আইসল্যান্ডে একটি সামাজিক গবেষণায় কর্মক্ষেত্রে সপ্তাহে চার কর্মদিবসের আনুসঙ্গিক দিকগুলোর ভালো-মন্দ প্রভাব অনুসন্ধান করা হয়েছে। পর্যবেক্ষণের রিপোর্ট ছিলো রীতিমতো চাঞ্চল্যকর। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, এর ফলে শুধুই কর্মীদের শারীরিক ও মানসিক উন্নতি হয়নি বরং অন্যান্য সময়ের তুলনায় কর্মক্ষেত্রে তারা আরোও সক্রিয় ও দায়বদ্ধ হয়েছে।
ব্রিটেন ভিত্তিক সংস্থা ‘থিংকট্যাংক অটোনমি’ এবং ‘আইসল্যান্ডের সাস্টেইনিবিলিটি ও ডেমোক্রেসি এসোসিয়েশন’ পর্যবেক্ষণটি চালায়। গত সপ্তাহের রবিবার গবেষণার বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংস্থাটি।
ফলস্বরূপ, বিভিন্ন নির্দেশক অনুযায়ী কর্মীদের শারীরিক ও মানসিক সাস্থ্যে উন্নতির পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে ও পারিবারিক জীবনে ভারসাম্য ফিরে এসেছে। পূর্বে যেখানে কর্মক্ষেত্রে তাদেরকে মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তার মধ্যে দিয়ে কাজ করতে হতো সেখানে এখন তারা কর্মক্ষেত্রে মনোবল নিয়ে সানন্দে কাজ করছে। এমনকি আগের তুলনায় কর্মক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতাও বেড়েছে।
দুই ধাপের এই গবেষণায়, ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে আইসলেন্ডের মোট কর্মীদের ১ শতাংশেরও বেশি মানুষ ( যা সংখ্যায় প্রায় ২৫০০ ) সপ্তাহে ৪০ কর্মঘন্টা থেকে কমিয়ে ৩০-৩৫ ঘন্টা কাজ করেন। ৯টা থেকে ৫টা’র গতানুগতিক শিফটে কাজ করা কর্মীদের নিয়ে এই গবেষণাটি করা হয়। কর্মীরা খেলার মাঠ, ব্যায়ামাগার, হাসপাতাল,ডে কেয়ার সেন্টার,বিভিন্ন শপ আছে এমন পরিবেশের একটি অফিসে কাজ করতে দেয়া হয় । গবেষণা চলাকালীন পুরো সময় জুড়ে পর্যবেক্ষকগণ কর্মীদের সাক্ষাৎকারে তাদের উন্নতি ও কর্মক্ষেত্রের পরিবর্তনের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেন।

কর্মীদের সাক্ষাৎকার অনুযায়ী, তারা নিজের শখের কাজ,ব্যায়াম আর সামাজিক বিভিন্ন কাজে যুক্ত হওয়ার মতো পর্যাপ্ত সময় পাচ্ছেন। বিশেষত পরিবারের সাথে সময় কাটানোর আর পারিবারিক কাজে অন্যদের সাহায্য করতে পারছেন। এই পরিবর্তন বিশেষত ছোট পরিবারগুলির জন্যে বেশ উপকারী।
গবেষণায় অংশ নেয়া একজন কর্মীর সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন,”আমি আগের চেয়ে কম কিন্তু বেশি উৎপাদনশীল কাজ করেছি… এই সুযোগটি আমার জন্যে স্বর্গীয় উপহারস্বরূপ। আর আমি এটিকে খুব পছন্দ করি”
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এই সময়কালে বেশিরভাগ কর্মক্ষেত্রের গড় উৎপাদনশীলতা শুধু বজায় থাকেনি বরং আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। কর্মীদের সক্রিয়তার পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে তাদের মনোবল বৃদ্ধির দিকটাও গবেষকরা লক্ষ্য করেছেন।
কোম্পানির পরিচালকের মতে,”এখানে কর্মীদের মনোবল সবসময়ই ভালো ছিল,কিন্তু বর্তমানে তা দূর্দান্ত।”
যদিও বেশিরভাগ তথ্যই স্ব-প্রতিবেদনে প্রকাশিত এবং সংখ্যাসূচক তথ্য সম্বলিত তাই ঠিক কি কারণে এই আমূল পরিবর্তন এসেছে তা নিশ্চিত করে এখনও প্রকাশ করেনি সংস্থাটি।যাইহোক, ইতিমধ্যেই আইসল্যান্ডের ৮৬% কর্মস্থল এই সাফল্যকে অনুসরণ করে তাদের সপ্তাহের কর্মদিবস ও কাজের ধরনে পরিবর্তন এনেছে।
“আইসল্যান্ডের এই গবেষণা থেকে বুঝা যায় যে এই আধুনিক সময়ে শুধু কম সময় কাজ করাই সম্ভব নয় বরং প্রগতিশীল পরিবর্তনও আনা সম্ভব।”-ALDA’র গবেষক গাডমান্ডার ডি.হ্যারাল্ডসন তার বক্তব্যে বলেন।
সামাজিক প্রগতিশীল উদ্যোগে আইসল্যান্ড বরাবরই অগ্রগণ্য তবে এক্ষেত্রে সেটি একা নয়। অন্যান্য দেশও তাদের কর্মস্থলে এই ধরনের কার্যক্রম শুরু করেছে এবং তন্মধ্যে স্পেন ও নিউজিল্যান্ড অন্যতম। এমন কি কাজের প্রতি চরম মনোভাব পোষণ করা জাপানও তাদের কর্মীদের গতানুগতিক রীতির বাইরে সপ্তাহে চার কর্মদিবসের অনুমতি দিয়েছে। [iflscience.com অবলম্বনে]
-হৃদয় বিশ্বাস