কানাডার আর্কটিকে এক নতুন প্রজাতির বিশালাকার এবং প্রাগৈতিহাসিক পাখির সন্ধান মিলেছে। রচেষ্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ভূতত্ত্ববিদের দল এই নতুন প্রজাতির আবিষ্কারক যা প্রায় ৯০ মিলিয়ন বছর পুরনো বলে ধারণা করা হচ্ছে। সম্প্রতি তাঁরা সাইন্টিফিক রিপোর্টস জার্নালে তাঁদের আবিষ্কারের তথ্য প্রকাশ করেছেন। আর এরই মাধ্যমে উত্তর গোলার্ধে পাওয়া প্রাচীনতম পাখিদের তালিকায় স্থান পেলো এটি।
Tingmiatornis arctica নামক পাখিটির হাড় দেখে বুঝা যাচ্ছে এটি অনেকটা বৃহৎ সীগাল ও হাড়গিলার মাঝামাঝি জাতের আর এর ডানার দৈর্ঘ্য সম্ভবত প্রায় এক মিটারের বেশী হবে।
মধ্য ও পূর্ব কানাডিয়ান আর্কটিক ভাষায় Tingmiatornis শব্দটি“Tingmiat” থেকে এসেছে যার সাধারণ অর্থ হচ্ছে ‘যা উড়ে’। এছাড়াও Tingmiatornis arctica’র ধারালো দাঁত এবং কিছু বৈশিষ্ট্য ছিলো যা এদের ডুব দিতে সাহায্য করতো।
পূর্ববর্তী অভিযানের অন্যান্য জীবাশ্ম মিলিয়ে এই পাখিটি ৯৩.৯ থেকে ৮৯.৮ মিলিয়ন বছর আগে কানাডার আর্কটিকের অন্তর্গত বাস্তুসংস্থানের একটি পরিষ্কার ছবি তৈরিতে সাহায্য করেছে। এছাড়াও পৃথিবীতে ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়া বৈশ্বয়িক উষ্ণতা সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা যে ধারণা পোষণ করছেন তার উপর ভিত্তি করে সময়ের ব্যবধানে ভবিষ্যতে জলবায়ু কিরূপ পরিবর্তিত হতে পারে সেটারও একটা চিত্র পাওয়া যাবে।

জলবায়ুর নথি কিভাব আমাদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করতে পারেঃ
জলবায়ুর ঐতিহাসিক নথি তৈরী করার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা নির্ধারণ করতে পারবেন কিভাবে জলবায়ুর পরিবর্তন দ্বারা বিভিন্ন প্রজাতি এবং বাস্তুসংস্থান প্রভাবিত হয়।
রচেষ্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের পৃথিবী এবং পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান জন টারডুনো এক বিবৃতে বলেন, “আমাদের এই জীবাশ্ম আবিষ্কারের পূর্বে এই অঞ্চলের উষ্ণতার কথাই মানুষ বলেছিলো কিন্তু এখন পর্যন্তও আপনি এখানে মৌসুমি বরফ দেতে পাবেন। তবে এর একটা কারণ হতে পারে অধিউষ্ণায়নের বিরতি যার ফলে এই পাখির খাদ্যের উৎস এবং পুরো বাস্তুসংস্থানের অংশ বরফের কারণে টিকে থাকতে ব্যার্থ হয়েছে।”

জীবাশ্ম এবং পলির তথ্য দেখে দলটি নির্ধারণ করেন Tingmiatornis arctica একটি আগ্নেয় পরিবেশে বসবাস করতো যা কচ্ছপ, চ্যাম্পসরাস এবং কুমিরের মতো সরীসৃপ দ্বারা পরিপূর্ণ ছিলো। আর বর্তমান আর্কটিকের তাপমাত্রা হিসেবে যা একদমই ভিন্ন।
‘আর্কটিকের বরফ ছাড়া পৃথিবী দেখতে কেমন হতে পারে’
রচেষ্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের পৃথিবী এবং পরিবেশের একজন পিএইচডি প্রার্থী ও এই গবেষক দলের অন্যতম সদস্য রিচার্ড বুনো বলেন, “এই জীবাশ্মটি আমাদের জানান দেয় আর্কটিকের বরফ ছাড়া এই পৃথিবী দেখতে কেমন হতে পারে।”

Tingmiatornis arctica–র জীবাশ্ম পাওয়া যায় একটি লাভাময় জায়গায়, যা একটি অগ্ল্যুতপাতের ধারা থেকে তৈরো হয়ে থাকতে পারে। যখন আগ্নেয়গিরি পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড প্রবেশ করায় তখন এটি গ্রিনহাউজ সৃষ্টির একটি কারণ হয়ে দাড়ায়। আর এই পরিবেশই এই পাখির আবাসস্থলের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে সাহায্য করে।
পরিবেশগত সূত্রই বলে দিতে পারে কেন এই পাখিগুলোকে এখানে পাওয়া যাচ্ছে।
টারডুনো বলেন, “পাখিটি এখানে ছিলো কারণ সবকিছু ঠিকঠাক ছিলো। সেখানে খাদ্য সরবরাহ ছিলো, পরিষ্কার পানির পরিবেশ ছিলো এবং পরিবেশ খুব উষ্ণ হচ্ছিলো যা বাস্তুসংস্থানের পেছনের উপাদান গুলোকে সঠিকভাবে প্রতিস্থাপন করতে থাকে ও একটি বসবাস উপযোগী জায়গা তৈরী করে।”
[সাইন্সেলার্ট-অবলম্বন]
-শফিকুল ইসলাম