ডার্ক ম্যাটারের অস্তিত্ব নিশ্চিত করতে পাথুরে অঞ্চলের প্রায় এক মাইল নিচে বসানো হয় পৃথিবীর সবচেয়ে সংবেদনশীল ও নিখুঁত ডিটেকটর লার্জ আন্ডারগ্রাউন্ড জেনন বা LUX। এই ডিটেকটর অতি দুর্বল বিক্রিয়াও শনাক্ত করতে পারে। স্থাপন করার সময় বিজ্ঞানীরা ধারণা করেছিলেন ডার্ক ম্যাটার যদি খুব দুর্লভভাবেও কোনো কিছুর সাথে বিক্রিয়ায় জড়িত হয় তাহলে তা এই ডিটেকটরে ধরা পড়বে। কিন্তু দীর্ঘ ২০ মাস ধরে অনুসন্ধান ও পরীক্ষা নিরীক্ষার পরে ফলাফল প্রদান করেছে শূন্য।
LUX ডিটেকটর অনেক আগেই স্ট্যানফোর্ড আন্ডারগ্রাউন্ড ল্যাবরেটরিতে মাটির ৪ হাজার ৮৫০ ফুট (১ মাইল) গভীরে স্থাপন করা হয়। প্রাথমিক অবস্থায় কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা মিশন করা হলে তাতে ফলাফল নেতিবাচক আসে। এতে নিরুৎসাহিত না হয়ে বিজ্ঞানীরা ডিটেকটেরের সংবেদনশীলতা বাড়াতে থাকেন, আরো সূক্ষ্ম করতে থাকেন। আপগ্রেডেড ডিটেকটরে সর্বশেষ ২০ মাসের একটি মিশন পরিচালনা করে যখন কিছু পেলেন না তখন ডার্ক ম্যাটারকে অতি রহস্যময় বলেই মেনে নিলেন গবেষণারত বিজ্ঞানীরা।
তাদের পরীক্ষার ফলাফল গত ২১ জুলাই যুক্তরাজ্যে Identification of Dark Matter Conference (IDM2016) তে উপস্থাপন করেন। মহাবিশ্বের ভরের পাঁচ ভাগের চার ভাগই ডার্ক ম্যাটার দিয়ে গঠিত, কিন্তু এখনো সরাসরি তাদের দেখা পাওয়া যায়নি। একটি বিবৃতিতে একজন গবেষক বলেন “২০১৩ সালে চালু হবার পর থেকে লাক্স সবচেয়ে নিখুঁততম সূক্ষ্ম অনুসন্ধান করেছে। পরে ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল ব্যাপী মিশনের জন্য এতে নিযুক্ত বিজ্ঞানীরা একে প্রাথমিক অবস্থা থেকে চার গুণ সংবেদনশীল করে তোলেন। কিন্তু এতেও ডার্ক ম্যাটার শনাক্তের কোনো ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যায়নি।”
বহিরাগত কোনো ধরনের কণা বা বিকিরণ যেন এই পরীক্ষায় বিঘ্ন ঘটাতে না পারে তার জন্য মাটির নিচে অধিকতর সুরক্ষিত অঞ্চলে একে স্থাপন করা হয়। পরীক্ষাগারকে চারিদিকে পানির ট্যাঙ্ক (স্তম্ভ) দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়। এতে করে মহাজাগতিক কণাগুলো আটকে যায়।
দক্ষিণ ডাকোটার স্বর্ণ খনির গভীরে এর অবস্থান। খনিটি এখন পরিত্যক্ত এবং এটি Sanford Underground Research Facility নামে পরিচিত। এই স্থান বিজ্ঞান জগতে ঐতিহাসিকভাবে আরো একটি কারণে বিখ্যাত। সূর্যের নিউট্রিনো সমস্যা সমাধানের জন্য Ray Davis এর পরীক্ষা নিরীক্ষাও এখানেই হয়েছিল। সূর্যের নিউট্রিনো সমস্যা সমাধানের জন্য রে ডেভিস নোবেল পুরষ্কার অর্জন করেছিলেন।
এই প্রজেক্টে এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ মিলিয়ন ডলারের মতো খরচ হয়েছে। সরকারী ফান্ডে পরিচালিত এই প্রজেক্টটি সম্পর্কে পদার্থবিদ Daniel McKinsey বলেন “আমরা কিছুটা গর্বিত কারণ যন্ত্রটি ঠিকঠাকমতো কাজ করছে। পাশাপাশি কিছুটা হতাশও, কারণ ফলাফল হিসেবে আমরা কিছুই পাইনি।”
ধরা দিক বা না দিক ডার্ক ম্যাটার ঠিকই মহাবিশ্বের পদার্থের পাঁচ চতুর্থাংশ দখল করে আছে। এখানে ছেড়ে না দিয়ে আরো নিখুঁতভাবে পরীক্ষার পরিকল্পনা করছেন বিজ্ঞানীরা। আরো ৫০ মিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত বাজেটে এর থেকে ৭০ গুণ সংবেদনশীল একটি ডিটেকটর নির্মাণ করা হবে। ঐ ডিটেকটেরের কার্যক্রম শুরু হবে ২০২০ সালে।
-সিরাজাম মুনির শ্রাবন