্রথমটি উৎক্ষেপন করা হয়েছিল ২০১২ সালে।দ্বিতীয়টি নিক্ষেপ করা হয় এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে। উপগ্রহটির নাম রাখা হয় কুয়াংমিয়ংসং-৪। বাংলায় এর অর্থ দাঁড়ায় “উজ্জ্বল নক্ষত্র-৪”।

জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও স্যাটেলাইট বা উপগ্রহ বিশেষজ্ঞ জোনাথন ম্যাকডোয়েল মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং সৌভিয়েত ইউনিয়নের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপন ও তাদের চন্দ্রাভিযানের মধ্যকার সময় বিবেচনা করলে উত্তর কোরিয়ার পক্ষে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব। যদিও তাদের উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা এখনও বহাল রয়েছে যা তাদের এই পরিকল্পনার পথে একটি বড় বাধা। তবে তা সত্ত্বেও এই নির্জনবাসী দেশটি আগের চেয়ে অনেক আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে।

হাইওন কুয়াং ইল দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা তাদের মহাশূন্য পরিকল্পনা নস্যাৎ করার যত চেষ্টাই করুক না কেন,অদূর ভবিষ্যতে মহাকাশে রাজত্ব করবে উত্তর কোরিয়াই।

Exit mobile version