অলস স্যালামান্ডার, এক জায়গায় বসে একটানা সাত বছর

0
221

জার্নাল অফ জুয়োলজিতে প্রকাশিত এক নতুন গবেষণা অনুযায়ী, বসনিয়া ও হার্জেগভিনার গুহায় বসবাসকারী  একটি স্যালামান্ডার ঠিক একই স্থানে ২,৫৬৯ দিন স্থিরভাবে অবস্থান করেছে। মাঝে মাঝে এ জাতীয় প্রাণীগুলো  পানির নিচে  ছোট ছোট গর্তে খুব সুন্দর পাথরের মতো নিশ্চল বসে থাকে।

এই গবেষকরা ওলম নামের একদল ইউরোপীয় স্যালামান্ডার পর্যবেক্ষণ করেছেন, যাদের হুটহাট চলাচলের কোন তাড়া থাকে না। এছাড়াও শতাধিক বছরের জীবনে প্রাকৃতিকভাবে কোন শিকারী না থাকায় উভচর এই প্রানীর পালানো কিংবা দৌড়ানোর কোন প্রয়োজন পড়ে না। কোন বস্তুর সাথে যুতসইভাবে লেগে থাকার জন্যে এদের যথেষ্ট পরিমান ভর রয়েছে। সর্বোপরি, এরা গড়ে কেবল প্রতি ১২.৫ বছরে একবার বংশবৃদ্ধির কাজ করে তাই এদের অন্যান্য প্রাণীর মতো নিয়মিত যৌন মিলনে অংশ নিতে দেখা যায় না।

২০১০-২০১৮ সালের মধ্যে গবেষকগণ ৩৫০ মিটার দীর্ঘ  (১,১৫০ ফুট) ভ্রুলজাক গুহার একটি অংশে বসবাসকারী ২৬ টি সিডেনটারি ওলমকে পর্যবেক্ষণ করেন। প্রতি ১০০ দিন অন্তর অন্তর এদের অবস্থান পরীক্ষা করা হত, যেখানে মাত্র একটি ওলমকে পাওয়া যায় যে ১০ বারের চেষ্টায় মাত্র ১০ মিটার (৩২ ফুট) স্থানান্তরিত হয়েছে এবং একবারে সর্বোচ্চ ২০ মিটার (৬৫ ফুট) স্থানান্তরিত হওয়ার রেকর্ড পাওয়া গেছে।

এই প্রজাতিগুলো বছরে গড়ে ৫ মিটার চলাফেরা করে থাকে, যদিও এদের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত গতির নড়াচড়া হয়েছে ২৩০ দিনে সর্বমোট ৩৮ মিটার (১৬ ফুট)।  যদিও এদের কোন চোখ নেই তবুও কিছু উপযুক্ত রাসায়নিক, চৌম্বকীয় এবং শ্রবণেন্দ্রিয় সংক্রান্ত সংবেদনশীলতার উপস্থিতির কারণে এদের চলাচলের কোন সমস্যা হয় না।

হাঙ্গেরির এটভিস লোরান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জারগলি বালিজর দাবি, স্যালামান্ডার তাদের এই অতি নীরবতার জন্য মূলত “বসে থাকা এবং অপেক্ষা করার কৌশল” গ্রহণ করে থাকে।  ওলমগুলো ক্রাস্টাসিয়ানদের শিকার করতে তাদের পিছু নেয়ার পরিবর্তে তাদের কাছাকাছি আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করার মাধ্যমে শক্তি সঞ্চয় করাকেই বেছে নেয়। অনেক সময় খাবার সংগ্রহের এই অপেক্ষা গিয়ে প্রায় বছরাধিক সময় ছুঁয়ে ফেলে!

ওলমদের চরম মাত্রায় নীরবতার মাঝেও এদের অতি স্বল্প জন্মদানের জন্য উদবিঘ্ন হওয়ার কারণ রয়েছে। মনুষ্য সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনীর ফলে আবাস্থলের পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়লেও সে অবস্থায় এরা কোন প্রতিক্রিয়া দেখাবে না, ফলে অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ে যাবে। [ifscience-অবলম্বনে ] –শফিকুল ইসলাম

মন্তব্য করুন