বিজ্ঞান পত্রিকা

নিউট্রিনোর নতুন পরীক্ষা সমাধান দিতে পারে মহাবিশ্বের একটি মৌলিক সমস্যার

মহাবিশ্ব এন্টি-ম্যাটার দিয়ে তৈরি না হয়ে কেন ম্যাটার বা পদার্থ দিয়ে তৈরি? কিংবা মহাবিশ্বে কোনোকিছু না থাকার বদলে কেন কোনোকিছুর অস্তিত্ব আছে? এই প্রশ্ন শুনতে হয়তো খুবই সামান্য বলে মনে হয়, কিন্তু এই সামান্য প্রশ্নই পদার্থবিদদের ধাঁধায় ফেলে রেখেছেন বেশ কয়েক দশক ধরে। সামান্য এই প্রশ্নের উত্তর জানা হয়ে গেলে মহাবিশ্বের উৎপত্তি ও মহাবিশ্বে বিদ্যমান নানা খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে জানা যাবে। এই কারণে পদার্থবিদরা দিনের পর দিন এর পেছনে খেটে চলছেন। এর উত্তর অধরা হলেও আশার কথা হচ্ছে পদার্থবিজ্ঞান ধীরে ধীরে এর উত্তরের তথা এই প্রশ্নের সমাধানের কাছাকাছি যাচ্ছেন।

কণা পদার্থবিজ্ঞানের স্ট্যান্ডার্ড মডেল থেকে উৎসারিত মৌলিক পদার্থবিজ্ঞানের তত্ত্ব অনুসারে মহাবিশ্বের উৎপত্তির সময় যে পরিমাণ পদার্থ তৈরি হবে ঠিক সেই পরিমাণ প্রতি-পদার্থও তৈরি হবে। তত্ত্ব অনুসারে উৎপত্তি লাভ করা পদার্থ ও প্রতি-পদার্থকে তুলনা করলে ঠিক ঠিক দর্পণীয় প্রতিবিম্ব (perfectly mirrored) বলে মনে হবে। তাদের মাঝে কম-বেশ হবার কথা নয়। পদার্থ ও প্রতি পদার্থ মিলে উভয়ে উভয়কে ধ্বংস করে দেবার কথা। কিন্তু কোনো এক কারণে প্রতি-পদার্থের তুলনায় পদার্থ বেশি পরিমাণে তৈরি হয়েছে। যার কারণে আজকের বৈচিত্র্যময় গ্রহ নক্ষত্র ধারণকারী মহাবিশ্বের অস্তিত্ব আছে।

কিংবা এমনও হতে পারে পদার্থ ও প্রতি-পদার্থ সমান পরিমাণে উৎপত্তি লাভ করেছিল কিন্তু কোনো এক ম্যাকানিজমের প্রভাবে পরস্পর ধ্বংস করে দেবার দৌড়ে পদার্থ টিকে গিয়েছিল, যার ফলে মহাবিশ্ব ধীরে ধীরে আজকের বিশাল অবস্থানে এসে পৌঁছেছে।

কিন্তু প্রভাব খাটানো ম্যাকানিজমটা ঠিক কী তা ঠিক করে নির্ণয় করা যাচ্ছে না। তবে বিজ্ঞানীরা এর পেছনে কাজ করে যাচ্ছেন। জাপানের বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যে এর কিছুটা আভাষও হয়তো পেয়ে গিয়েছেন। জাপানের টোকাই টু কামিওকা (T2K) নিউট্রিনো এক্সপেরিমেন্ট এর আওতায় করা পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রাথমিক ফলাফল অনুসারে, নিউট্রিনোর স্পন্দন এন্টি নিউট্রিনোর চেয়ে বেশি পরিমাণে ঘটে। নিউট্রিনো স্পন্দনের এই সামান্য পার্থক্যটাই হয়তো বিগ ব্যাং এর পর মহাবিশ্ব সৃষ্টির শুরুর দিকে পদার্থের হয়ে অস্তিত্বের জন্য লড়েছিল। এটিই হয়তো প্রতি-পদার্থের উপর পদার্থের প্রাধান্য বিস্তারে সাহায্য করেছিল।

নিউট্রিনো হচ্ছে এক ধরনের মৌলিক কণা যার কোনো চার্জ নেই। কণা হলেও কোনো কিছুর সাথে বিক্রিয়া করে না, ফলে এদের ধরা ছোঁয়া যায় না। যেকোনো ধরনের বাধা-প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে যেতে পারে অনায়াসে। আমার আপনার সকলের দেহের মাঝ দিয়ে প্রতিনিয়তই এরা পার হয়ে যাচ্ছে। যেকোনো ধরনের নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ার সময় নিউট্রিনো অবমুক্ত হয়। সূর্যে প্রতিনিয়ত নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া হচ্ছে এবং অসংখ্য পরিমাণ নিউট্রিনো অবমুক্ত করছে। একটি সুপারনোভা বিস্ফোরণে কল্পনাতীত পরিমাণ নিউট্রিনো অবমুক্ত হয়।

এই নিউট্রিনোগুলো অদ্ভুত ধরনের আচরণ করে। অন্যান্য কণার সাথে তুলনা করলে এর আচরণ বেখাপ্পা বলে মনে হবে। নিউট্রিনোকে বিশ্লেষণ করে মহাবিশ্বের অনেক অজানা প্রশ্নের সমাধান পাওয়া গিয়েছিল। অদ্ভুত আচরণের কারণে একে মহাবিশ্বের ভূত (Ghost of the Universe) বলে ডাকা হয়। পদার্থ ও প্রতি পদার্থের সমস্যাটিও হয়তো এই নিউট্রিনোর আচরণের মাধ্যমেই করা সম্ভব হবে। এমনটা হলে নিউট্রিনোর অর্জনের মুকুটে আরেকটি পালক যুক্ত হবে।

-সিরাজাম মুনির শ্রাবণ

Exit mobile version