U বোয়িং ৭৭৭ বিশাল বিমানটি দিল্লি বিমান বন্দর থেকে প্রায় ১৮ ঘন্টা উড়ে আমেরিকার শিকাগো বিমানবন্দরে নামতে যাচ্ছে। বাইরে চলছে বিরাট ঝড় বৃষ্টি। দৃশ্যমানতা ভিষণ কম। পাইলট অঙ্কিত বিশ্বাসের কপালে চিন্তার ভাঁজ আরো চওড়া হচ্ছে । ঝড়বৃষ্টির জন্য নয়। আসল কারণ কো-পাইলট যাদবের হুশিয়ারী। রেডিও অল্টিমিটার (প্রতিফলিত তরঙ্গের সাহায্যে বিমানের উচ্চতা মাপার যন্ত্র) ঠিক মতো কাজ করছে না। অঙ্কিত জানে এই প্রবল ঝড়বৃষ্টির রাতে চাপ-অল্টিমিটার, পিটোট যন্ত্র, কোনটাই সেভাবে কাজে আসবে না। এই পরিস্থিতিতে ল্যান্ডিং বা অটো ল্যান্ডিংএ একমাত্র রেডিও অল্টিমিটারই অন্ধের যষ্টি। ২০ বছরের বেশি অভিজ্ঞ অঙ্কিতের আত্মবিশ্বাস বিরাট। নিমিষে সিদ্ধান্ত নিল অন্য বিমানবন্দরে উড়ে যাবে না। ভরসা মগজাস্ত্র। প্রায় নিখুঁতভাবে অস্পষ্ট ফগ লাইটগুলির বুক চিরে নিরাপদে বিশাল পাখিটাকে নামিয়ে আনলো। যাত্রীরা কেউ জানতেও পারলো না কত বড় দূর্ঘটনার মুখ থেকে তাঁরা ফিরে এসেছে।
কিন্তু কেন রেডিও অল্টিমিটার ঠিকঠাক কাজ করছিলো না?
কালপ্রিট হলো কিন্তু ৫জি। আসলে রেডিও অল্টিমিটার এবং টেলি ৫জি প্রায় একই সীমার C-band তরঙ্গ ব্যবহার করে। আমেরিকায় চলছে ৫জি টেস্টিং। AT&T এবং ভেরিজোন ৮০০০কোটি টাকায় কিনেছে C-band এর ৩.৭ থেকে ৩.৯৮ গিগাহার্জ কম্পাংকের সম্প্রচার। আর রেডিও অল্টিমিটার কাজ করে ৪.২ থেকে ৪.৪ গিগাহার্জ পটিবেধে। তফাত সামান্য। ভূমি থেকে প্রতিফলিত যে ক্ষীণ তরঙ্গ রেডিও অল্টিমিটার ধরে সেখানে ৫জি টেলি তরঙ্গের উপরিপাতনে সনাক্ত তরঙ্গ ঝাপসা হয়ে যায়। ঠিক মতো কাজ করেনা। ফলে বিমানযাত্রীদের নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে।
এ সমস্যা কিন্তু শুধুৃমাত্র আমেরিকার। ইউরোপ এশিয়ায় প্রায় ৪০টি দেশ যেখানে ৫জি চালু হয়েছে সেখানে নেই কেন? কারণ এসব দেশে নিলাম হয়েছে ৩.৪ GHz থেকে ৩.৭ GHz গিগাহার্জের C-band। কিন্তু আমেরিকায় ৩.৭ GHz থেকে ৩.৯৮ GHz গিগাহার্জের পটিবেধ, যার সঙ্গে ৪.২ GHz গিগাহার্জের পার্থক্য কম। তার উপর আমেরিকার কোম্পানিগুলি সম্প্রচারের প্রাবল্য অনান্য দেশের তুলনায় চারগুণ বেশি। বিমানবন্দরে বেশ কাছেই ৫জি টাওয়ারগুলি বসানো হয়েছে। তাদের বিমান পরিবহন সংস্থা FAA অবশ্য একটি বাফার জোনের প্রস্তাব করেছে। আশা করা যায় দ্রুতই সমস্যার সমাধান হবে। অঙ্কিতের কপালের চিন্তার ভাঁজ আর থাকবে না।
সুবীর বিশ্বাস