বিজ্ঞান পত্রিকা

মেঘপুঞ্জ মেরুর দিকে সরে যাচ্ছে ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার প্রভাবে

কয়েক দশক ধরে ক্রমান্বয়ে বেড়ে যাওয়া তাপমাত্রার কারণে পৃথিবীর মেঘগুচ্ছগুলো মেরুমুখী হচ্ছে। পৃথিবী একদিকে ধীরে ধীরে উষ্ণ হচ্ছে আর অন্য দিকে এর বাস্তুসংস্থানকে বিঘ্নিত করে মেঘগুচ্ছ দুই মেরুর দিকে চলে যাচ্ছে।

পৃথিবীর প্রায় ৭০% এলাকা সবসময় মেঘ দিয়ে ঢাকা থাকে। এই ঢাকা থাকার একটা নির্দিষ্ট প্যাটার্ন আছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে মেঘের অবস্থানের প্যাটার্ন বদলে যাচ্ছে। শুধু বদলে যাচ্ছে বললে কম হবে, বলতে হবে দ্রুত বদলে যাচ্ছে। মেঘেরা হঠাৎ করে বাড়তে থাকা তাপমাত্রার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারছে না। গত ১১/০৭/২০১৬ তারিখে নেচার সাময়িকীতে প্রকাশিত একটি গবেষণা এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে।

পরিবেশের তাপমাত্রা পরিবর্তনের সাথে মেঘের আচরণ পরিবর্তনের সম্পর্কটা একটু জটিল- গবেষণারত বিজ্ঞানীরা এই কথাটা গুরুত্ব দিয়ে বলছেন। তারা জানিয়েছেন মেঘগুলো একটু বেখাপ্পাভাবে বেশি গতিতেই নিজেদের এলাকা বা বৃহৎ স্কেলে নিজেদের মানচিত্র পরিবর্তন করছে, যা আমাদের জন্য বেশ উদ্বেগের জন্ম দেয়।

নেচার জার্নালে প্রকাশিত তাদের এই গবেষণাটি ছিল তাপমাত্রার সাথে মেঘের আচরণের সম্পর্ক অনুধাবন করতে অন্যতম একটি মাইলফলক। এই গবেষণায় তারা অনেকগুলো স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত ছবি ও তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করেছেন। গত কয়েক দশকের অনেক তথ্য আমলে নিয়েছেন এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে। ১৯৮০ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত গ্রহণ করেছেন।

মেঘের বর্তমান মানচিত্র। ছবিঃ নাসা

পৃথিবীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হচ্ছে মেঘ। পৃথিবীতে প্রাণবৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখতে হলে দরকার পানিচক্র। আর পানিচক্র সচল রাখতে দরকার মেঘ। মেঘের আচরণ যদি পৃথিবীর পরিবেশের সাপেক্ষে এদিক সেদিক হয় তাহলে পানিচক্রে বিঘ্ন দেখা দিবে। পানিচক্রে সমস্যা তৈরি হলে তা পুরো জীবজগতের অস্তিত্বকেই হুমকির মুখে ফেলে দিতে পারে।

মেঘের অবস্থান পরিবর্তনের কারণে ভূমণ্ডলে তাপের সঞ্চালনেও সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন দিনের বেলায় আকাশে যদি হালকা মেঘ থাকে তাহলে তা সূর্যের তাপমাত্রা শোষণ করতে পারে। ফলে ভূমণ্ডল গরম হওয়া থেকে কিছুটা রক্ষ পায়। যদি ভূমণ্ডলের উপর মেঘ না থাকে তাহলে তাপের বাধাহীন সঞ্চালন হবে যা মরুকরণে ভূমিকা রাখতে পারে।

বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ইস্যুতে অনেকেই এমন কিছু একটা ঘটবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। তখন এটি নিয়ে অনেক তর্ক বিতর্ক ছিল। কেউ কেউ বলছিল এমন হতে পারে আবার কেউ কেউ বলেছিল মেঘেরা এমন কেন হবে? ইতিহাসের রেকর্ড এখন এটিকে একদম বাস্তব বলে সাক্ষ্য দিয়ে দিল।

ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবেশবিদ জন নরিস এই প্রসঙ্গে এমনভাবে মতামত দিয়েছেন যা যা সত্যিই ভাবনার জন্ম দেয়। তিনি ভেবেছিলেন বৈশ্বিক উষ্ণতার ফলে পৃথিবীতে সংকটের দেখা দিবে এবং তার মতো পরিবেশ সচেতন মানুষদের উচিৎ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে দিয়ে যাওয়া। তিনি কখনো ভাবেননি বৈশ্বিক উষ্ণতার বাজে ফলাফল তার জীবদ্দশাতেই তাকে দেখে যেতে হবে।

আমরাও হয়তো ভাবছি, কোনোরকমে নিজেরা বেঁচে যেতে পারলেই হয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জাহান্নামে যাক। এরকম ভেবে আদতে আমরা নিজেদেরই ক্ষতি করছি।

– সিরাজাম মুনির শ্রাবণ

 

Exit mobile version