বিজ্ঞান পত্রিকা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রকাশ করলেন বারাক ওবামা

প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় এর আগে কেউ বৈজ্ঞানিক জার্নালে কোনো গবেষণা প্রকাশ করেননি। সেই হিসেবে আমেরিকার বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাই প্রথম। The Journal of the American Medical Association এ প্রকাশ হবার আগে তার গবেষণাটি দুই মাস ধরে যাচাই বাছাই করা হয়। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যখাতের নানা ধরনের ত্রুটি বিচ্যুতি এবং এসব ত্রুটির সংশোধন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে। প্রবন্ধের শিরোনাম ছিল ‘United States Health Care Reform: Progress to Date and Next Steps’।

প্রেসিডেন্ট হওয়া মানে একটা দেশের সমস্ত কিছুর খোঁজখবর রাখা ঝামেলা যন্ত্রণা ত্রুটি বিচ্যুতি কাটিয়ে কীভাবে একটা রাষ্ট্র ঝঞ্ঝাটহীন রাখা যায় এবং উন্নয়নের বিচারে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়া যায় সেই চিন্তায় মত্ত থাকা। আস্ত একটি দেশের হাজার হাজার সমস্যা নিয়ে চিন্তা করেই তো বেলা শেষ হয়ে যায়। ৭২ ঘণ্টায় দিন গেলেও তো সমস্যা শেষ হবার নয়। তার উপর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়া মানে প্রায় সারা বিশ্বেরই প্রেসিডেন্ট হওয়া। সারা বিশ্বের সমস্যা নিয়ে আমেরিকাকে ভাবতে হয় বা নাক গলাতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে বৈজ্ঞানিক জার্নালের মতো জটিল ও টেকনিক্যাল বিষয় নিয়ে কাজ করা তো বলা যায় এক অর্থে অসাধ্য। বারাক ওবামা এমন অসাধ্যটাই সাধন করে দেখালেন।

যুক্তরাষ্ট্রের আগের প্রেসিডেন্টদের মাঝে খুব কমই ছিল যারা এমন বৈজ্ঞানিক কাজে জড়িত ছিল। শুধু প্রেসিডেন্ট কেন পার্লামেন্ট হোয়াইট হাউসের সদস্যদের মাঝেও বিজ্ঞানের প্রতি তেমন একটা সম্মান করতে দেখা যায় না। তাদের মাঝে ব্যতিক্রমী হিসেবে প্রমাণ করলেন বারাক ওবামা। বিজ্ঞানের প্রতি সবসময়ই তার সম্মান বিদ্যমান। তিনি যদিও খুব বড় মাপের কোনো গবেষক নন, তবুও তিনি বড় গবেষকদের সম্মানের চোখে দেখেন এবং তাদের যথেষ্ট গুরুত্ব দেন। তিনি হয়তো খুব ভালো মানের কোনো গবেষণা করেননি কিন্তু তারপরেও তার আগের সকল প্রেসিডেন্টদের তুলনায় তার প্রকাশিত গবেষণার সংখ্যা বেশি।

২০১০ সালে মেডেল অব সায়েন্স বিজয়ী বিজ্ঞানীদের সাথে বারাক ওবামা। বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীদের প্রতি সবসময়ই তার শ্রদ্ধা বিদ্যমান।

যুক্তরাষ্ট্রে স্বাস্থ্যখাত খুব জটিলতায় পরিপূর্ণ। পুঁজিবাদের চাপে জটিলতার মাত্রা এতটাই বেশি যে একজন প্রেসিডেন্টও যদি চায় স্বাস্থ্য খাতকে পুঁজিতন্ত্র থেকে আলাদা করবে তাও সম্ভব হয় না। ওবামা অনেক দিন ধরে এই খাত তথা হেলথ ইনস্যুরেন্স নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। কীভাবে সাশ্রয়ী মূল্যে সকল নাগরিকের জন্য সহজলভ্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যায় তা নিয়েই মূলত গবেষণার বিষয়বস্তু। ওবামা এখন গণ-স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা গবেষকদের কাতারে চলে গিয়েছেন। তার পেপারটিতে তিনিই ছিলেন সোল অথর (Sole author)। গবেষণাপত্রটিতে তিনি পূর্ববর্তী গবেষকদের অনেক রেফারেন্স টেনেছেন। বোঝা যায় প্রফেশনাল গবেষকদের মতোই তিনি কাজ করেছেন।

তিনি যুক্তরাষ্ট্রে The Patient Protection and Affordable Care Act নামে একটি আইন পাশ করিয়েছিলেন যা ওবামাকেয়ার (Obamacare) নামে পরিচিত। এই আইনের ফলে সাধারণ জনগণ কীরূপ স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে বা পেতে পারে তার কারণ ও বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ ছিল তার প্রবন্ধে। তথ্যগত বিশ্লেষণের পাশাপাশি অনেকগুলো গ্রাফও ছিল তার গবেষণা প্রবন্ধে।

গবেষণায় প্রকাশিত একটি গ্রাফ।

প্রেসিডেন্টদের মাঝে এরকম বিজ্ঞান চেতনা থাকলে বা বিজ্ঞানের প্রতি সম্মান থাকলে বলা যায় তা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। এতে করে দেশের অন্যান্য ইস্যুর পাশাপাশি বিজ্ঞানের ইস্যুও গুরুত্ব পাবে। বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে বাজেট সহ অন্যান্য দিকগুলো আলাদা মূল্য পাবে। এরকম একটা দৃষ্টিভঙ্গিই তো আশা করে বিজ্ঞানমনস্ক জনগণ।

 

Exit mobile version