বিজ্ঞান পত্রিকা

প্রাণ ধারণে সক্ষম নতুন দুটি গ্রহের সন্ধান দিয়েছে কেপলার টেলিস্কোপ

বিজ্ঞানীদের একটি আন্তর্জাতিক দল মহাশূন্যে স্থাপিত নাসার কেপলার টেলিস্কোপ ব্যবহার করে ১০০ টিরও বেশি বহির্জাগতিক গ্রহের সন্ধান পেয়েছে। এদের মাঝে দুটি গ্রহ প্রাণ ধারণে সক্ষম, অর্থাৎ এই গ্রহ দুটি প্রাণ-বান্ধব অঞ্চলে অবস্থিত।

গ্রহ দুটি যে নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরছে সেটি পৃথিবী থেকে ১৮১ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। কেউ যদি ঐ গ্রহ দুটির উদ্দেশ্যে রওনা দেয় এবং প্রতি সেকেন্ডে ৩ লক্ষ কিলোমিটার করে পথ পারি দেয় তাহলে ঐ গ্রহে পৌঁছতে ১৮১ বছর লেগে যাবে।

৪ টি আবর্তনরত গ্রহকে নিয়ে ১৮১ আলোকবর্ষ দূরের এই নক্ষত্রটির পরিবার। নক্ষত্রের নাম রাখা হয়েছে K2–72। এটি একটি লোহিত বামন নক্ষত্র। আকারে সূর্যের চেয়ে ছোট এবং তাপ-আলোক বিকিরণের পরিমাণও সূর্যের চেয়ে কম। তারা মানচিত্রের Aquarius (কুম্ভ) এর দিকে টেলিস্কোপ তাক করলে K2–72’র দেখা পাওয়া যাবে।

গবেষকরা ধারণা করছেন গ্রহের চারটিই পাথুরে। গ্রহগুলো পৃথিবীর তুলনায় ২০ থেকে ৫০% বড়। চারটি গ্রহের মাঝে দুটি গ্রহ K2-72c ও K2-72e প্রাণ-বান্ধব অঞ্চল বা habitable zone এর ভেতর অবস্থিত।

প্রাণ-বান্ধব অঞ্চল বলতে সে অঞ্চলকে বোঝানো হয় যে অঞ্চলে কোনো গ্রহ তার সূর্য থেকে এমন পরিমাণ দূরত্বে অবস্থিত থাকে যেখানে প্রাণ ধারণের জন্য পানি সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের উপস্থিতি থাকতে পারে। এর থেকে কম হলেও সমস্যা বেশি হলেও সমস্যা। গ্রহ যদি তার নক্ষত্রের খুব কাছে থাকে তাহলে নক্ষত্রের তাপের ফলে সেখানে পানির কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। সমস্ত গ্রহে শুধু ধু ধু উত্তপ্ততা বিরাজ করবে। আবার গ্রহ যদি নক্ষত্র থেকে বেশি দূরে অবস্থান করে তাহলে অতি মাত্রায় শীতলতার কারণেও সেখানে প্রাণ ধারণ করা সম্ভব হবে না। এইসব শর্ত বিচারে নক্ষত্র থেকে দূরত্ব বেশিও না কমও না এরকম অঞ্চলকে প্রাণ-বান্ধব অঞ্চল বলা হয়। সূর্য নামক নাক্ষত্রিক সিস্টেমের মাঝে পৃথিবীর অবস্থান প্রাণ-বান্ধব অঞ্চলের চমৎকার একটি উদাহরণ।

চিত্রঃ পৃথিবী হচ্ছে প্রাণ-বান্ধব অঞ্চলের চমৎকার একটি উদাহরণ।

প্রাণ-বান্ধব অঞ্চল আবার নক্ষত্রের আকার বা ভরের উপর নির্ভর করে। নক্ষত্র আকারে বড় হলে গ্রহের প্রাণ-বান্ধব এলাকা কিছুটা দূরে অবস্থান করে। নক্ষত্র ছোট হলে নক্ষত্রের কাছে অবস্থান করে। নতুন আবিষ্কৃত K2–72 নক্ষত্রটি যেহেতু বামন নক্ষত্র বা সূর্যের চেয়ে ছোট নক্ষত্র তাই তার প্রাণ-বান্ধব অঞ্চল কিছুটা কাছে অবস্থান করে। কোনো গ্রহ তার নক্ষত্রের কাছে থাকলে তার আবর্তনকাল কম হয়। সেই কারণে K2–72 এর গ্রহগুলোর আবর্তনকালও কম। যেমন K2-72c এর আবর্তনকাল পৃথিবীর দিনের হিসেবে ১৫ দিন।

এটির পরিবেশের তাপমাত্রা পৃথিবীর সাধারণ তাপমাত্রার চেয়ে ১০% বেশি গরম। আরেকটি গ্রহ K2-72e এর আবর্তনকাল পৃথিবীর দিনের হিসেবে ২৪ দিন এবং এটি পৃথিবীর তাপমাত্রার চেয়ে ৬% বেশি ঠাণ্ডা। বাকি দুটি গ্রহের আবর্তনকালও কম। তারা ২৪ দিনেরও কম সময়ে তাদের সূর্যকে আবর্তন করে। ঐ গ্রহ দুটির পরিবেশ বলতে গেলে আমাদের সৌরজগতের শুক্র বা বুধ গ্রহের পরিবেশের মতো।

-সিরাজাম মুনির শ্রাবণ

Exit mobile version