এই গ্রীষ্মে রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলের তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। সচরাচর যে স্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকে তারচেয়ে ১০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বেড়ে গেছে এক লাফে। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়াতে ঐ এলাকার পার্মাফ্রস্টের স্তর গলে গেছে। পার্মাফ্রস্ট হচ্ছে ভূগর্ভস্থ চিরহিমায়িত অঞ্চল। ভূমির কোনো অঞ্চল যদি বরফের সাথে মাটি বা পাথর মিলে একাধিক স্তর গঠন করে এবং তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে থাকে তাহলে ঐ অঞ্চলকে পার্মাফ্রস্ট বলা হয়। যদি কোনো স্থান বছরের পর বছর ধরে বরফ হিসেবে থাকে তাহলে তার উপর ধীরে ধীরে মাটির স্তর তৈরি হতে পারে। ঐ মাটিতে গাছপালা বা বনের জন্ম হতে পারে এবং পশুপাখিও বাস করতে পারে। রাশিয়ার পশ্চিম অঞ্চলে তথা সাইবেরিয়ায় বড় এলাকাব্যাপী এমন পার্মাফ্রস্ট আছে।
সম্প্রতি তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়াতে ঐ অঞ্চলে বাজে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ধারণা করা হয় ১৯৪১ সাল থেকে সাইবেরীয় পার্মাফ্রস্টে বিভিন্ন রোগের জীবাণু- ব্যাকটেরিয়া ভাইরাসের অস্তিত্ব আছে। যেমন অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু। তাপমাত্রা নিম্ন থাকাতে এতদিন এই জীবাণুরা মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি। কিন্তু সাম্প্রতিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে এরা বংশবিস্তার ও আক্রমণ করার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ পেয়েছে।
NBC News এর মতে, এমন পরিস্থিতির মূল রচিত হয়েছে আজ থেকে ৭৫ বছর আগে। ঐ সময়ে কোনো একটি হরিণ প্লেগ রোগে আক্রান্ত হয়ে এই অঞ্চলে প্রবেশ করেছিল এবং বরফ ঠাণ্ডা অঞ্চলে মারা গিয়েছিল। এর দেহের সাথে জীবাণুগুলো রয়ে গিয়েছিল সুপ্ত ও অক্ষত অবস্থায়। ব্যাকটেরিয়া ভাইরাসরা অনেক অনেক দিন সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে। অনেকদিন বললে ভুল হবে, বলতে হবে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে। কালের চক্রে এতদিন পর ২০১৬ সালে ঐ এলাকার তাপমাত্রা বেড়েছে এবং এতে ব্যাকটেরিয়াগুলো কার্যক্ষমতা অর্জন করে হরিণ ও অন্যান্য প্রাণীকে আক্রান্ত করে চলছে।
এসব জীবানু প্রাণীর গায়ে ভর করে সমগ্র এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে এবং এক সময় প্রাণীর গণ্ডি পেরিয়ে মানুষকেও আক্রান্ত করে ফেলেছে। সাইবেরিয়ার গভর্নর দিমিত্রি কবিলকিন ঐ অঞ্চলে জরুরী অবস্থার ঘোষণা দিয়েছেন। ঐ অঞ্চলের মানুষেরা এই দুর্যোগের পেছনে বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে দায়ী করছে।
এখন পর্যন্ত প্রায় ৭২ জন মানুষ অ্যানথ্রাক্সের আক্রমণে হাসপাতালে ভর্তি আছে। এতে আক্রান্ত হয়ে একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ব্যাকটেরিয়া মুক্তি পাবার পরে গত এক সপ্তাহের মাঝেই ১ হাজার ৫০০ এর মতো বলগা হরিণ মারা গেছে এতে আক্রান্ত হয়ে। এখন পর্যন্ত এর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩০০ তে।
উল্লেখ্য অ্যানথ্রাক্স একপ্রকার বিচ্ছিরি রোগ যা Bacillus anthrasis নামক ব্যাকটেরিয়ার কারণে সংঘটিত হয়ে থাকে। অ্যানথ্রাক্স সম্পর্কে মিশৌরি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাকটেরিয়াবিদ জর্জ স্টুয়ার্ট ২০১৪ সালে একটি মাধ্যমকে বলেন “এই রোগের ব্যাকটেরিয়াগুলো খুব ক্ষমতাবান, দিনের পর দিন প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে পারে। যখনই পরিবেশ শীতল হয়ে যায় এরা নিজেদেরকে স্পোরে পরিণত করে নেয়। এরপর লম্বা সময়ের টার্গেট নিয়ে গুটি চালতে থাকে, তাপমাত্রা অনুকূলে আসার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। যখন উপযুক্ত তাপমাত্রার দেখা পায় তখন তারা আরো শক্তিশালী হিসেবে নিজেদের রাজত্ব বিস্তার করে।”
– সিরাজাম মুনির শ্রাবণ