নেপালে বাঘের প্রতি বলতে গেলে একটা অবিচার চলে আসছিল। বাঘ শিকার করে বিলাস হিসেবে তার হাড় চূর্ণ করে পানীয়ের সাথে খাওয়া কিংবা কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসে আচ্ছন্ন হয়ে অসুস্থতা থেকে বাঁচার জন্য বাঘের চোখ রান্না করে খাওয়া ছিল নেপালের সাধারণ ঘটনা। এরকম করতে করতে বাঘের জনসংখ্যার প্রায় ৯৩ শতাংশ শেষ হয়ে যায়।
অন্য দিক থেকেও বাঘের ভাগ্য আরো খারাপ। যেমন সম্প্রতি বাংলাদেশে বাঘের এলাকা সুন্দরবনে পরিবেশ দূষণের হুমকি হিসেবে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা হচ্ছে, যা বাঘের বসবাসের এলাকা, খাদ্য সহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাকে কমিয়ে দেবে। সুন্দরবনে বাঘের বসবাসের এলাকা ধীরে ধীরে কমে আসছে। তার উপর আরো একটি নেতিবাচক খবর হচ্ছে অধিকাংশ বাঘই চিড়িয়াখানায় বা বন্দী অবস্থায় দিন পার করছে। উত্তর আমেরিকায় খাঁচায় বন্দী বাঘের সংখ্যা স্বাধীনভাবে ঘুরে বেরানো বাঘের চেয়ে বেশি।
তবে এই প্রজাতিটি সম্বন্ধে এতসব নেতিবাচক সংবাদের পাশাপাশি মাঝে মাঝে ইতিবাচক সংবাদও পাওয়া যায়। যেমন নেপাল সম্প্রতি তার এলাকায় যে পরিমাণ বাঘ অবশিষ্ট ছিল তাদেরকে পরিমাণে দ্বিগুণ করতে সফল হয়েছে। পরিবেশ সংরক্ষণবাদীরা এর পেছনে কাজ করেছিল।
২০১৩ সালের একটি জরিপ থেকে দেখা যায় নেপালে বেঙ্গল টাইগার আছে মাত্র ১৯৮ টি। বাঘের অস্তিত্বের জন্য যা আশঙ্কাজনক খবর। পরবর্তীতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয় এবং সম্প্রতি এক জরিপ থেকে দেখা যায় বাঘের পরিমাণ প্রায় ৯০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রায় দ্বিগুণ।
গবেষকরা এর জন্য বাঘের পদচিহ্ন, তাদের শিকার, তাদের চলাফেরা এবং বাঘের গায়ের ডোরাকাটা দাগ পর্যবেক্ষণ করেন। কারণ জরিপ করতে হলে বাঘকে আলাদা আলাদাভাবে শনাক্ত করতে হবে। গণনায় একই বাঘ একাধিকবারও চলে আসতে পারে। তবে আশার কথা হচ্ছে বাঘের গায়ের ডোরাকাটা দাগ কখনো এক হয় না। মানুষের আঙুলের ছাপ যেমন একজনের সাথে আরেকজনের কোনো মিল নেই তেমনই বাঘের গায়ের ডোরাকাটা দাগও কোনোটির সাথে কোনোটির মিল নেই। শনাক্ত করার জন্য আবার বিশেষ ধরনের ক্যামেরা ব্যবহার করেছে জরিপকারী দল।
জুলাইয়ের ২৯ তারিখ বিশ্ব বাঘ দিবস। এই দিবসে নেপালের বাঘের বৃদ্ধির খবর প্রকাশ করা হয়।
নেপাল সহ অন্যান্য অনেক দেশেই বন্য প্রাণী সংরক্ষণের আইন আছে। বাংলাদেশেও আছে কিন্তু প্রয়োগ নেই। যার কারণে মানুষ অবাধে প্রাণী ধ্বংসের অদূরদর্শী কাজ করে থাকে অহরহ। প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে নেপাল বন্য প্রাণী সংরক্ষণের আইনের কঠোর প্রয়োগ করেছিল। পাশাপাশি বাঘের জন্য কিছু এলাকাকে অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করেছিল। আইনের কঠোর প্রয়োগ ও সচেতনতা সৃষ্টির ফলেই এই অর্জন সম্ভব হয়েছে। বাঘের এই প্রজাতি বিলুপ্তির মুখে আছে, নেপালের এই উদ্যোগ বাঘকে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচাতে পারে। বাংলাদেশও নেপাল থেকে শিক্ষা নিয়ে আইন দৃঢ়ভাবে প্রয়োগ করতে পারে। এটা আদতে বাস্তুসংস্থানকে টিকিয়ে রাখা। আর বাস্তুসংস্থানকে স্বাভাবিক রাখা মানে আমাদের নিজেদেরকেই উপকার করা। আমাদের নিজেদের প্রয়োজনেই বন্যপ্রাণীদের সংরক্ষণ করা উচিৎ।
নেপালে বাঘের জন্য প্রায় ২ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাকে অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়। Zoological Society of London-এর একটি দল এই এলাকাটির পর্যবেক্ষণে ছিল। এই এলাকার মাঝে আছে ট্রপিক্যাল বন, সাব-ট্রপিক্যাল বন, তৃণভূমি এবং কিছু নদী-নালা। সব মিলিয়ে বাঘের বংশবিস্তারের জন্য উপযুক্ত একটি এলাকা। [ iflscience.com zsl.org অবলম্বনে]
-সিরাজাম মুনির শ্রাবণ