যে পৃথিবীতে বসবাস করছি তা অনেক বিশাল। সমুদ্রের পাড়ে দাঁড়ালে বোঝা যায় কতটুকু বিশালতা ধারণ করছে নীল এই পৃথিবীটি। কিন্তু স্বাভাবিক চোখে পৃথিবীকে খুব বিশাল মনে হলেও মহাজাগতিক স্কেলে পৃথিবী একদমই ছোট একটি বস্তু। এমনকি খুব ক্ষুদ্র জগত সৌরজগতের সাথে তুলনা করলেও পৃথিবীর ক্ষুদ্রতা মোটা দাগে চোখে পড়ে। সৌরজগতের পঞ্চম গ্রহ বৃহস্পতির তুলনায়ও পৃথিবী অনেক ছোট। নাসার মতে প্রায় ১ হাজারটা পৃথিবী ঢুকে যেতে পারবে বৃহস্পতির বুকে। সামান্য একটি গ্রহের তুলনায়ও পৃথিবীকে ক্ষুদ্র বলে মনে হয়। সূর্যের সাথে তুলনা করলে, প্রায় ১ মিলিয়নেরও বেশি পরিমাণ পৃথিবীকে সূর্যে তার বুকে ধারণ করতে পারবে।
এত বিশাল সূর্যকেও খুব ক্ষুদ্র মনে হবে যদি আরেকটি বড় তারার সাথে তুলনা করা হয়। তারাদের শ্রেণীবিন্যাসে সূর্য ছোট ধরনের তারা (G-Type)। এমন কিছু তারা আছে যারা অনেক অনেক বিশাল। এখন পর্যন্ত জানা সবচেয়ে বড় তারাটি হচ্ছে UY Scuti। প্রায় ১৭ হাজারের চেয়েও বেশি পরিমাণ সূর্য এর ভেতরে জায়গা করে নিতে পারবে। তবে আকৃতিতে হাজার গুণ বিশাল হলেও ভরের দিক থেকে এত বেশি পরিমাণ বেশি নয় এই তারাটি। এটি সূর্যের চেয়ে মাত্র ৩০ গুণ ভারী। নক্ষত্রের বেলায় আকারে বড় হলেই ভরে বেশি হয়ে যায় না। ভর ও আকার পরস্পর সম্পর্কযুক্ত নয়।
ভরের দিক থেকে কিংবা মাঝে মাঝে আকারের দিক থেকে বিশালতায় এর পরেই আসে ব্ল্যাকহোলের নাম। ব্ল্যাকহোলকে পেরিয়ে গেলে আসবে সুপারম্যাসিভ (অতিভারী) ব্ল্যাকহোলের নাম। এই ধরনের অতিভারী ব্ল্যাকহোলগুলো সাধারণত গ্যালাক্সির কেন্দ্রে অবস্থান করে। আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রেও এমন একটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল আছে। এটি সূর্য থেকে চার মিলিয়ন গুণ বেশি ভারী। এখন পর্যন্ত শনাক্ত করা সবচেয়ে ভারী ব্ল্যাকহোলটি সূর্য থেকে ২১ মিলিয়ন গুণ ভারী। এটি অবস্থান করছে কোমা ক্লাস্টারে। অনেকগুলো গ্যালাক্সি মিলে ক্লাস্টার গঠন করে। কোমা ক্লাস্টারের অধীনে প্রায় ১ হাজারের মতো গ্যালাক্সি আছে।
গ্যালাক্সিগুলো আকারে অনেক বিশাল হয়ে থাকে। একটি গ্যালাক্সি সিস্টেমে অনেকগুলো তারা, গ্রহ, উপগ্রহ, বামন গ্রহ, গ্রহাণু, ধূমকেতু, ধূলিকণা ইত্যাদি সব আছে। বিশালতায় এরা সাধারণ মানুষের কল্পনাকেও হারিয়ে দিতে পারে। আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি প্রায় ১ লক্ষ আলোক বর্ষ পরিমাণ বিস্তৃত। অর্থাৎ কেউ যদি মিল্কিওয়ের এক প্রান্ত থেকে শুরু করে প্রতি সেকেন্ডে তিন লক্ষ কিলোমিটার করে এগিয়ে যায় এবং দিন রাতের কোনো বিরতি না থাকে তাহলে পুরোটা পার হতে ১ লক্ষ বছর লেগে যাবে।
গ্যালাক্সিদের মাঝে কোনটা সবচেয়ে বড় তা নির্ণয় করা একটু কঠিন। কারণ এর স্বাভাবিক কোনো সীমা থাকে না। গ্রহ নক্ষত্রের পাশাপাশি এদের গ্যাসীয় বহিরাবরণও থাকে। যেমন আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিরও গ্যাসীয় বহিরাবরণ আছে। তবে এখন পর্যন্ত নির্ণয় করা সবচেয়ে বড় গ্যালাক্সিটি কয়েক মিলিয়ন আলোক বর্ষ পর্যন্ত বিস্তৃত।
এর চেয়েও বড় আকৃতির সিস্টেম হচ্ছে গ্যালাক্সি ক্লাস্টার। অনেকগুলো গ্যালাক্সি একত্রে মিলে একটা মহাকর্ষীয় আকর্ষণে বাঁধা পড়ে ক্লাস্টার গঠন করে। আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিও আরো প্রায় দুই ডজন গ্যালাক্সির সাথে মিলে একটা ক্লাস্টারের অন্তর্গত। এই ক্লাস্টারের অধীনে এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সিও আছে।
গ্যালাক্সি ক্লাস্টারের চেয়েও বড় কিছু থাকতে পারে এই ব্যাপারটি ভাবতেও সাহস লাগে। ১৯৮০ এর আগে এমন কোনোকিছু পাওয়া যায়নি যা ক্লাস্টারের চেয়ে বড়। ১৯৮০ সালের দিকে জ্যোতির্বিদরা খেয়াল করে দেখলেন অনেকগুলো ক্লাস্টার মিলেও অভিন্ন একটি অভিকর্ষীয় আকর্ষণের অধীনে থাকতে পারে। এই ধরনের অতি-বিশাল সিস্টেমকে বলা হয় সুপার ক্লাস্টার।
এখন পর্যন্ত জানা সবচেয়ে বড় সুপার ক্লাস্টার হচ্ছে Hercules-Corona Borealis Great Wall। এটির ব্যাপারে প্রথম নিশ্চিত ধারণা হয় ২০১৩ সালে। এটি এতই বিশাল যে এর বিস্তৃতি ১০ বিলিয়ন আলোক বর্ষ। অর্থাৎ সেকেন্ডে ৩ লক্ষ কিলোমিটার করে গেলে এর একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত যেতে ১০ বিলিয়ন বছর লেগে যাবে। উল্লেখ্য এই মহাবিশ্বেরই বয়স ১৩.৭ বিলিয়ন বছর। সেই তুলনায় এর বিশালতা কল্পনাতীত। এখন পর্যন্ত এটিই এই মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় জিনিস বা সিস্টেম।
-সিরাজাম মুনির শ্রাবণ
বিজ্ঞান পত্রিকা প্রকাশিত ভিডিওগুলো দেখতে পাবেন ইউটিউবে। লিংক:
১. টেলিভিশনঃ তখন ও এখন
২. স্পেস এক্সের মঙ্গলে মানব বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা